পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
২ ডিসেম্বর ২০২১ পার্বত্য শান্তিচুক্তির দুই যুগপূর্তি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদ সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক সমাধানের দীর্ঘদিনের জাতীয় আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম পার্বত্য অঞ্চলের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির রাজনৈতিক সমাধান কল্পে জনসংহতি সমিতির সঙ্গে সংলাপের সূচনা করেছিলেন। তার সময়ের সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমানসহ আরো কয়েকজনের সাথে সফল আলোচনা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে এরশাদ আমলে ৬টি, বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম আমলে ১৩টি ও শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ৭টি মিলে মোট ২৬টি সংলাপের মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে শুরু থেকেই এ চুক্তির কিছু ধারা নিয়ে প্রবল বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিতর্ক ও সমালোচিত বিষয় হচ্ছে ‘অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার’। শান্তিচুক্তির ঘ খ-ের ১৭(ক) ধারায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প অপসারণের কথা বলা হয়েছে। জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমা ও তাদের সমর্থক সুশীল সমাজ শান্তিচুক্তির এই শর্ত বাস্তবায়িত হয়নি বলে ব্যাপক সমালোচনা করলেও সরকারের দাবি, এই শর্ত আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, চুক্তির শর্তানুযায়ী সরকার ইতোমধ্যেই একটি ব্রিগ্রেডসহ(কাপ্তাই) ২৪১টি নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, সরকার যেসকল নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নিয়েছে, উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন কৌশলে সেসকল নিরাপত্তা ক্যাম্পের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে নিয়েছে।
পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত ৬৯টি প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্প উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন কৌশলে দখল করে নিয়েছে। কোথাও ধর্মীয় স্থাপনা, কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোথাও সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব নিরাপত্তা ক্যাম্প দখল করে নিয়ে তারা তাদের অস্থায়ী গোপন আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর ব্যাপক হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, ক্যাম্পগুলোর ভূকৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়দের অভিযোগ, যেসব এলাকায় ক্যাম্প উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, সেসব এলাকা উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় এলাকাবাসী পুনরায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে। সরকার স্থানীয় অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের এই দাবি মূল্যায়ন করে ইতোমধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিত্যাক্ত সেনা ক্যাম্পের স্থানগুলোকে সংরক্ষণ করে পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো: শান্তিচুক্তির দুই যুগ পরে পাহাড়ে সেনাক্যাম্প রাখার যৌক্তিকতা কতটুকু? কিংবা পুলিশ ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা রক্ষায় কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে? এ প্রশ্নের মীমাংসাতেই এই লেখার অবতারণা। তবে মূল আলোচনায় যারার পূর্বে শান্তিচুক্তিতে সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার বিষয়ে কী বলা হয়েছে এবং কীভাবে বলা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
শান্তিচুক্তির ঘ খ-ের ১৭(ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি সই ও সম্পাদনের পর এবং জনসংহতি সমিতির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার সাথে সাথে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিডিআর) ও স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলীকদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রাম হইতে পর্যায়ক্রমে স্থায়ী নিবাসে ফেরত নেওয়া হইবে এবং এই লক্ষ্যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হইবে। আইনশৃঙ্খলা অবনতির ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে এবং এই জাতীয় অন্যান্য কাজে দেশের সকল এলাকার ন্যায় প্রয়োজনীয় যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরণে বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীনে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করা যাইবে। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন বা সময় অনুযায়ী সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক পরিষদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করিতে পারিবেন।’
