Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিলাদের হাড়ের ক্ষয় বেশি হয়

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাড়ের ভেতরের ঘনত্ব বাড়া কমা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ২০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ভেতরের গঠন ও ক্ষয় একই গতিতে চলতে থাকে। বয়স ৪০ বছর পার হলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হারের ক্ষয়ের মাত্রা একটু একটু করে বাড়তে থাকে। পুরুষের তুলনায় মহিলারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপজ বা ঋতু¯্রাব বন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোপেন নামক হরমোন কমে যায় ফলে হারের ক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে যায়।
কী কী কারণে মহিলাদের হাড় ক্ষয় বেশি হয়?
 মেনোপজ বা ঋতু¯্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।
 পর্যাপ্ত পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম না করা।
 পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গ্রহণ না করা।
 শরীরে ওজন (বিএমআই অনুযায়ী অতিরিক্ত কম হলে)।
 অতিরিক্ত ধূমপান বা অ্যালকোহল পান করলে।
 তাছাড়া কিছু কিছু অসুখে হাড় ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যেমন 
 শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে
 শরীরে থাইরয়েড বা প্যারালাইরয়েড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে।
 যে রোগে খাবার শোষণ ব্যাহত হয় যেমনÑ সিলিয়াজ ডিভিজ, ক্রনস ডিজিজ।
 যে সমস্ত রোগে দীর্ঘদিন শুয়ে থাকতে হয়, হাটাচলা করতে পারে না, সেক্ষেত্রে হারের ক্ষয় বেশি হয়। যেমনÑ ব্রেন স্ট্রোক, এমআইভি, স্তন ক্যান্সার ইত্যাদি
তাছাড়া কিছু ঔষধ ও হারের ক্ষয় বাড়িয়ে দেয়। যেমনÑ কটিকেস্টেরয়েড, খিচুনি বিরোধী ঔষধ.
ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ।
হাড় ক্ষয়ের লক্ষণ কী?
যেহেতু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হাড় ক্ষয় একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া তাই প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। কিন্তু হাড়ের ভেতরের উপাদান বা ত্বক অধিক পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। যেমনÑ সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়। বেশিক্ষণ হাঁটাহাঁটি বা চলাচল করতে কষ্ট হয়। শরীরে ভারসাম্য কমে যায়। যার ফলে পড়ে গিয়ে হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আত্মবিশ^াস বা মনোবল কমে যায়। এই কারণে মাহিলাদের হিপ ফ্যাকচার বেশি দেখা যায়।
হাড় ক্ষয় নির্ণয় করবেন কীভাবে?
হাড়ের ক্ষয় রোগ সহজেই নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসক রোগীর ক্লিনিকান উপসর্গ পর্যবেক্ষণ, রোগীর বয়স, পূর্ববর্তী রোগ ও ওষুধের হাড়ের এক্স-রে ও বিএসডি (বোন মিনারেল ডেনসিটি) পরীক্ষার মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় করা যায়।
হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করণীয় :
১। সুষম খাদ্যাভাস অনুসরণ করা। যেমনÑ
- প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা। যেমনÑ ননী তোলা দুধ, কম ¯েœহজাতীয় দই, কড লিভার ওয়েল ইত্যাদি
২। নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করা।
৩। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।
৪। পতন বা পড়ে যাওয়া বোধ করুন।
৫। ৫০-এর ঊর্ধŸ প্রত্যেক মহিলার হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
হাড় ক্ষয়ের চিকিৎসা :
চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার হাড়কে শক্তিশালী করে তোলা, হাড় ক্ষয়ের হার কমানো সর্বোপুরি হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমানো। এই চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহৃত হয়। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ
এলেন্ডানেট সোডিয়াম, রিমোড্রোনেট সোডিয়াম, ইবানড্রেনিক এসিড, জলিবিক এসিড, হরমোনের সমস্যা থাকলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সালিলেন্ট।
হার ক্ষয়ের চিকিৎসা না করলে পরিণতি :
হাড় ক্ষয় প্রাথমিক অবস্থায় তেমন উপসর্গ থাকে না, তখনই যন্ত্রণাদায়ক হয় যখন হাড়ে ফাটল ধরে বা হাড় ভেঙে যায়। হাড় ক্ষয়ের ফলে হাড়ের ঘনত্ব কষে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। যার ফলে সামান্য আঘাত লাগলে কিংবা পড়ে গেলে এমনকি দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গার হাড় ভেঙে যেতে পারে।
ডা: এম ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ।
চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট Ñ ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।
বাড়ি নং ১২/১, রোড নং- ৪/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবা : ০১৭৮৭-১০৬৭০২



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহিলাদের হাড়ের ক্ষয় বেশি হয়
আরও পড়ুন