পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের হদিস পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা এর নাম দিয়েছে বি.১.১.৫২৯। এই ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার চেয়েও পাঁচ গুণ শক্তিশালী। নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে তারা বিশেষ সতর্কতা জারি করেছেন। এটি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সংক্রামক রোগবিষয়ক সংস্থা ইমপেরিয়াল ডিপার্টমেন্ট অব ইনফেকশাস ডিজিজের একজন ভাইরোলজিস্ট নতুন এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে খারাপ ধরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সেনটার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেছেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশনের ধারা অস্বাভাবিক এবং অনেক ভিন্ন। এর ৫০টি মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি স্পাইক প্রোটিন। ভাইরাসের যে অংশটি শরীরের কোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায়, নতুন ভ্যারিয়েন্টে তার ১০টি মিউটেশন রয়েছে। ডেল্টার মিউটেশন ছিল মাত্র ২টি। এর অর্থ হচ্ছে, করোনার মূল ধরণ অনুযায়ী যে টিকা তৈরি হয়েছে, তা নতুন ধরণে অকার্যকর হতে পারে। নিঃসন্দেহে এটি এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এজন্য ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য আফ্রিকার ৬টি দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, লেসোথো ও এসওয়াতিনি থেকে সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও কানাডায় লকডাউন দেয়া হয়েছে। এ বছরও ভারতে ভয়াবহ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেখা দেয়ায় দেশগুলো আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বাংলাদেশে যাতে ভারতীয় এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে না পারে এজন্য শুরুতেই সতর্ক করা হয়েছিল। তবে দেরি হয়ে যাওয়ায় সীমান্ত জেলাগুলোতে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে সারাদেশে বিস্তৃত হয়। বিশেষজ্ঞরা ভারতের সাথে সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সরকার কিছুটা বিলম্বে এ পদক্ষেপ নিলেও ততদিনে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এতে পুনরায় সারাদেশ লকডাউনের কবলে পড়ে। সাধারণ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, তাতে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর চিকিৎসার জন্য খুব বেশি সময় পাওয়া যেত না। সীমান্ত জেলা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আনতে আনতে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দেয়। ভারতে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ায় বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন শত শত রোগী মৃত্যুবরণ করে। করোনা সাধারণত প্রচ- ঠান্ডা আবহাওয়ায় বিস্তার লাভ করে। ইউরোপ-আমেরিকা শীত প্রধান দেশ হওয়ায় সেখানে এর দ্রুত সংক্রমণ ঘটে। আমাদের দেশে মার্চ-এপ্রিলে এর বিস্তারের ট্রেন্ড রয়েছে। গত দুই বছরে তা পরিলক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নগামী। ইতোমধ্যে ভারতের ৫টি রাজ্যে নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, হংকং, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বতসোয়ানা থেকে আগতদের মাধ্যমে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটেছে। এই তিন দেশ থেকে পর্যটকদের আগমণের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ভারতের এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ এবং মানুষের ব্যাপক যাতায়াত থাকায়, নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
করোনা প্রতি বছরই নতুন ও ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। যে টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং প্রয়োগ করা হচ্ছে, এ টিকা নতুন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে অকার্যকর হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কাজেই করোনার নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া। আমাদেরকে এখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের গতিবিধির ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে। যেসব দেশে এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটছে, সেসব দেশের নাগরিকদের দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। সীমান্ত এবং বিমানবন্দরগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। সংক্রমিত একজনও যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। দেশে কারো মধ্যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবেলায় যে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে, তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। নতুন আশংকার প্রেক্ষিতে তাকে আরও সচেতন এবং সক্রিয় হতে হবে। আমরা আশা করব, মন্ত্রণালয় তার এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কৃতিত্বের পরিচয় দেবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।