শান্তিচুক্তিতে ৬টি স্থায়ী সেনানিবাসের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই সেনানিবাসগুলোর ফর্মেশনের কথা সেখানে স্পষ্ট করে বলা নেই। এই ৬টি স্থায়ী সেনানিবাস কীরূপে সেখানে অবস্থান করবেÑ ডিভিশন আকারে, ব্রিগেড আকারে না ব্যাটালিয়ন আকারে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। এই অপশনটি রাষ্ট্রের হাতে রয়ে গেছে। রাষ্ট্র চাইলে প্রয়োজন মতো তা ব্যবহার করতে পারবে। এ চুক্তির ঘ খ-ের ১৭(ক) ধারা গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এই ধারায় যেমন স্থায়ী সেনানিবাসের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা হয়নি, তেমনি অস্থায়ী সেনানিবাসের সংজ্ঞাও দেয়া নেই। অর্থাৎ অস্থায়ী সেনানিবাস বলতে ব্রিগেড, ব্যাটালিয়ন, জোন, সাবজোন, কোম্পানি স্থাপনা নাকি সেনা আউট পোস্ট বোঝানো হবে তার কিছুই চুক্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়নি। এই ব্যাখ্যাটাও রাষ্ট্রের হাতে রয়েছে। এছাড়া এখানে শুধু সেনা ক্যাম্পের কথাও বলা হয়নি। সেনা ও আনসার ভিডিপি ক্যাম্পের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান ৪টি ব্রিগেডের মধ্যে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান ব্রিগেডে ৫ ব্যাটালিয়ন করে সৈন্য রয়েছে, গুইমারায় রয়েছে ৩ ব্যাটালিয়ন। সব মিলিয়ে ১৮ ব্যাটালিয়ন সৈন্য রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। (বিজিবি আলাদা)। একটি ব্যাটালিয়নে গড়ে ৭০০ করে সৈন্য ধরলে ১৮টি ব্যাটালিয়নে ১২-১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফর্মেশন অনুযায়ী ৩-৫টি ব্যাটিলিয়ন নিয়ে একটি ব্রিগেড গঠিত হয়। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪টি ব্রিগেড থাকলে সেখানে ১২-২০ ব্যাটালিয়ন সৈন্য থাকতেই হবে। ব্যাটালিয়নগুলো আবার গড়ে ওঠে কতকগুলো সাবজোনের সমষ্টিতে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, এই জোন, সাবজোনগুলো কোথায়, কীভাবে অবস্থান করবে? শান্তিচুক্তির ঘ খ-ের ১৭(ক) ধারায় আরো বলা হয়েছে, ‘আইনশৃঙ্খলা অবনতির ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে এবং এই জাতীয় অন্যান্য কাজে দেশের সকল এলাকার ন্যায় প্রয়োজনীয় যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরণে বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীনে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করা যাইবে।’ বাক্যটি বিশ্লেষণ করলে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা অবনতির ক্ষেত্রে বা জাতীয় অন্যান্য দরকারে রাষ্ট্র প্রয়োজনানুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের যেখানে প্রয়োজন যে কোনো ফর্মেশনে সেনাবাহিনী রাখতে পারবে। এ ক্ষেত্রে চারটি ব্রিগেড বা ৬টি স্থায়ী সেনানিবাস বিবেচ্য নয়, বরং রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন বিবেচ্য। একই ধারায় আরো গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি বলা হয়েছে তাহলো, সেনাবাহিনী ফিরিয়ে আনার শর্ত বাস্তবায়িত হতে হবে ‘জনসংহতি সমিতির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার সাথে সাথে..।’ অর্থাৎ চুক্তিতে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার ও সেনাবাহিনী ফিরিয়ে আনার বিষয়টি শর্তহীন নয়। বরং এর সাথে ‘জনসংহতি সমিতির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার’ শর্ত যুক্ত রয়েছে। এ নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই যে, জেএসএসের সকল সদস্য অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। জেএসএস ও তার সকল সদস্যকে অস্ত্র সমর্পণ করিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারেনি। চুক্তি অনুয়ায়ী ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জেএসএসের অস্ত্র সমর্পণের সময় চুক্তির বিরোধিতা করে অস্ত্র সমর্পণ না করে তাদেরই একটি অংশ জেএসএস থেকে বেরিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে ইউপিডিএফ নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলে। এরপর স্বার্থগত দ্বন্দ্বে জেএসএসও ভেঙে জেএসএস (এমএন লারমা) নামে নতুন আরো একটি সংগঠন তৈরি হয়। আরো পরে ইউপিডিএফ ভেঙ্গে গিয়ে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে আরো একটি সশস্ত্র গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে জেএসএসের মূলের সামরিক শাখাও সম্পূর্ণরূপে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি।
