পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অবশেষে ভৌগলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) বা জিআই পণ্য হিসেবে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জামদানী বাংলাদেশের জন্যই সংরক্ষিত থাকছে। মেধাস্বত্ব বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ওয়াইপিও) নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনকে জামদানীর মেধাস্বত্ব অধিকার অর্পণ করা হয়েছে বলে গতকাল প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়। জামদানীসহ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী অনেকগুলো কৃষিপণ্য ও কুটির শিল্পের মেধাস্বত্ব বা জিআই পণ্য হিসেবে ভারত দাবী করছে। জামদানী, নকশি কাঁথা, ফজলি আমসহ ৬৬টি জিআই পণ্যের পেটেন্ট ভারত নিয়ে গেছে বলে ইতিপূর্বে খবর বেরিয়েছিল। বাংলাদেশে এ সম্পর্কিত আইন না থাকা এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় প্রাথমিকভাবে ভারত এসব পণ্যের দাবী আদায় করে নিতে সক্ষম হলেও প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ বা আপীলের সুযোগ আছে। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের দু’টি তাঁতি সংগঠন ‘উপ্পাদা জামদানী’ নামে এক প্রকার জামদানীর পেটেন্ট করিয়ে নিলেও প্রচীন বাংলার বিশ্বখ্যাত মসলিনের উত্তরাধিকারী জামদানী শাড়ী ও বস্ত্রের মূল মালিক যে বাংলাদেশ তা’ ঐতিহাসিকভাবেও প্রমাণিত।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উদারীকরণের লক্ষ্যে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের প্রক্রিয়া হিসেবে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ট্রেড রিলেটেড প্রপার্টি রাইটস (টিআরআইপিএস) চুক্তি এবং ১৯৯৯ সালের জিআই আইনের আওতায় সদস্য দেশগুলো তার দেশের ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয়, অসাধারণ ও স্বতন্ত্র পণ্যগুলোর পেটেন্ট সংরক্ষণ করতে পারবে। এই চুক্তির ২৭.৩(খ) ধারায় পৃথিবীর প্রাণ-প্রকৃতি প্রক্রিয়ার উপর পেটেন্ট করার বৈধ অধিকার রয়েছে। জামদানী, ফজলি আম, নকশি কাঁথা বা রসগোল্লার মত বাংলাদেশের সুন্দরবন, রয়েলবেঙ্গল টাইগার ও ইলিশ মাছের পেটেন্ট পেতেও ভারতের পক্ষ থেকে তদ্বির করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। জিআই আইনের শুরু থেকেই ভারত তার শত শত পণ্যের পেটেন্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এর মধ্যে অন্তত ৬৬টি পণ্যে বাংলাদেশ পেটেন্ট পাওয়ার দাবী রাখে। জামদানী বস্ত্র তারই অন্যতম। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক ঐতিহ্যবাহী ও ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য ছড়িয়ে আছে। এসব পণ্যের কোন কোনটি দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও রফতানী হচ্ছে এবং ব্যাপক বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। হাজার বছর ধরে বাংলাদেশে হাজার হাজার প্রজাতির ধান চাষ হয়, আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় বাসমতি ধানেরও অন্যতম দাবীদার বাংলাদেশ। ইতিপূর্বে বাসমতি ধানের পেটেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নামে নিবন্ধিত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তা’ চ্যালেঞ্জ করা হলে অবশেষে তাদের দাবীর পক্ষে জিআই স্বীকৃতি পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও দাবী জানাতে পারে। বাংলাদেশ শুধু জামদানী শাড়ীর স্বত্বই পায়নি, জামদানী শিল্পের ঐতিহ্যবাহী নকশা যে সব পণ্যের উপর প্রয়োগ করা হয় তার সব ক’টির স্বত্ব বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
জিআই পণ্যের স্বত্ব আদায় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পণ্যটি যে নির্দিষ্ট ভূখ-ে উদ্ভব ও তৈরী হয়েছে তার ঐতিহাসিক ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে হয়। আমাদের বিন্নিধানসহ অসংখ্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যম-িত ধান, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, রয়েলবেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, পদ্মার ইলিশ, নকশি কাঁথা, কুমিল্লার খদ্দর, রাজশাহীর সিল্ক, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম, বগুড়ার দই, বিভিন্ন জাতের আম, বাঁশ বেতের শিল্প, মাটি ও কাঁসার পাত্রসহ শত শত পণ্য ও প্রাণ-প্রকৃতি রয়েছে যা’ অনায়াসে জিআই পেটেন্ট পাওয়ার হকদার। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে কোন কিছু কারো জন্য থেমে থাকে না। বাংলাদেশের অনেক জিআই পণ্য ইতিমধ্যে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজের নামে নিবন্ধিত করে নিয়েছে। সঠিক প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এসব পণ্যের পেটেন্ট ফিরে পাওয়া অসম্ভব নয়। দেশের কৃষিবিদ ও পরিবেশবাদীরা অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও মূলত: সরকারের কার্যকর উদ্যোগের অভাবেই বাংলাদেশী জিআই পণ্যগুলো অন্যরা দখল করে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ‘ভৌগলিক নির্দেশক’ আইনের খসড়া ১৯৯৬ সাল থেকেই প্রক্রিয়াধীন থাকলেও দীর্ঘ প্রায় দুই দশকেও তা আইনে পরিণত না হওয়ায় এ বিষয়ে উদ্যোগগুলো এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ আছে। বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক যে সব পণ্যের জিআই সনদ ইতিমধ্যে ভারত নিয়েছে বা দাবী করেছে, সে সব পণ্যের জিআই সনদ পেতে জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে নিজস্ব মেধাস্বত্ব ও ভৌগলিক নির্দেশক ও জাতীয় ঐতিহ্যম-িত পণ্যের অধিকারের প্রশ্নে নিস্পৃহ থাকার কোন সুযোগ নেই। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রতিটি পণ্যের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য রয়েছে। ভবিষ্যতে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় প্রাণ-প্রকৃতি ও পণ্যসম্ভার বিশ্বের কাছে গর্বের সাথে তুলে ধরতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।