Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তৃণমূলে বিশৃঙ্খলা বাড়ছেই

নৌকার মনোনয়নে দৌড়ঝাপ

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ৪র্থ ধাপেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তৃণমূল সংগঠনে বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলেছে। মনোনয়ন পেতে চলছে অসম প্রতিযোগীতা, কাদাছোড়াছুড়ি। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। নৌকার মনোনয়ন চাইলেও অনেক প্রার্থী নৌকার বিরুদ্ধেও কথা বলছেন। ফলে সহিংসতা, মারামারি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। এবারের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় মারা গেছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করায় বিশৃঙ্খলা কমছে না। এদিকে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন প্রার্থীরা। দলের মনোনয়নের জন্য এমপিরা দলের সভাপতির কাছে ডিও লেটার দিচ্ছেন। পছন্দমত প্রার্থী না পেলে আবার নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীও দাড় করাচ্ছেন। এছাড়া ৪র্থ ধাপের নির্বাচনেও দলের সাধারণ সম্পাদকের হুশিয়ারি অমান্য করেই বিতর্কিতদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন জেলা-উপজেলার নেতারা। এ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগও কম নয়।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, প্রার্থী পছন্দ না হলেই মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলা হয়। বলা হয় প্রার্থী রাজাকার পরিবারের সদস্য। কিন্তু এসবের প্রমাণ কেউ দেন না। যেসব অভিযোগের প্রমাণ থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়। সহিংসতার বিষয়ে নেতারা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের বিরোধ মারামারি দলীয় কারণে খুব কম, ব্যক্তিগত রেশারেশির কারণে বেশি সহিংসতা হচ্ছে। এ নিয়ে সাংগঠনিকভাবে পদক্ষেপ নিলেও তা কমার সুযোগ কম। প্রশাসনকে কঠোর হলেও সহিংসতা কমছে না।
বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলছেন, কোথায় কার মাধ্যমে বিতর্কিতরা নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছে তা সবই জানে কেন্দ্র। কিন্তু এমপি ও প্রভাবশালীরা তাদের ম্যানেজ করে নেন। অনেক সময় অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারাও কথা বলেন না কারণ বিতর্কিত প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীর পিছনে এমন একজন থাকেন যিনি প্রভাবশালী এবং সবার পরিচিত মুখ। আর এলাকায় মারামারির কারণ প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রেই চুপচাপ থাকে; এমপিদের কারণে একটি পক্ষকে সুযোগ সুবিধা বেশি দেয়, অপর পক্ষকে চাপে রাখে। ফলে সবার জন্য সমান সুবিধা না থাকায় নির্বাচন সহিংসতায় রুপ নেয়। এছাড়া মেম্বার প্রার্থীদের নিয়ে এক বাড়ি অন্য বাড়ির সাথে মারামারি লেগে যাচ্ছে। যা একদমই নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগি ইউনিয়নে চলছে উত্তেজনা। বর্তমান চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান নৌকার বিরুদ্ধে ও দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় এ উত্তেজনা। তিনি সম্প্রতি এক বৈঠকে বলেছেন, ‘তার পদের দরকার নেই, নৌকার মনোনয়নও দরকার নেই। দরকার চেয়ারম্যান থাকা।’ এ নিয়ে তাকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এদিকে দলের মনোনয়নের জন্য তৃণমূল থেকে পাঠানো নামের তালিকায় বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিতর্কিতদের নাম থাকছে। এ নিয়ে তৃণমূলের তালিকা বিশেষভাবে যাচাই বাছাই করছে কেন্দ্রীয় সংগঠন।
নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এলাকায় অবস্থান করে নিজের ছেলের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন পবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকু। এ নিয়ে এই এলাকায় চলছে উত্তেজনা। বেড়া পৌর নির্বাচনে দলের মনোনিত প্রার্থী টুকুর ছেলে আসিফ শামস রঞ্জন এবং ছেলের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী হলেন এই পৌরসভার দীর্ঘদিনের মেয়র এবং শামসুল হক টুকুর আপন ছোট ভাই আব্দুল বাতেন। আগামী ২৮ নভেম্বর পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুকে নিজ এলাকায় অবস্থান না করতে পাবনা জেলা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে চিঠি দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের চিঠিকে আমলে না নিয়ে সাংসদ টুকু এলাকায় অবস্থান করছেন এবং নিয়মিত নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন বলে অভিযোগ আছে। গত ১৪ নভেম্বর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে শামসুল হক টুকুকে নিজ এলাকায় অবস্থান না করার অনুরোধ করা হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে শামসুল হক টুকুকে পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৫ এর বিধি ২২ (১) ও (২) অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না। নির্বাচন প্রভাবমুক্তভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তথা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান না করার জন্য আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো। কিন্তু এরপরও এমপি টুকু বেড়া পৌর এলাকায় একটি সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন এবং তার ছেলের জন্য ভোট চান।
এ নিয়ে পাবনা জেলা নির্বাচন কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে আমরা আরো কিছু পদক্ষেপ নিব। আশা করি নির্বাচনী পরিবেশ সুন্দর থাকবে এবং কোন ধরণের অভিযোগ থাকবে না।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