বর্তমানে এই চার পাহাড়ি সংগঠন প্রকাশ্য ও গুপ্ত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পাহাড়ে প্রকাশ্য ও গোপন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গুপ্ত বা গোপন শাখা আসলে তাদের সশস্ত্র সামরিক শাখা। যদিও প্রকাশ্যে তারা কখনই এই সামরিক শাখার অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে না। তবে এই সব সামরিক শাখার দৌরাত্ম্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বর্তমানে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। চাঁদা ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণ নাগরিক তো দূরে থাক, সরকারি কর্মকর্তাদেরও বসবাস অসম্ভব। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চারটি পাহাড়ি সংগঠনের নির্ধারিত চাঁদা দিতে না পারলে সেখানে বসবাস যে কারো জন্যই অসম্ভব। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে সাধারণ ও শান্তিপ্রিয় পাহাড়িদের জিম্মি করে তাদের নির্দেশিত পথে পরিচালিত করতে বাধ্য করে। শুধু তাই নয়, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অখ-তা, বাঙালি ও সরকার বিরোধী নানা তৎপরতায় লিপ্ত।
একথা বহুবার আলোচিত হয়েছে যে, জেএসএস কৌশলে তার সবচেয়ে চৌকস যোদ্ধাদের শান্তিচুক্তির শর্তানুযায়ী আত্মসমর্পণ করায়নি, বরং উন্নত ও ভয়ঙ্কর অস্ত্রশস্ত্র জমা না দিয়ে ভাঙাচোরা ও পুরনো কিছু অস্ত্র সমর্পণ করে। সন্তু লারমা নিজেও একসময় সেকথা স্বীকার করেছেন। ২০১১ সালের ২৫ নভেম্বর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক শামিমা বিনতে রহমানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সন্তু লরমা সকল অস্ত্র জমা দেয়ার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। এটা ছিলো শান্তিচুক্তির সাথে, তথা রাষ্ট্রের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। ফলে শান্তিচুক্তির প্রভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের তীব্রতা কমলেও তা বন্ধ হয়নি কখনো। এরূপ পরিস্থিতিতে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার শান্তিচুক্তির শর্তানুযায়ী বাধ্যতামূলক বা প্রযোজ্য নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্পগুলো স্থাপন করা হয়েছে মূলত পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ আমলের সত্তর দশকের শেষ ও আশির দশকের শুরুর দিকে। এসকল সেনা ক্যাম্প স্থাপনে তৎকালীন নিরাপত্তা ঝুঁকি, নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, জনবসতি, যোগাযোগ, অর্থনৈতিক কর্মকা-, কৌশলগত অবস্থান, ভারতের সেভেন সিস্টার্সের বিদ্রোহীদের অবস্থান প্রভৃতি বিবেচনায় নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসকল বিচার্য বিষয়ের অনেক কিছুরই ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্পের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
অনেকেই জানেন, ভারতের সেভেন সিস্টার্সের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিশেষ সহানুভূতির চোখে দেখতো পাকিস্তান সরকার। এসকল গেরিলা গ্রুপকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ারও অভিযোগ ছিল পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে। এ কারণেই পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সীমান্তের অনেক ভেতরে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (ইপিআর) এবং সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যেকোনো বিদেশি সন্ত্রাসী গ্রুপের অবস্থানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বরং এ ধরনের কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন যাতে কোনোভাবেই বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য অত্যন্ত শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সেকারণে সীমান্তে নতুন নতুন বিওপি, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ, যৌথ টহলের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শুধু ভারত নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে মিয়ানমারের ১৯৩ কি.