Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাল্টে যাবে গ্রামীণ জীবন

‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে কাজ করছে এলজিইডি ২৮ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হচ্ছে সব উপজেলার প্রকল্প কর্মপরিকল্পনা শুরু

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৭ এএম

শহরের সব নাগরিক সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সকল উপজেলার উন্নয়নে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রকল্প অনুমোদনের কর্মপরিকল্পনা শুরু করছে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের কয়েকটি জেলার ১৫টি গ্রামকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে মডেল গ্রামে ইতোমধ্যে ২৮ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। দেশজুড়ে প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র গড়ে তোলার এ প্রকল্প পরিকল্পনাধীন পর্যায়ে রয়েছে। এলজিইডির পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি (আরডিএ) বগুড়াসহ বিভিন্ন সংস্থা এ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে বলে জানা গেছে। সরকারের মডেল গ্রাম প্রকল্প গ্রামীণ জনপদের মানুষের মৌলিক সরকারি সুবিধা পাওয়ার সহায়ক হতে পারে এবং এটি শহরের ওপর চাপ কমাবে বলে মনে বরছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মডেল গ্রাম স্থাপনে কাজ করবে। তবে মডেল গ্রাম স্থাপনে নেতৃত্ব দেবে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনস্থ সংস্থা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এলজিইডির কর্মকর্তারা জানান, শিগগিরি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে পাইলট গ্রামের তালিকা চূড়ান্ত হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এ কমিটির প্রধান। এরপরই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা মডেল পাইলট গ্রাম বাস্তবায়নে কাজ শুরু করবে। এর মধ্যে অনেক সংস্থা তাদের প্রস্তুতিমূলক কাজও করে যাচ্ছে। অনেক সংস্থা এর মধ্যেই প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে বলেও জানান তারা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা ইনকিলাবকে বলেন, আমার গ্রাম আমার শহর বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলো শহরের সব নাগরিক সুবিধা গ্রামে নিয়ে যাওয়া। এর জন্য সামগ্রিক চিন্তা করতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে আমাদের ধাপে ধাপে যেতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ শহরের সুবিধা আগে জেলা পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, শহরের সব আধুনিক সুবিধা গ্রামে সম্প্রসারণ করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমীক্ষার কাজ করছে। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে একটি মহাপরিকল্পনাও প্রণয়নের কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধ অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’Ñ এ স্লোগানকে সামনে রেখে গত নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, দপ্তরগুলোকে ইশতেহারের আলোকে বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান ইনকিলাবকে বলেন, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়নে কাজ চলছে। সব এলাকায় মডেল গ্রাম বাস্তবায়ন করা গেলে গ্রামীণ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক সহজ হবে। অর্থনৈতিক কমকাণ্ডের বাইরে সামাজিক ও সংস্কৃতি বিষয়গুলোও মডেল গ্রামে গুরুত্ব পাবে। এ জন্য আগামীতে নতুন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পের পরিচালক আবুল মনজুর মো. সাদেক ইনকিলাবকে বলেন, আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্পে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আগামী মাসে শেষ হচ্ছে। ১৫টি গ্রামকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেয়া হয়েছে। আগামীতে সারাদেশের জন্য নতুন পরিকল্পনা শুরু করা হয়েছে। এ নিয়ে নতুন একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০৪১ সালে দেশের জনসংখ্যা ২২ কোটিতে পৌঁছতে পারে। দেশের বর্তমানে ০.৫ থেকে ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি কমছে। এর বড় একটি অংশ বসতভিটায় রূপান্তরিত হচ্ছে। কৃষিজমি হ্রাসের কারণে এ হার অব্যাহত থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত এবং গ্রামের জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। তাই জনবহুল গ্রামগুলোতে সব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে বহুতল ভবনের সমন্বয়ে একটি কম্প্যাক্ট টাউনশিপ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হবে। এর ফলে সড়ক বিদ্যুৎ, অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। গ্রামগুলো সহজে বন্যামুক্ত হবে। এ ধরনের আদর্শ গ্রামে বিদ্যালয়, হাসপাতাল, ক্লিনিক থাকলে সহজে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যাবে। কৃষিজমি বাঁচবে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশ বাসযোগ্য থাকবে। এ কারণে গ্রামীণ গৃহায়ন বা কম্প্যাক্ট হাউজিংয়ের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে সব উপজেলার জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রকল্প অনুমোদনের কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

