বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ছাত্রলীগের নেতাদের অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কুয়েটের সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ বিকালে জরুরী সিন্ডিকেটের সভা ডাকা হয়েছিল। তবে ওই সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া মুলতবি ঘোষণা হয়েছে এবং আগামীকাল শুক্রবার পুনরায় বৈঠক করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন কুয়েটের রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মোঃ আনিছুর রহমান ভূঞা। এর আগে বিকেল ৪ টায় শুরু হয় কুয়েটের জরুরী সিন্ডিকেট সভা। ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরেও সভায় কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি সদস্যরা।
এদিকে ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ কমিটির সভাপতি ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম। এছাড়া দুইজন সদস্য হলেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান ও ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার। তবে এদের মধ্যে থেকে অধ্যাপক ড. কল্যাণ কুমার হালদার লিখিত ভাবে ও ড. মো. আরিফুল ইসলাম অলিখিত ভাবে তদন্ত করতে অপারগতা জানান।
তদন্ত কমিটির অপারগতার বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটির দুইজন সদস্যের অপারগতা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে নতুন করে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সিন্ডিকেটের সভা থেকে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুতে কুয়েট শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে আজ প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৫০ জন শিক্ষক কালো ব্যাজ ধারণ ধারণ করে প্রতিবাদ সভায় অংশ নেন। সভা শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।
এর আগে গতকাল বুধবার থেকে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছেন। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ৩ টার দিকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কুয়েট শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন। তিনি কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও লালন শাহ হলের প্রভোষ্ট ছিলেন।
জানা গেছে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হয়েছে। বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি সরকারি চাকুরী পাওয়ার পর পরই নতুন কমিটি আসার প্রাকমুহুর্তে সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ভাগ হয়ে পড়েছে কয়েকটি উপদলে। এর ভেতর একটি প্রভাবশালী উপদল বর্তমান কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সম্প্রতি কুয়েটের লালন শাহ হলে ছাত্র আবাসিক হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক ( ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে, সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ ওঠে। ওই প্যানেলের সদস্যরা, হলের প্রভোষ্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন, তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায়, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা হতে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষ (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) এ প্রবেশ করে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধাঘন্টা ওই শিক্ষকের সাথে রুদ্ধদার বৈঠক করে। এতে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন ও অসুস্থ হয়ে যান। পরবর্তীতে, শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস নিকটস্থ বাসায় যাওয়ার পর ২ টা ৩০ মিনিটের এ তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে, দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছাত্রদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ড. সেলিম একজন অত্যন্ত সজ্জ্বন সৎ মেধাবী শিক্ষক। ছাত্রবান্ধব হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে৷ ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত অল্প বয়সে তিনি দেশের বাইরে থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে ২০২০ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান৷ কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিলোনা।
এ বিষয়ে জানতে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে, শিক্ষকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কুয়েট ক্যাম্পাসে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।