Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় মসজিদে প্রবেশের রাস্তা পার্ক করা যাবে না

| প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পূর্বদিকের প্রবেশ-রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। শুধু তাই নয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ রাস্তার ওপর পার্ক ও ড্রেন নির্মাণ শুরু করেছে। এতে মসজিদের পূর্বাদিক থেকে আগত মুসল্লিরা সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। জাতীয় মসজিদের এই প্রবেশ-রাস্তাটি দখল করে পার্ক ও ড্রেন নির্মাণের ঘটনা মসজিদের মুসল্লিদের পাশাপাশি দেশের তাবৎ মানুষকে বিস্মিত ও হতবাক করেছে। এটা কি মগের মুল্লুক যে, ইচ্ছে করলেই যে-কেউ যা কিছু করতে পারে? প্রবেশ-রাস্তার জায়গাটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নয়। এ কথা পরিষদের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন। তারপরও কেন এই জবরদখল? রাস্তাটি এভাবে জবরদখল ও পার্ক নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃপক্ষ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি বলেই মনে হয়। স্মরণ করা আবশ্যক যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ জাতীয় মসজিদের পূর্বদিক থেকে আগত মুসল্লি এবং বিদেশি মেহমানদের মসজিদে যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৯৮৮ সালে এই সংযোগরাস্তাটি নির্মাণ করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ১৯৮৯ সালে রাস্তাটি নির্মাণ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে রাস্তাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। দীর্ঘদিন মুসল্লিরা এটি ব্যবহার করছে। ২০০৪ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বহুতল ভবন নির্মাণের সময় নির্মাণ সামগ্রী রাখার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে রাস্তাটি ব্যবহারের অনুমতি নেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। কথা ছিল, ভবন নির্মাণের পর রাস্তাটি ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু সে কথা রাখা হয়নি। এখন রাস্তাটি তাদের বলে দাবি করছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।

দেশের লাখ লাখ মসজিদের মধ্যে বায়তুল মোকাররমকে জাতীয় মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। স্বীকৃতির পর এর উন্নয়ন, বিস্তার, সৌন্দর্য বর্ধন ইত্যাদি করা হয়েছে। এ মসজিদ কেবল বাংলাদেশের নয়, গোটা মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গণ্য। এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি, মিনার ও সাহান নির্মাণের জন্য ইতোপূর্বে সউদী সরকার প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল, যাতে দক্ষিণ দিয়ে সুউচ্চ মিনার নির্মিত হয়েছে, আর কিছু সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও হয়েছে। মিনারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনো কিছু কাজ বাকী আছে। এর মধ্যে পূর্বদিকে মিনার নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। আজো এর নির্মাণ শুরু করা যায়নি। জাতীয় মসজিদে ওয়াক্তিয়া নামাজসহ জুম্মার নামাজে বিপুল সংখ্যক মুসল্লির সমাবেশ ঘটে। বহুতল ও বিশাল এই মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় রাস্তায় পর্যন্ত মুসল্লিরা নামাজে দাঁড়ায়। দুই ঈদে এই মসজিদ ৫/৬টি করে জামাত হয়। তখনো নামাজের কাতার রাস্তায় চলে আসে। জাতীয় মসজিদ হওয়ায় রাজধানীর দূরদূরান্ত থেকে, এমনকি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও মুসল্লিরা এখানে নামাজ পড়তে আসে। মসজিদের চারদিক দিয়েই ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা আছে। পূর্বদিক দিয়ে প্রবেশের রাস্তাটি বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মুসল্লিকে অনেক দূর ঘুরে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। এজন্য তাদের দুর্ভোগ ও পেরেশানিতে পড়তে হয়। অবিলম্বে এর অবসান হওয়া দরকার।

জাতীয় মসজিদে যাওয়ার রাস্তা দখল করে মুসল্লিদের যাতায়াত বন্ধ করা, দখলকৃত রাস্তায় পার্ক নির্মাণ করা কোনো অজুহাতে বা কারণেই বরদাশতযোগ্য হতে পারে না। মসজিদের জায়গা ও রাস্তা দখল এবং যাতায়াতে বাধা প্রদান ফৌজদারি অপরাধ। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যে-ই এটা করুক, এ অপরাধ থেকে রেহাই পেতে পারে না। পার্ক সম্পর্কে সাধারণের ধারণা ইতিবাচক নয়, যদিও এর অপরিহার্য প্রয়োজন সম্পর্কে কোনো দ্বিমত নেই। পার্কে গাছপালা, তৃর্ণলতা, ফুলফল পাখপাখালীর সমারহ থাকায় এটা শাহুরিক জীবনে বিনোদনের উত্তম স্থান হিসেবে গণ্য। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ পার্কে অবাঞ্চিত লোকদের ভীড়, অশালীন চলাফেরা, দৃষ্টিকটু দৃশ্য ইত্যাদি দেখা যায়। মাদক সেবনসহ নানা অপরাধও প্রত্যক্ষ করা যায়। অনেকের মতে, পার্কগুলো অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের পার্ক বা অপরাধের অভয়ারণ্য জাতীয় মসজিদের পাশে কোনোমতেই করতে দেয়া যায় না। গুলিস্তানের পূর্বপাশে পুকুরপাড়ের পার্ক, রাজউক ভবনের পাশের পার্কসহ ওই এলাকার ছোটখাটো পার্ক ও খোলা যায়গায় কী হয়, সেটা কারো অজানা নেই। পার্কের নামে জাতীয় মসজিদের পাশে ওইরকম আরেকটি জায়গা তৈরি হোক, কেউ তা চাইতে পারে না। আমরা জানতে পেরেছি, ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা আশা করি, সে কথাবার্তায় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের টাকায় নির্মিত রাস্তা তার নিরংকুশ কর্তৃত্বেই থাকতে হবে। অবিলম্বে রাস্তাটি দখলমুক্ত করে সংস্কার-মেরামতের পর ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন