Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তথ্য প্রতিমন্ত্রীর অপসারণ দাবি বিএনপি-শিক্ষক-নারী নেত্রীদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাষ্ট্রীয় পদে আসীন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী নারীদের নিয়ে যে ভাষায় কথা বলেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে অপসারণ দাবি করেছে বিএনপি এবং বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠনের নেত্রীরা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ কথা বলার জন্য প্রতিমন্ত্রীর অপসারণ দাবি করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে ৪০ নারী অধিকার কর্মী, নারীপক্ষ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

গণমাধ্যমে পাঠানো ৪০ নারী অধিকার কর্মী এক বিবৃতিতে বলেন, রাষ্ট্রীয় পদে আসীন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর মুখে এ ভাষা বাংলাদেশের আপামর নারীদের অপমান এবং অসম্মান করেছে বলে আমরা মনে করি। জনগণের করের টাকায় বেতনভুক্ত বাংলাদেশের মন্ত্রীপ্রতিমন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় সংসদে, রাজনৈতিক সভায়, গণমাধ্যমে, সম্মেলনে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করে পার পেয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিকে সমাজ এবং রাষ্ট্রে কাঠামোগত প্রতিষ্ঠিত করার বৈধতা দেওয়া হয়।

তারা বলেন, আমরা জানতে চাই, কীভাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ঔদ্ধত্যভাবে বলেন, ‘ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না’। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলে ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে প্রায়শই এ ধরনের রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনার নাম করে তাদের আধিপত্যমূলক ক্ষমতাকাঠামো টিকিয়ে রাখার জন্য এবং রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ‘নারীকে’ই বিভিন্ন যৌন অসংবেদনশীল বক্তব্যের মাধ্যমে হেয় করে থাকে। আর এই রাষ্ট্রব্যবস্থা এভাবেই সংসদ, আদালত, প্রশাসন তথা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের নিয়ে বিভিন্ন রকম যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য, তামাশা এবং মতামত দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ নারীর জন্য ভীতির পরিবেশ তৈরিতে উৎসাহিত করে। বিগত বছরগুলোতে আমাদের গণতন্ত্রহীনতা এত চরমে পৌঁছেছে যে, নারীদের নিয়ে এ ধরনের যৌনবাদী মন্তব্য করার পরও বেশির ভাগ সময়ে প্রশাসন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আদালত, এমপিকে জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
নারী অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি অনলাইন মাধ্যমে নারীবিদ্বেষী, বর্ণবাদী এবং যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় আমরা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে যথাযথ জবাবদিহির আওতায় এনে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিদাতারা হলেন- ফরিদা আখতার, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, জোবাইদা নাসরিন, নাসরিন খন্দকার, সায়দিয়া গুলরুখ, নাসরিন সিরাজ, স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, সুপ্রীতি ধর, সম্পাদক, মিথিলা মাহফুজ, বীথি ঘোষ, তাসলিমা মিজি, মুনমুন শারমীন শামস, ইশরাত জাহান উর্মি, পূরবী তালুকদার, মোশফেক আরা শিমুল, নাসরিন আক্তার সুমি, সুমি রেক্সোনা, দিলশানা পারুল, মনজুন নাহার, ফেরদৌস আরা রুমী, মাহফুজা মালা, প্রমা ইসরাত, নাইমা খালেদ মনিকা, সীমা দত্ত, তানিয়াহ মাহমুদ তিন্নী, সুমাইয়া নাসরিন সুমু, অপরাজিতা সংগীতা, অর্ণি আনজুম, শ্রবণা শফিক দীপ্তি, রিমঝিম আহমেদ, শাফিনুর শাফিন, জেসমিন দীনা রায়, রেবেকা নীলা, লামিয়া ইসলাম, অপরাজিতা সংগীতা, মারজিয়া প্রভা, প্রাপ্তি তাপসী, ইসাবা শুহরাত, নাজিফা জান্নাত, মোরসালিনা আনিকা।