মি. সীমান্ত রয়েছে। অত্যন্ত দুর্গম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গ্রুপের অবস্থান রয়েছে। যারা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর তাড়া খেয়ে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের অত্যন্ত দুর্গম সীমান্তের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যা, আরসা সমস্যা ইত্যাদি এ অঞ্চল নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে আরো অনেক নতুন নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। উল্লিখিত পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ভাবনা বা সেনা ক্যাম্পের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন জরুরি।
ইতোপূর্বে যেসকল সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের পূর্বে নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পের কোনো কোনেটির হয়তো গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আগের মতো নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সেসকল সেনা ক্যাম্পের জায়গাগুলো যাতে সন্ত্রাসীদের দখলে চলে না যায় সেজন্য উত্তমরূপের সংরক্ষণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি।
শান্তিচুক্তি পরবর্তী সরকারগুলো উন্নয়ন পরিকল্পনায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে সবিশেষ গুরুত্ব দেয়ায় এই জনপদকে পূর্বের মতো পশ্চাদপদ বিবেচনা করা যায় না। সড়ক, সেতু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকা-, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের অনেক জেলার থেকে এগিয়ে গিয়েছে। সরকারি, বেসরকারি, এনজিও ও দাতা সংস্থার বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এই তিন জেলা সমতলের অনেক জেলা থেকেই এগিয়ে রয়েছে। নতুন নতুন রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণের ফলে পাহাড়ের অনেক গভীরে মানুষের যাতায়াত ও বসতি গড়ে উঠেছে। সমতলের পাইকাররা এসব সড়ক ব্যবহার করে পাহাড়ের অনেক ভেতর থেকে মালামাল আমদানি করতে পারছে। এতে স্থানীয় উৎপাদকরা লাভবান হচ্ছেন। এই নতুন সড়ক, সেতু ও বসতির নিরাপত্তায় পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি স্থলবন্দর ও সীমান্ত হাট নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কর্মকা- শুরু হবে। বিপুল সংখ্যায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এবং যানবাহনের যাতায়াত, আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হতে থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প থাকবে কী থাকবে না কিংবা নতুন করে আরো সেনাক্যাম্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে কীনা তা এই পরিস্থিতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে রামগড়-সাবরুম হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভারতকে যে করিডোর সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে তার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই রুটের সড়ক নির্মাণ ও ফেনী নদীর ওপরে সেতু চালু হলে দুর্গম এই রুট দিয়ে বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালিত হবে। দু’দেশের পণ্য নিয়ে অধিক সংখ্যক ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান যেমন চলাচল করবে, তেমনি ভারতের বিভিন্ন বন্দর থেকে আগত পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়ে এই রুট দিয়ে সেভেন সিস্টার্সে প্রবেশ করবে। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, যে এলাকা দিয়ে এসব পণ্য পরিবহন করা হবে তা মূলত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের প্রভাবাধীন।
দিনরাতের এই বাণিজ্যিক কর্মকা-ে যেকোনো ভারতীয় পণ্যবাহী পরিবহন যদি হামলার শিকার হয় তাহলে তা আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনামে ওঠে আসবে। প্রায় একই ধরনের চ্যালেঞ্জ থেগামুখ ও ঘুমধুম স্থলবন্দরের জন্যও প্রযোজ্য। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উক্ত আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র ও বাণিজ্যিক রুটগুলোর নিরাপত্তায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাক্যাম্প বিন্যাসে নতুন ভাবনা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিনোদনের প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পর্যটনের প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। প্রতিবছর যেভাবে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু বাংলাদেশে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটের স্বল্পতা রয়েছে। শুধু সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, সাজেক, নীলগিরি মানুষ কতবার দেখবে? তাই আমাদের প্রয়োজন নতুন নতুন ও বৈচিত্র্যময় পর্যটন স্পট তৈরি করা। সেটা না করা গেলে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটনখাত ব্যাপকভাবে মার খাবে। মানুষ ভারত, সিকিম, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার দিকে ছুটবে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ভা-ার কমতে থাকবে।
