বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী পাঁচ নম্বরে রয়েছে। এই ইউনিয়ন নিয়ে উপজেলার সর্বত্রই এখন আলোচনায় মুখর। সচেতন ভোটারদের মতে আওয়ামীলীগ-বিএনপির থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তৃতীয় শক্তিকেই খোঁজছে মানুষ। এই দুইটি দল একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মানুষের জানামালের নিরাপত্তা ও সমাজের সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এরা ব্যার্থ।তাই ভাল লোক তথা আল্লাহওয়ালা ইমানদার আলেমদের নেতৃত্ব চাচ্ছেন মানুষ। তারই প্রমাণ দিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের মানুষ। শত প্রতিকূল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ভোটাররা নানা হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে হাতপাখা প্রতীকে ভোট দিয়ে প্রমাণ করলেন,ইসলামী আন্দোলন ও হাতপাখা তাদের আস্থার প্রতিক বা ঠিকানা।চরকাদিরা ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডের ১০ টি ভোট কেন্দ্র গড়ে প্রায় ৭৫ পার্সেন্ট ভোট পড়েছে।ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারনে বহিরাগত লোকজন ছিটকে পড়েন। শতভাগ ফেয়ার নির্বাচন উপভোগ করলেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগরবাসী। আলোচিত এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম সাগর একটি কেন্দ্রেও জিততে পারেননি। ৯টি ওয়ার্ডের ১০টি ভোট কেন্দ্রেই তিনি হেরেছেন। আর বিএনপি সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ১৯ বছরের চেয়ারম্যান হোসেন হাওলাদার পাঁচ নম্বরে গিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন। নৌকার প্রার্থী,দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এমন পরাজয়ের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর এমন ভরাডুবি নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।ভোটের ফলাফল দেখে সচেতন মহল মনে করেন,বিএনপি জনগন থেকে সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ হাতপাখা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ২০১৬ সালে নৌকার প্রার্থী আশ্রাফ উদ্দীন রাজুকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হন।এতে ঐ ইউনিয়নে জনগনের সাথে তাদের একটা গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ। তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আশ্রাফ উদ্দিন রাজন রাজু (মোটরসাইকেল প্রতীক) পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৯৭ ভোট। অন্যদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল ইসলাম সাগর হয়েছেন তৃতীয়। তিনি পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৫১৩ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইব্রাহিম বাবুল মোল্লা চশমা প্রতিক নিয়ে পেয়েছে ১১ হাজার ৪২ ভোট। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হোসেন হাওলাদার আনারস প্রতিক নিয়ে পেয়েছে ১ হাজার ৬৫ ভোট।এতে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীক এক নম্বর,আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোটরসাইকেল দুই নম্বর,নৌকা প্রতিক তিন নম্বর, স্বতন্ত্র প্রার্থী চার নম্বর ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী পাঁচ নম্বরে অবস্থান করেন।
কেন্দ্র ভিত্তিক ৯টি ওয়ার্ডের নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়,৭ টি ওয়ার্ডে হাতপাখার প্রার্থী মাওলানা খালেদ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ও ৩ টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন রাজন রাজু বিজয়ী হয়েছেন। আর নৌকা ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী কোন কেন্দ্রে পাশ করাতো দূরের কথা লজ্জাজনক ভরাডুবি নিয়ে পরাজিত হন।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ পীর সাহেব কমলনগর বলেন,
মানুষ দুই দলেরই শাসন দেখেছে।গত ৫ বছর জনগন ইসলামী আন্দোলনের শাসন দেখেছে। চুরি-ডাকাতি-খুন-ধর্ষণ-হানাহানি-মারামারি- খুনখারাবি ও রাহাজানি মুক্ত একটি ইউনিয়নের নাম চরকাদিরা। চরকাদিরার মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়। তাই আমার শান্তি প্রিয় এলাকাবাসী ইসলামের পক্ষে,মানবতার পক্ষে ও ন্যায়ের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।
এ বিষয়ে চরকাদিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম সাগর বলেন,উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কারণেই আমি হেরে গেছি। তারা ষড়যন্ত্র করে নৌকাকে ডুবিয়ে দিয়েছে।
নৌকার এমন পরাজয়ের ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার দেওয়া পোস্টকে সমর্থন করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীরা।
তবে কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন মাস্টার বলেছেন,নৌকাকে বিজয়ী করতে তারা যা কিছু করণীয় সবই করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের কোনো ত্রুটি ছিল না। স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী বিদ্রোহীর পক্ষে যাওয়াতে ক্ষতি হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করা হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ভঙের দায়ে বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন রাজন রাজু ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডালিম কুমার দাস শ্রীপদকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।