নারী বিদ্বেষী, বর্ণবাদী, বিকৃত ও যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। গণমাধ্যমে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি রওশন আরা রুশা ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু বলেন, তথ্য প্রতমিন্ত্রী ডা. মুরাদ অনলাইন আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালদো জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও তার নাতনি জায়মা রহমান সম্পর্কে অত্যন্ত অশালীন অশ্রাব্য ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, যা নারী বিদ্বেষী, বর্ণবাদী, বিকৃতরুচি সম্পন্ন ও যৌন হয়রানিমূলক। এসব মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ভীষণ বিকৃত মানসিকতার অধিকারী এই সংসদ সদস্য। নেতৃদ্বয় বলেন, নারী বিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য ইতোপূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জেলে যেতে হলেও ডা. মুরাদকে এখনো কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না? এতে করে জনমনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, তাহলে কী ডাক্তার মুরাদ রাষ্ট্র ও সরকারের প্রশ্রয়েই এ ধরনের মন্তব্য করছেন, বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে চলেছেন? জনগণের এসব প্রশ্ন নিরসনে তারা অবলিম্বে ডা. মুরাদের মন্ত্রীত্ব ও সংসদ সদস্য পদসহ সব ধরনের সাংবিধানিক পদ থেকে অপসারণ দাবি করেন। এমন একটি দায়িত্বশীল পদে অবস্থান করে নারী বিদ্বেষী মন্তব্য করার জন্য শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

বেগম খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমানকে নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর অশ্রাব্য মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে নারীপক্ষ বলেন, তিনি যে নোংরা গালাগালি করেছেন এরজন্য তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। বর্তমান সরকার দাবি করে যে তারা নারীবান্ধব। নারীর প্রতি ন্যূনতম সম্মান রেখে কথা বলতে পারেন না সেই ব্যক্তি তারপরও কি করে পদে বহাল থাকেন? নারীপক্ষ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা কামাল এক বিবৃতিতে বলেন, তথ্য-প্রতিমন্ত্রীর ঘৃণ্য ও কুরুচিপূর্ণ আচরণে সারাদেশের নারী সমাজ ক্ষুব্ধ। নেতৃদ্বয় অবিলম্বে তথ্য-প্রতিমন্ত্রীকে এধরণের বিকৃত মন্তব্যের জন্য জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।

জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অশ্লীল মন্তব্যের প্রতিবাদ ও তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবী করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহনকারী একজন ব্যক্তির এ ধরনের ঘৃন্য ও কুরুচিপূর্ণ আচরণের প্রতিকার দাবি করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী যে দূর্বলতার মানুষই হোক না কেন একজন জাতীয় পতাকাধারী ব্যক্তির এ ধরনের মনোবৈকল্য উৎসারিত বিকৃতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে তথ্য-প্রতিমন্ত্রীকে হীন রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিমুলক এই নারী ও বর্ণবিদ্বেষী বিকৃত মন্তব্য প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বেগম খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমান সম্পর্কে তথ্য-প্রতিমন্ত্রীর শিষ্টাচার বহির্ভূত নারী ও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ঘৃণা প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য শোনার মতো নয়। তার মন্তব্য সকল ভব্যতা ও শিষ্টাচারকে ছাড়িয়েছে। ডা. মুরাদ হাসান অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, বাজে ও অশ্লীল ভাষায় নারীদের অবমাননা করেছেন। যা কোনো সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের কাজ নয়। তিনি গর্হিত অপরাধ করেছেন। এ ধরনের বক্তব্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর নৈতিক স্খলন হয়েছে। তিনি ক্ষমার অযোগ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আমরা শিক্ষক সমাজ অবিলম্বে সরকারের তথ্য-প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে হীন রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিমুলক নারী ও বর্ণবিদ্বেষী বিকৃত মন্তব্য প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার এক বিবৃতিতে বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী শুধু দুই নারীই নয়, তিনি আফ্রিকার মানুষদের সম্পর্কেও বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন। নারীবিদ্বেষী ও বর্ণবাদী মনোভাবের জন্য তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান অবশ্যই দোষী সাব্যস্ত হবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