Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সচল ইলেক্ট্রা-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট-এ অভাবে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বিপর্যস্ত

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:৩৭ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান- শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও আলট্রাসোনো মেশিনের মত অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ‘ইলেক্টো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট’ বছরের পর বছর ধরে বিকল। ফলে সাধারন দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় বিপন্ন। হাসপাতালের মেডিকেল ইকুপমেন্ট বিকল থাকার সুবাদে বাইরের ডায়গনস্টিক ল্যাবগুলোতে গিয়ে সাধারন গরীব রোগীরা সর্বশান্ত হচ্ছেন। অথচ মাত্র দুমাস আগে বরিশাল সফরকালে স্বাস্থ্য সেবা সচিব এ হাসপাতালের অন্তত ৮০ভাগ সমস্য একমাসের মধ্যে সমাধানের ঘোষনা দিয়েছিলেন।

পুরনো অবকাঠামোতেই ৫শ থেকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে ১৬শ থেকে ১৮শ রোগী। কিন্তু ৫শ শয্যার জনবল দিয়ে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা এ হাসপাতালে পুরনো মঞ্জুরিকৃত জনবলেরই ৬০ভাগ পদ শূণ্য থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা মারাত্মক বিপর্যস্ত। এরই মধ্যে চিকিৎসা সহায়ক যন্ত্রপাতির বেশীরভাগই বিকল থাকায় সাধারন দরিদ্র রোগীদের জন্য সরকারী এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবার পথ ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে উঠছে।
রেডিওরজি এন্ড ইমেজিং বিভগে মস্তিস্কে, হাড়ের বা শরীরের জটিল রোগ নির্ণয়ের ২০০৮ সালে কেনা একমাত্র এমআরআই মেশিনটি বিকল গত কয়েক বছর। দুটি সিটি স্ক্যান মেশিনের একটি ২০১৫ সালে যান্ত্রিক ত্রæটি দেখিয়ে বন্ধ ঘোষনা করা হয়। অন্যটি ২০১৮ সালে হাসপাতালের উন্নয়ন কাজের সময় পানি ঢুকে বিকল হয়ে গেছে। কয়েকবার মেরামতের পরে ২০১৯ সালে সম্পূর্ণ বিকল ঘোষনা করা হয় এমআরআই মেশিনটিও। এরপর আর এসব অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা সহায়ক যন্ত্রপাতি মেরামত বা নতুন করে সংগ্রহের কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তবে হাসপাতাল পরিচালক ডাঃ সাইফুর ইসলাম বুধবার জানান, ‘আমরা প্রতিনিয়ত চাহিদা দিচ্ছি, কথাও বলছি অধিদপ্তরে। একটি সিটি স্ক্যানস মেশিন খুব শিঘ্রই আসছে বলে জানা গেছে’। এমআরআই ও এক্স-রে মেশিনের চাহিদা প্রতিনিয়ত দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ইতোমধ্যে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর থেকে ইলেক্ট্রো মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও প্রকৌশলীগন কয়েকবার এসব বিকল মেশিন পরিদর্শন করে অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বিশাল এ হাসপাতালের বিপুল সংখ্যক রোগীদের জন্য এখন ১৫টি এক্স-রে মেশিনের ১৩টি বিকল। যার মধ্যে পোর্টেবল মেশিনও রয়েছে। সচল দুটি এক্স-রে মেশিনের সাহায্যে হাসপাতালের ইনডোর ও আউট ডোরের চাহিদার ১০ভাগ রোগীরও এক্স-রে করা সম্বব নয়। ফলে সিংহভাগ রোগীকেই হাসপাতালের বাইরেই এক্স-রে করাতে হচ্ছে ।

এমনকি রেডিওলজি বিভাগে জনবল সংকটের কারনেও এ হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগে সাধারন রোগীদের রোগ নির্র্ণয় সহ সঠিক চিকিৎসা সেবা বিঘিœত হচ্ছে। হাসপাতালটির রেডিওলজি, জেনারেল রেডিওলজি ও নিউরো রেডিওলজি বিভাগে একমাত্র অধ্যাপকের পদটি শূণ্য। দুজন সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে একজন দায়িত্বে আছেন। তিনজন সহকারীর অধ্যপকের বিপরিতে কর্মরত একজন।

ফলে বিশাল এ হাসপাতালে দুটি মেশিনে যে এক্স-রে হচ্ছে তার ফলাফল বিশ্লেষন সহ রিপোর্ট প্রদানে যথেষ্ঠ সময় লাগছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এক্স-রে স্লিপ গ্রহন করে তাদের পরিক্ষা করার পরে রিপোর্ট প্রদানেই বিকলে গড়িয়ে যায়। এরপরে আগত রোগীদের এক্স-রে করা অত্যন্ত দুরুহ হয়ে পড়ছে। এমনকি দুপুরের পরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীদের জরুরী এক্স-রে করা হলেও রেডিওলজির চিকিৎসকের অভাবে তার রিপোর্টে পেতে পরদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে।

শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বরিশাল বিভাগে একমাত্র ‘কোবাল্ট-৬০’ মেশিনটিও গত ৪ বছর ধরে বিকল। ফলে ক্যান্সার রোগীদের রেডিয়েশন দেয়ার জন্য এ হাসপাতালে আসা জটিল রোগীদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে ঢাকা বা অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে। রোগীদের ভোগান্তি আর অর্থ ব্যায় বৃদ্ধির সাথে সঠিক সময়ে সুষ্ঠু চিকিৎসা প্রাপ্তিও ব্যাহত হচ্ছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক জানান, এ মিশিনটি মেরামতে কয়েকবার ঢাকা থেকে টিম আসলেও তেমন কোন কাজ হয়নি। আমরা বারবারই বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় লিখছি। কিন্তু এখনো কোন ইতিবাচক ফল হয়নি বলেও জানান তিনি। তবে এ হাসপাতালে ‘ক্যামো থেরাপী’ সহ ক্যান্সারের অন্যান্য চিকিৎসা অব্যাহত আছে বলে একমাত্র সহকারী অধ্যাপক জানিয়েছেন। হাসপাতালটির রেডিওথেরাপী বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের দুটি পদও শূণ্য।

এমনকি বিশাল এ হাসপাতালে মাত্র ৮টি আল্ট্রাসোনো মেশিনের ৭টিই বিকল। একমাত্র সচল মেশিনটির মনিটরেও সঠিক আলো না আসায় রোগ নির্ণয় দুরুহ বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক। অথচ মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোলিভার, গ্যাস্ট্রো এ্যান্টোরলজি, ইউরোলজি সহ পরিপাকতন্ত্রেরও বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে আল্ট্রাসোনো মেশিনের ব্যাবহার অনিশিকার্য।
অপারদিকে অর্থোপেডিক বিভাগের ‘সিআর মেশিন’টিও বিকল হয়ে আছে। দীর্ঘদিনের পুরনো মেশিনটি কয়েক দফায় মেরামত করা হলেও তা আর সচল নেই। এসব মেশিনেরও নিয়মিত চাহিদা প্রদান করা হচ্ছে বলেও পরিচালক জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাসপাতাল

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