‘আমার গ্রাম আমার শহর’ এ মেগা প্রকল্পের প্রণীত কর্মপরিকল্পনার খসড়াতে সড়ক যোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগসহ টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মতো অনেকগুলো লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
বিশাল এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ১৫টি গ্রামকে পাইলট মডেল গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। পাইলট মডেল গ্রাম বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতায় দেশের অন্য গ্রামগুলোতে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণ কাজ সহজ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। ১৫টি মডেল গ্রামের ৮টি দেশের আটটি বিভাগে গড়ে তোলা হবে। এছাড়া হাওর, উপকূলীয় এলাকা, পাহাড়ি এলাকা, চর এলাকা, বরেন্দ্র অঞ্চল, বিল এলাকা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশে একটি করে বাকি সাতটি গ্রামকে মডেল গ্রামে রূপান্তর করা হবে। বিশেষ এসব অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন বেশ কঠিন। আর এসব এলাকায় মডেল গ্রাম বাস্তবায়ন করা গেলে গ্রামীণ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক সহজ হবে। অর্থনৈতিক কমকাণ্ডের বাইরে সামাজিক ও সংস্কৃতি বিষয়গুলোও মডেল গ্রামে গুরুত্ব পাবে।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মডেল গ্রামে যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানি, তথ্য প্রযুক্তি সুবিধা ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদনের ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সুবিধা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সব সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে।

আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ইতোমধ্যে ১১৬টি নতুন প্রকল্প প্রস্তাব করছে। এ কর্মযজ্ঞের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিস্তারিত সমীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে যার ভিত্তিতে আরো বেশ কিছু নতুন প্রকল্প নেয়া হবে। সমীক্ষাগুলো শেষ হলে চূড়ান্ত ব্যয় জানানো হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চলমান ২৩৭ প্রকল্পও ‘আমার গ্রাম আমার শহরে’র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় ওই প্রকল্পগুলোকে এ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, শহরের সুবিধা গ্রামে সম্প্রসারণের জন্য ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩৬টি গবষেণা করছে এলজিইডি। আগামী জানুয়ারিতে সমীক্ষার কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের এ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শহরের সুবিধা গ্রামে সম্প্রসারণ করা হলে এবং গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা গেলে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি গ্রামে হালকা শিল্পের সম্ভাবনাও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে গ্রামের মানুষের শহরমুখিতা কমবে বলে আশা করছে সরকার।



 

Show all comments
  • Akhter Hossain Raju ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৪৪ এএম says : 0
    Good
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ataur Rahman ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ৫:১০ এএম says : 0
    Thank,s
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১১:৩৪ এএম says : 0
    সরকারের মডেল গ্রাম প্রকল্প গ্রামীণ জনপদের মানুষের মৌলিক সরকারি সুবিধা পাওয়ার সহায়ক হতে পারে এবং এটি শহরের ওপর চাপ কমাবে
    Total Reply(0) Reply
  • মাজহারুল ইসলাম ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১১:৩৭ এএম says : 0
    কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ শহরের সুবিধা আগে জেলা পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জহির ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১১:৩৮ এএম says : 0
    পরিকল্পনা খুবই ভালো। আশা করি এটি যথাযথভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে
    Total Reply(0) Reply
  • কৌশিক সরকার ১৮ নভেম্বর, ২০২১, ১১:৪১ এএম says : 0
    সব এলাকায় মডেল গ্রাম বাস্তবায়ন করা গেলে গ্রামীণ উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক সহজ হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এলজিইডি

২০ মার্চ, ২০২২
১০ নভেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