বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এ জীবন অনেক মূল্যবান। উপার্জনের পেছনে পড়ে জীবনকে নিঃশেষ করে বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ছোট্ট এ জীবনকে কাজে লাগিয়েই অর্জন করতে হয় মৃত্যু-পরবর্তী অনন্ত জীবনের পাথেয়। দ্বিতীয়ত নবী করিম (সা.) বলেছেন, উপার্জন করতে গিয়ে হালাল-হারাম দুটি পথেরই তুমি সন্ধান পাবে। আল্লাহকে ভয় করে সর্বপ্রকার হারাম থেকে তুমি বেঁচে থেকো। হালাল পন্থায় যতটুকু সম্ভব হয় ততটুকুই তুমি অবলম্বন করো। হয়ত একটু বিলম্ব হবে, কিন্তু তোমার নির্ধারিত রিজিক তোমার কাছে আসবেই।
সম্পদের প্রতি এই লোভের একটি অনিবার্য ফল- সম্পদ অর্জনে পারস্পরিক প্রতিযোগিতা। এর সঙ্গে যোগ হয় একজনকে ঠকিয়ে আরেকজনের এগিয়ে যাবার মানসিকতা; হালাল-হারামের বাছ-বিচার না করে শুধুই সম্পদ বাড়ানোর প্রবণতা। জন্ম নেয় একের মনে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ, হিংসা প্রভৃতি। এভাবে একটি মন্দ বিষয় আরও অনেক মন্দ বিষয়ের সূত্রপাত ঘটায়। আর একে একে যখন কেউ আক্রান্ত হয় লোভ হিংসা বিদ্বেষ প্রভৃতি রোগে, তখন তার পতন ঠেকাবার উপায় কোথায়! এভাবেই মনের কোণে লালিত লোভ একসময় ভয়ানক রূপ ধারণ করে এবং ধীরে ধীরে ধ্বংসের দুয়ার খুলে দেয়।
দুনিয়াতে যেমন লোভ একরাশ মন্দত্বের সূচনা করে, একইভাবে তা দ্বীন-ধর্ম ও পরকালকেও বরবাদ করে দেয়। ওই যে বলে এলাম, লোভ মানুষকে অন্ধ করে দেয় এবং তার বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে যায়, ওই সময়ে সে যা কিছুই করে, বিবেকের কাঠগড়ায় আসামিরূপে তাকে দাঁড়াতে হয় না। তখন তার কাছে কোনো অপরাধই অপরাধ মনে হয় না। সেসময় যেমন সে কালো টাকা হাতিয়ে নিতে থমকে দাঁড়ায় না, ঠিক তেমনি প্রয়োজন হলে দ্বীন-ধর্ম উপেক্ষা করতে, এমনকি কখনো ছেড়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। সম্পদের নেশায়, সচ্ছল জীবন লাভের আশায় আমাদের এই দেশেই তো কত মানুষ খ্রিস্টান মিশনারীদের পাতা জালে জড়িয়ে যাচ্ছে!
নবীযুগের একটি দৃষ্টান্ত। রাসূলে কারীম (সা.) তখন মদীনায়। সেসময় নাজরান ছিল খ্রিস্টানদের এলাকা। সেখান থেকে ষাট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রওয়ানা দিলো রাসূলে কারীম (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যে। তাদের মধ্যে তিনজন ছিল খুবই গণ্যমান্য। একজন ছিল সর্বাধিক বিজ্ঞ, যে কোনো কাজে অন্যরা তার পরামর্শই মেনে চলত। আরেকজন ছিল তাদের আলেম।
তৃতীয়জন ছিল পাদ্রী এবং তাদের ধর্মীয় নেতা। তার নাম আবু হারেসা। অনন্য মর্যাদার অধিকারী এক ব্যক্তি। তৎকালীন পরাশক্তি খ্রিস্টান রাষ্ট্র রোমও তাকে অনেক মর্যাদার আসনে আসীন করেছিল। তাকে ধনসম্পদে ভরে তুলেছিল। তার জন্যে তারা গীর্জা বানিয়ে দিয়েছিল। খ্রিস্টান ধর্মে তার জ্ঞান ও পারদর্শিতায় রোমবাসী ছিল যারপরনাই মুগ্ধ।
এই কাফেলা যখন নাজরান থেকে মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হলো, তখন হঠাৎ করেই আবু হারেসাকে বহনকারী খচ্চরটি তাকে নিয়ে পড়ে গেল। তখন পাশে থাকা তার সহোদর কুর্য বলে উঠল : মুহাম্মাদ ধ্বংস হোক। আবু হারেসা তখন শাসিয়ে তাকে বললেন, তুমি ধ্বংস হও! অবাক হয়ে কুর্য তার কাছে জানতে চাইল- কেন ভাই? আবু হারেসা বললেন, আল্লাহর কসম, তিনিই তো সেই নবী, আমরা যার জন্যে প্রতীক্ষমাণ। কুর্যের পাল্টা প্রশ্ন- আপনি যদি তা জেনেই থাকেন, তাহলে কেন আপনি তাঁর আহবানে সাড়া দিচ্ছেন না?
আবু হারেসার সোজা জবাব- এই যে রোমবাসী আমাদেরকে এত সম্মান করছে, আমাদেরকে নেতা বানিয়ে রাখছে, অর্থকড়ি দিচ্ছে, এই খ্রিস্টধর্ম অনুসরণ না করলে তো তারা এগুলো করবে না। আমি যদি ইসলাম গ্রহণ করি তাহলে তারা এই অর্থসম্পদ ইজ্জত-সম্মান সবই ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। (আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, : ৩৯০৬; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৬৬৫ (৩/৪২) আহলে নাজরানের প্রতিনিধিদল শিরোনাম দ্রষ্টব্য; তাফসীরে রাযী, সূরা আলে ইমরানের প্রারম্ভিক আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।