কিন্তু বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া দেশে নতুন পর্যটন স্পট তৈরির মতো জায়গা তেমন একটা নেই। সেক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন নতুন পর্যটন স্পট নির্মাণ ও পর্যটকবান্ধব করার বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে দেশের পর্যটকরা নিজ উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট খুঁজে বের করেছে। অন্যদিকে অ্যাডভেঞ্চারে আগ্রহী পর্যটকরা পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর ও দুর্গম এলাকাগুলোতে ভ্রমণ করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রেমাক্রি, তিন্দু, নাফাখুম জলপ্রপ্রাত, হাজাছড়া ঝর্ণা, বড় পাথর, দামতুয়া ঝর্ণা প্রভৃতি। এসব পর্যটন স্পটের কাছাকাছি সেনাক্যাম্প বা নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান না থাকায় স্থানীয় উপজাতীয় গাইডের হাওলায় পর্যটকদের পাঠিয়ে দেয়া হয়। এতে করে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হাতে পর্যটকদের হয়রানি, অপহরণ এমনকি হত্যাকা-ের ঘটনাও ঘটে থাকে। অনেক সময় স্থানীয় পর্যটকদের সাথে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের সখ্য থাকে। তারা ধনী পর্যটক বুঝতে পারলে তাদের মুক্তিপণের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়। এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পর্যটন খাতের বিকাশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পর্যটকদের নিরাপত্তা। সেক্ষেত্রে পর্যটন স্পট ও পর্যটকদের যাতায়াতের রুটগুলোতে যথাযথ নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপনের বিকল্প নেই। অর্থাৎ বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা বিবেচনায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা, জননিরাপত্তা, পর্যটন, ইনসার্জেন্সি মোকবিলা, সন্ত্রাস দমন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ষড়যন্ত্র মোকবিলায় নিরাপত্তা ক্যাম্পের আওতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
সরকারও এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিত্যাক্ত সেনাক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সদিচ্ছাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। যেহেতু এ সরকার শান্তিচুক্তি করেছে, কাজেই এ চুক্তিকে সম্মান দেখানো তার নৈতিক বাধ্যবাধকতার অংশ। অবশ্য যারা সরকারের এ সিদ্ধান্তে খুশি নয়, তাদের অভিমত হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো অত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত উপজাতীয় সন্ত্রাসী এবং আঞ্চলিক (ভারত ও মিয়ানমারের) বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোকবিলা করা পুলিশ দিয়ে কতোটুকু সম্ভব? সন্দেহ নেই, এ প্রশ্নের সারবত্তা রয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যা অন্যত্র এবং সেটা অনেকটাই অনালোচিত।
খেয়াল করলে দেখা যাবে, সরকার যখন পরিত্যাক্ত সেনাক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, তখন উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নিরবতা অবলম্বন করেছে। তাদের এই নিরবতার মধ্যেই আসল খেলা লুকানো রয়েছে। যার উৎস শান্তিচুক্তি। শান্তিচুক্তির খ খ-ের ৩৪(খ) ধারায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের হাতে হস্তান্তরকৃত বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশ বিভাগের নাম। অন্যদিকে গ খ-ের ৯ (গ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদ সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধান করিতে পারিবে।’ তবে খ খ-ের ২৪(ক) ধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘৬২ নম্বর ধারার উপধারা (১) সংশোধন করিয়া নি¤েœাক্তভাবে এই উপধারাটি প্রণয়ন করা হইবে: আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও তদনি¤œ স্তরের সকল সদস্য প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিষদ কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং পরিষদ তাহাদের বদলি ও প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তাহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার বজায় রাখিতে হইবে।’
