Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হবিগঞ্জে আড়াই মাসের শিশু খুন, ঘাতক চাচী গ্রেফতার

আদালতে স্বীকারোক্তি

হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:০৬ পিএম

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আড়াই মাসের শিশুকে খুন করেছে আপন চাচী। পুলিশ ঘাতক চাচীকে গ্রেফতার করেছে। নিজের পুত্র সন্তান না থাকায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দেবরপুত্রকে হত্যার করেছে বলে স্বীকার করেছে ঘাতক চাচী শাহেনা বেগম (৩০)। পরে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বানিয়াচং সদরের ২নং উত্তর পশ্চিম ইউনিয়নের আমির খানী গ্রামে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফরহাদ হোসেন এর সাথে বিরোধ চলে আসছিল তার আপন ভাই ফয়েজ আহমেদ এর স্ত্রী শাহেনা বেগমের সাথে। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া বিবাদ হয়ে আসছে। ঘাতক শাহেনার ৩ কন্যাসন্তানের জননী আর দেবর ফরহাদ ৩ পুত্র সন্তানের জনক। এ নিয়ে শাহেনা জেলাসীতে ভোগছিল। এতে দেবরের আড়াই মাসের শিশু পুত্র হেসাইনকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন শাহেনা। এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকালে ফরহাদ হোসেন এর স্ত্রী তার আড়াই মাসের শিশু সন্তান হুসাইন আহমেদকে ঘরে রেখে পুকুরে কাজ করতে যান। এ সুযোগে পাষন্ড চাচী শাহেনা বেগম (৩০) তার দেবর ফরহাদ হোসেন এর ঘরে প্রবেশ করে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই শিশু হুসাইন আহমেদ এর মুখের ভিতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ ঘটনাটি পাশর্^বর্তী ঘরের অপর একটি শিশু দেখে ফেলে। শিশুটির মা ঘরে এসে বাচ্চার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বাচ্চার কাছে গিয়ে দেখতে পান সে নড়াচড়া করছে না। এসময় তার আত্মচিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে জড়ো হয়। তাৎক্ষনিক এলাকার লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে শিশু হুসাইন আহমেদকে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার শিশু হোসাইন আহমেদকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বানিয়াচং থানা পুলিশ ছুটে আসে হাসপাতালে, আরেকটি দল পুলিশ চলে যায় ঘটনাস্থল আমির খানী গ্রামে।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরান হোসাইন জানান, ঘটনার ক্লু পেয়েই আমরা আসামীকে গ্রেফতারে অভিযানে নেমে পড়ি। বানিয়াচংয়ের সবকটি প্রবেশমুখে বসানো হয় পুলিশের চেকপোষ্ট।

রাত প্রায় দেড় টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) পলাশ রঞ্জন দে নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরান হোসাইন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রজিত কুমার দাস, সেকেন্ড অফিসার এসআই সামছুল ইসলাম, ওমর ফারুক সতর্ক অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে পালিয়ে যাবার সময় বানিয়াচঙ্গের কন্ডুরপাড় এলাকা থেকে ঘাতক চাচী শাহেনা বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহেনা বেগম শিশু হোসাইন হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহত শিশু হোসাইন আহমেদ এর পিতা ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে বানিয়াচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের (মামলা নং ০৫, তারিখ ৮/১২/২১) করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে এসআই ওমর ফারুককে। শিশু হত্যার ঘটনাটি এলাকায় চাউর হলে শত শত মানুষ নিহত শিশু হোসাইন আহমেদ কে দেখতে তার বাড়ীতে ভীড় জমান। এসময় শিশুটির নিথর দেহটি দেখে কেউই চোখের পানি আটকিয়ে রাখতে পারেন নি। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘাতক চাচী শাহেনা বেগম এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন এলাকাবাসী। এদিকে গতকাল বুধবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ওমর ফারুক ঘাতক চাচী শাহেনা বেগমকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সুলতান উদ্দিন প্রধান’র আদালতে হাজির করলে শাহেনা বেগম শিশু হোসাইন আহমেদ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী প্রদান করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হবিগঞ্জ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