Inqilab Logo

বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পণ্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে পিষ্ট মানুষ

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দামই বাড়ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর পণ্যমূল্য আরো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত দাম বাড়াচ্ছে। সরকার নিশ্চুপ। ব্যবসায়ীদের অর্থ লিপ্সার লাগাম টানার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ক্রেতাভোক্তারা অসহায়। মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় তাদের যেন কিছু করার নেই। তারা যেটা পারছে, সেটা অবশ্য করছে। দরকারী পণ্যের অর্ধেক বা তার কম কিনছে। এতে অর্ধহারে-অনাহারে থাকতে হচ্ছে। কম পণ্যে চলতে হচ্ছে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে স্বাস্থ্যে, সংসারের অন্যান্য ক্ষেত্রে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের চেইন প্রতিক্রিয়া পড়েছে পণ্যবাজারে। খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা বিধিবর্হিভূত ও খামখেলালিপূর্ণ। তার এ পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্যের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। যারা দরিদ্র ও নি¤œআয়ারে মানুষ, তাদের দিনযাপন এখন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। যারা মধ্যম মানের চাকরিজীবী তাদের অবস্থাও তথৈবচ। বেতনের অর্ধেক টাকা কিংবা তার কিছু বেশি বাসাভাড়ায় বেরিয়ে যায়। বাকী টাকায় সংসারের প্রয়োজন মেটে না। খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যক্রয়, ছেলে-মেয়ের শিক্ষাব্যয়, যাতায়াত ইত্যাদির জন্য টাকার সংকুলান হয় না। হয় জবরদস্তি ব্যয় কমাতে হয়, না হয় ধারকর্জ করতে হয়। বেসরকারি পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বেতনও হয় না। কখনো দেড়মাস কখনো বা দু’মাস বাদে বেতন হয়। এরকম অনিয়মিত বেতনের চাকরিজীবীদের দুরবস্তার কথা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। প্রায় পৌনে দু’বছর ধরে করোনামহামারির কারণে সব ক্ষেত্রে একটা অভূতপূর্ব অবস্থা তৈরি হয়েছে। সবকিছু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। অনেকে চাকরি হারায়, অনেকের বেতন কমে যায়। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, এসময় লাখ লাখ কর্মজীবী চাকরি হারায়, হাজার হাজার ছোটখাটো ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। করোনাকালে নতুন করে দরিদ্র হয় অন্তত তিন কোটি মানুষ। আগের দরিদ্র্যের সঙ্গে এই দরিদ্র যোগ করলে দরিদ্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ কোটির মতো। এই দুর্মূল্যের বাজারে তাদের কী অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
দেশে ধনীলোকের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র কয়েক শতাংশ। এদের বাদ দিলে কারো অবস্থাই ভালো নয়। যারা ধনী নয়, কিন্তু সমাজে ধনী হিসেবে পরিচিত, তারাও মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিপন্ন বোধ করছে। দেশের মধ্যম আয়ের মানুষের সংখ্যা ২৫ শতাংশের মতো, যাদের মাসিক আয় ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। এই মধ্যম আয়ের মানুষদেরও আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই আশংকা করছেন, দেশে মধ্যবিত্ত বলতে আর কিছু থাকবে না। মধ্যবিত্তের অধিকাংশই ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যবিত্তে পরিণত হয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিণত হয়েছে নিম্নবিত্তে। নিম্নবিত্তের ঠিকানা হয়েছে দরিদ্রে। দরিদ্র হয়ে গেছে হতদরিদ্র। সমাজের সব স্তর ও পর্যায়ে অলক্ষ্যে একটা পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে, যা দেশের জন্য মোটেই শুভসংকেত বহন করে না। করোনার প্রতিক্রিয়াজাত পরিবর্তন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে সরকারের উচিৎ ছিল আরো ভেবে দেখা। তেলের দাম বাড়ানোর ফলে সরকারের যে অর্থ সাশ্রয় বা লাভ হবে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি অর্থ দেশের সমস্যাগ্রস্ত মানুষের পকেট থেকে বেরিয়ে যাবে। কিছু লোকের হাতে সেই অর্থ জমা হবে, যারা দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা কমই ভাবে। সরকার জিডিপির বিশাল আকার, মাথাপিছু আয়, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কথা বলে দেশের যে চিত্র উপস্থাপন করতে চায়, বাস্তব চিত্র ও তার মধ্যে বিস্তার ফারাক। জিডিপির আকার যত বড়ই হোক, তা যদি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও বিকাশ তরান্বিত না করে, তবে তাতে কোনো লাভ নেই। আমাদের জিডিপি কি তা করছে? মাথাপিছু গড় আয়ে একটা বিরাট শুভংকরের ফাঁক রয়েছে। এটা প্রতিটি মানুষের প্রকৃত আয় নয়। একজন বেকার বা কর্মহীন ব্যক্তির কী আয়? অথচ গড় আয়ে তারও আয় দেখানো হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে এমন একটা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানে অর্থ গুটিকয়েক লোকের হাতে জমা হচ্ছে। প্রতিবছর কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি এর প্রমাণ। যেখানে সাধারণ মানুষে ক্রমাগত দরিদ্র হচ্ছে, সেখানে এত কোটিপতি জন্মায় কীভাবে?
উন্নতি হলে দেশে ও সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর হওয়ার কথা। সরকার বলছে উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তাহলে দরিদ্র বাড়ছে কেন, বৈষম্য বাড়ছে কেন? এর কোনো জবাব নেই। সাধারণভাবে জনগণ যেন দুধেল গাভী, যাকে যথেচ্ছ দোহন করা যায়। সরকার তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদির দাম বাড়চ্ছে। টাকাটা যাচ্ছে জনগণের গাঁট থেকে। সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ট্যাক্স ধার্য করছে, পণ্যের ওপর থেকে সেই ট্যাক্স আদায় করছে। দিচ্ছে জনগণ। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। বাড়তি দামের জোগানও আসছে জনগণের কাছ থেকে। জনগণের জন্যই সরকার। সরকারের কাজ জনগণের সেবা, কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনসমাজে শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। জাতীয় বিকাশ দ্রুতায়িত করা। দরিদ্র বৃদ্ধি, বৈষম্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি কাম্য দেশ ও সমাজের পরিচয় বহন করে না। দেশের মালিক জনগণ। তাদের হিতার্থেই সরকারের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হতে হবে। এই অতি জরুরি ও অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য কথাটি সরকারকে সব সময় স্মরণ রাখতে হবে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয়স্ফীতি, জনগণের দারিদ্র ও দুর্গতির বর্তমান প্রেক্ষিতে সরকারকে এমন কিছু দ্ব্যর্থহীন ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে জনগণ স্বস্তি লাভ করে, নিরাপদ বোধ করে।



 

Show all comments
  • jack ali ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:২৭ পিএম says : 0
    Pathetic liar ruler is saying all the time that our country is rich then why millions of millions of are poor???????????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পিষ্ট মানুষ
আরও পড়ুন