টনসিল এক ধরনের লিমফয়েড টিস্যু। মানবদেহে গলার ভেতরে দুইপাশে একজোড়া টনসিল থাকে। কোনো প্রকার প্রদাহ বা ইনফেকশন হলে আমরা এটাকে টনসিলাইটিস বলি। টনসিলাইটিস একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। টনসিল ইনফেকশন সাধারণত ৩ হতে ১২ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রে যে একেবারেই হয় না তাও নয়।
৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় টনসিল ইনফেকশনের জন্য ভাইরাস দায়ী। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের জন্য ও টনসিলাইটিস হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রোপ্টোকক্কাস দিয়ে হয়। অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া দিয়েও টনসিলাইটিস হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বারবার ঠা-া সর্দি লাগা, অপুষ্টিহীনতা, পরিবেশ দূষণ, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপর্যাপ্তও এই ইনফেকশনের কারণ হতে পারে।
টনসিল ইনফেকশন হলে কীভাবে বুঝবেনÑ
ক্স জ্বর হতে পারে ১০৩-১০৪০ ফারেনহাইট
ক্স গায়েব্যথা, মাথাব্যথা, কানে ব্যথা হতে পারে।
ক্স গলাব্যথা ও খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে।
ক্স বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখ দিয়ে লালা পড়তে দেখা যায়।
এরকম সমস্যা যদি হয় আমরা এটাকে তীব্র ইনফেকশন বলি। চিকিৎসকের উপদেশ অনুযায়ী নিয়মিতভাবে এবং সঠিক সময়ে ঔষধ সেবন করলে এ সমস্যা হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সাধারণত এন্টিবায়োটিক, মাউথ ওয়াশ, ব্যথার ঔষধ, প্রচুর পরিমাণ পানি গ্রহণের মাধ্যমে এই ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। কেউ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন হয়। দীর্ঘমেয়াদি টনসিল ইনফেকশন যদি বছরে ৪-৫ বার পরপর ২ বছর হয় তবে টনসিল অপারেশন করিয়ে নেয়া ভালো। তা না হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নিম্নোক্ত সমস্যা হতে পারেÑ
ক্স টনসিলে ফোঁড়া হতে পারে।
ক্স টনসিলের চারপাশে ইনফেকশন ছড়িয়ে যেতে পারে।
ক্স কানে ইনফেকশন হতে পারে।
ক্স বাতজ্বর বা রিউমেটিক ফিবার হতে পারে।
ক্স শ্বাসনালী ফুলে যেতে পারে এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে।
ক্স জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্স রক্তের মাধ্যমে জীবাণু কিডনিতে ছড়িয়ে গেলে সেখানেও ইনফেকশন হতে পারে।
তাই এধরনের সমস্যা হলে অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো, ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। যদি ঔষধে এ সমস্যার সমাধান না হয় তবে টনসিল অপারেশন করে ফেললে ভালো হয়। আমাদের দেশে নিয়মিত টনসিল অপারেশন হচ্ছে। এই অপারেশন অত্যন্ত নিরাপদ এবং ফলপ্রসূ। আজকাল আধুনিক আলট্রাসনিক পদ্ধতিতে রক্তপাতহীন সেলাইবিহীন টনসিল অপারেশন করা হয়। যা বাংলাদেশে উক্ত প্রবন্ধের লেখক নিয়মিত করছেন। এই অপারেশন সকালে করে বিকালে রোগী বাসায় যেতে পারে। অপারেশন পরপরই রোগী মুখে খেতে পারে।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,
রোড ৮, ধানমন্ডি, ঢাকা, ০১৯১৯ ২২২ ১৮২
ই-মেইল : ধষধসমরৎ.পযড়ফিযঁৎু০৭@মসধরষ.পড়স