পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ধুলো-দূষণে বিপর্যস্ত নগরবাসির জন্য একটু প্রশান্তি ও দম নেবার স্থান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ হিসেবেই প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। যেখানে একেকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদাররা বার বার সময় ও প্রকল্পব্যয় বাড়িয়ে তোলেন, সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন প্রাক্কলিত বাজেটে নির্ধারিত সময়ের আগেই নয়নাভিরাম এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সব মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছিল। দু:খের বিষয়, অব্যবস্থাপনার কারণে বছর না ঘুরতেই হাতিরঝিলের দূষণ, সামগ্রিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে নগরবাসির মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দেয়। ইতিমধ্যে উচ্চ আদালত থেকে হাতিরঝিলের দূষণ রোধ ও পরিবেশ রক্ষায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে। গত জুনমাসে হাইকোর্টের দেয়া এক রুলে রাজধানীর হাতিরঝিল বেগুরবাড়ি প্রকল্পকে একটি পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি ঘোষণা করে প্রকল্প এলাকা থেকে সব ধরণের অবৈধ স্থাপনা ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করাসহ ১০ টি নির্দেশনা দেয় হয়েছিল। দুই মাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের কথাও বলা হয়েছিল। হাতিরঝিল- বেগুনবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পের লে-আউট প্লানের বাইরে নানা ধরণের বাণিজ্যিক স্থাপনা ও কার্যক্রম বৃদ্ধির ফলে ক্রমাবনতিশীল পরিবেশ রক্ষাং ২০১৮ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের করা রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট এসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়, হাতিরঝিলের পানিতে এখন ময়লার স্তুপ ও উৎকট গন্ধ। সৌন্দর্য বর্ধণের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়িত প্রকল্প এলাকাটির নিম্নাঞ্চল ও জলাশয় এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। মূলত বৃষ্টির পানি ধারণের জন্য হাতিরঝিলকে সংস্কার করা হলেও সেখানে এখন ওয়াসার স্যুয়ারেজের ময়লাপানি সরাসরি ফেলা হচ্ছে বলে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ইকবাল হাবিব জানিয়েছেন। ওয়াসার ময়লাপানিকে সহনীয় দুর্গন্ধমুক্ত করতে ২০১৯ সালে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে পানি পরিশোধন প্লান্ট স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ এক বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাসে তা শেষ হলেও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ অধিকাংশ প্রকল্পের মত হাতিরঝিলের পানিশোধন প্রকল্পের অর্ধকোটি টাকা পানিতেই গেছে। শোনা যাচ্ছে, বাজেট কম থাকায় প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। বাড়তি অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নতুন প্রকল্প গ্রহণের কথাও বলা হচ্ছে। প্রকল্প গ্রহণের আগে এর সম্ভাব্যতা যাচাইসহ খুঁটিনাটি সামগ্রিক বিষয় বিবেচিত হওয়ার কথা থাকলেও পঞ্চাশ লাখ টাকার পানি পরিশোধন প্লান্ট বাস্তবায়নের পর তা ন্যুনতম ভ’মিকা পালনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
দেশে উন্নয়নের গলাবাজি অনেক হয়েছে এবং হচ্ছে। এলডিসি থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিনত হওয়ার অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানের দিকে জোর দেয়া হলেও দেশকে বাসযোগ্য রাখার কোনো কার্যকর পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এবারের ২৬তম কপ বা জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করেছেন। জলবায়ু সম্মেলন ইনিশিয়েটিভে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বের ভ’মিকা পালন করলেও আমাদের রাজধানী শহরটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পাচ্ছে। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদী ও খাল দূষণ, ভরাট ও দখলবাজি বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এখনো ইঁদুর-বেড়াল খেলা করে চলেছে। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পের মত প্রশংসনীয় উদ্যোগের লক্ষ্যও এখন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যর্থ হতে চলেছে। একইভাবে অভিজাত ও ক’টনৈতিক জোন হিসেবে খ্যাত গুলশান-বারিধারা লেকের দূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হাতিরঝিল- বেগুনবাড়ি প্রকল্পের লে-আউট প্ল্যানের বাইরের সব বাণিজ্যিক স্থাপনা সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্টের নির্দশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি এই দৃষ্টিনন্দন স্থানটি পানি দূষণ ও বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রকল্পসহ ঢাকার পরিবেশ ও নাগরিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট সব প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।