শান্তিচুক্তির এই শর্তানুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলায় পুলিশ বিভাগকে স্থানীয় জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে, যা আবার আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক সুপারভিশনের আওতায় থাকবে। চুক্তি অনুযায়ী, জেলা পরিষদ তিন পার্বত্য জেলায় পার্বত্য জেলা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও তদনি¤œ স্তরের সকল সদস্য নিয়োগ, বদলী, পদোন্নতি, শাস্তি প্রদান করতে পারবে। শুধু তাই নয়, নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজাতীয় সদস্যদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্মর্তব্য যে, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী পরিষদের চেয়্যারম্যান একজন উপজাতীয় হবেন এবং সদস্যসহ জেলা পরিষদে নিরঙ্কুশভাবে উপজাতীয় প্রাধান্য অটুট থাকবে। শান্তিচুক্তির এই ধারা দীর্ঘদিন অবাস্তবায়িত ছিলো। সঙ্গতকারণে তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতীয় পুলিশ সদস্যদের পোস্টিং দেয়া হতো না। সম্প্রতি তা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশেষ করে, মিশ্র পুলিশের ধারণা প্রবর্তন করে তিন পার্বত্য জেলায় সমতলের পুলিশের পাশাপাশি উপজাতীয় পুলিশ পোস্টিং দেয়া হয়। এভাবে ধীরে ধীরে তিন পার্বত্য জেলায় নি¤œক্রম থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদা পর্যন্ত সকল পদে উপজাতীয় পুলিশ পদায়নের পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক কৌশল বের করেছিলেন মন্ত্রণালের একজন সাবেক সচিব।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল উপজাতীয় ছাত্রছাত্রীদের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাথে ছাত্রজীবনে সংযুক্ত থাকতে হয়। আর এখানে সংযুক্ত প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে এমনভাবে ব্রেনওয়াশ করা হয় যাতে তাদের মধ্যে রাষ্ট্র সম্পর্কে একটি ঘৃণাত্মক মনোভাবের জন্ম হয়। এহেন পরিস্থিতিতে তিন পার্বত্য জেলায় যেসকল উপজাতীয় পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয় তা চরমভাবে নিরাপত্তার নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করে। উপজাতীয় পুলিশের মাধ্যমে অপারেশনাল সকল তথ্য উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হাতে পাচার হয়। এমনকি তাদের মাধ্যমে সরকারি অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। পুলিশের গুলি বাইরে বিক্রির দৃষ্টান্তও দেয়া যায়। এহেন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তিন পার্বত্য জেলা থেকে উপজাতীয় পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি সরকার প্রত্যাহারকৃত সেনাক্যাম্পে পুলিশ নিয়োগ দেয় এবং তারপর যদি কোনোদিন শান্তিচুক্তির শর্তানুযায়ী বা উপজাতীয় নেতাদের চাপের মুখে ভবিষ্যতে পুলিশের কর্তৃত্ব জেলা পরিষদের হাতে হস্তান্তর করে, তাহলে শান্তিচুক্তির শর্তানুযায়ী এসকল সেনাক্যাম্প উপজাতীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি করবে। এ পরিস্থিতিতে পরিত্যাক্ত সেনাক্যাম্পগুলোতে পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত বিজ্ঞজনচিত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। কাজেই পরিত্যাক্ত সেনাক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করার প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই সেনাবাহিনী সদস্যদের দিয়েই তা করতে হবে বা ক্ষেত্র বিশেষে বিজিবি মোতায়েন করা যেতে পারে। কোনোভাবেই পুলিশ সদস্য নয়।
অতএব, উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান প্রেক্ষাপট, যোগাযোগ, উন্নয়ন, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কর্মকা-, পর্যটন সেক্টরের বিকাশ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন, রোহিঙ্গা সমস্যা প্রভৃতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরিত্যাক্ত সেনাক্যাম্পে পুনরায় সেনা মোতায়েন এবং সৃষ্ট বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন করে সেনা বিন্যাস ও নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।