পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বহু বছর ধরেই দেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরি ফসল পাটের দুর্দিন চলছে। ‘সোনালী আঁশ’ খ্যাত এই ফসলটি এক সময় প্রধানতম রফতানি পণ্য ছিল। বিশ্বব্যাপী পাটের ব্যাপক চাহিদা ছিল। পাটকল বন্ধসহ নানা অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে এ শিল্পটি এখন করুণ দশায় উপনীত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে লোকসানের অজুহাতে সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লোকসান গুণতে থাকা ২৫টি পাটকল সরকার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এর মধ্যেও পাট চাষীরা দমে যায়নি। সঠিক দাম না পাওয়া সত্তে¡ও হাড়ভাঙ্গা খাটুনির মাধ্যমে তারা পাট উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। আশার কথা হচ্ছে, সরকার পাটকলগুলো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন অনুযায়ী, পাটকলগুলো চালু করার লক্ষ্যে সেগুলো বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত এপ্রিলে বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) সরকারি পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে। ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পাটকল ইজারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং আবেদন করেছে। আবেদন যাচাই-বাছাই করে পাঁচটি পাটকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়ার জন্য চূড়ান্ত করেছে বিজেএমসি। এতে সম্ভাবনাময় পাটশিল্পে যেমন গতি আসবে, তেমনি খাতটি হয়ে উঠবে অন্যতম প্রধান রফতানি খাত।
এক সময় বিশ্বে পাটশিল্পের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হতো। নারায়ণগঞ্জকে বলা হতো প্রাচ্যের ডান্ডি। বিশ্বে মোট পাট উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হতো বাংলাদেশে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল ছিল আদমজী জুট মিল। দেশের এক নম্বর রফতানি খাত গার্মেন্ট এবং জনশক্তি যেমন এখন সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, তেমনি পাটের সুদিনে এ খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। দুঃখের বিষয়, আমাদের এই অপার সম্ভাবনার খাতটি ধরে রাখা যায়নি। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, নেতৃত্বের ব্যর্থতা, ভারতের ষড়যন্ত্র, আইএমএফ’র উপর অধিক নির্ভরশীলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে শিল্পটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। অথচ পাট খাত বিকাশের সকল ধরনের স্থাপনাসহ কি নেই! বিজেএমসি’র হিসাবে, শুধু সরকারি পাটকলের মোট সম্পদের পরিমান ২৫ হাজার ৩৫২.৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থায়ী সম্পদ ১৪ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। স্থায়ী সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ভূমি, ভূমি উন্নয়ন, দালানকোঠা ও অন্যান্য স্থাপনা, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, পরিবহন, মোটরযানসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি। অর্থাৎ পাটশিল্পকে জাগিয়ে তোলার জন্য স্থাপনাগতসহ যত ধরনের সুবিধা প্রয়োজন, তার সবই রয়েছে। শুধু কৃষকের উৎপাদিত পাট কিনে তা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রফতানির উদ্যোগ নিলেই খাতটি দাঁড়িয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারি পাটকলগুলো নিজের দক্ষতা উন্নয়ন ও পণ্য বৈচিত্রায়ণ করতে না পারায় বছরের পর বছর ধরে লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে। এক্ষেত্রে যথাযথ দৃষ্টি দিয়ে উন্নয়ন ঘটানো গেলে শিল্পটি দ্রæত অন্যতম প্রধান রফতানি খাতে পরিণত হবে। বিশ্বে এখন পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে পাটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাট ব্যবহার করে উন্নত বিশ্বে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং উপকরণও তৈরি করছে। এছাড়া পাটের তৈরি পণ্যের চাহিদা ব্যাপকহারে ব্যবহার করছে। উন্নত বিশ্বের এই চাহিদা পূরণে আমাদের পাটশিল্প ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যে ঢাকাস্থ সউদী রাষ্ট্রদূত ইসসা ইউসেফ ইসসা আল দুহাআলান বিজেএমসি’র বন্ধ হওয়া পাটকলগুলো চালু করে পাটপণ্য উৎপাদনে সউদী আরবের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পাটশিল্পে সউদী বিনিয়োগের এই আগ্রহ শিল্পটির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। যথাযথ উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে পাটশিল্পের সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে পারলে উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশও বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠবে। সরকার ইতোমধ্যে পাটকলগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ায় অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাদের এই আগ্রহকে ধরে রাখার জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া প্রয়োজন, সরকারকে তা দিতে হবে।
করোনা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির এই দুর্দশা কাটাতে দেশের সম্ভাবনাময় সব খাতের দিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেই উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে পাটখাতকে স্বল্প সময়ে উন্নত করার সম্ভাবনা প্রবল। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ১২৯টি জুটি মিল রয়েছে। বিজেএমসি সরকারি পাটকলগুলো চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো চালু হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। পাটের রফতানি বৃদ্ধি পাবে। বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে। ইতোমধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটপণ্য রফতানি করা হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এ থেকে বোঝা যায়, যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিলে পাটের রফতানি আরও বহু গুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। পোশাক শিল্পের মতো পাটখাতও প্রথম সারির রফতানি শিল্পে পরিণত হবে। সরকারকে শুধু সরকারি পাটকলোর দিকে নজর দিলে হবে না, বেসরকারি পাটকলগুলোও যাতে সচল থাকে এ ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। এ শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিজেএমসিকে অধিক কর্মতৎপর হয়ে উঠতে হবে। পাটশিল্পকে রফতানির অন্যতম খাতে পরিণত করতে পাটচাষীদেরও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তারা যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, অধিক উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং লাভবান হতে পারে, এ ব্যাপারে উৎসাহমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।