Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কমলনগরে ইউপি নির্বাচনে বহিরাগত ক্যাডার- অস্ত্রধারী লোকজনে ভরপুর চরকাদিরা

হামলা-মারধর ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০২১, ১১:৩৮ এএম

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বহিরাগত ক্যাডার ও অস্ত্রধারী লোকজনে ভরপুর হয়ে গেছে চরকাদিরা ইউনিয়ন। হামলা-মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব ভূমিকায় আতংকিত ভোটাররা। সুস্থ নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়।

এর মধ্য নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে চরকাদিরায় আসেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ও সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন। নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম সাগরকে জেতাতে প্রত্যেক ওয়ার্ডে শান্তিবাহিনী গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ গোলাম ফারুক পিংকু। উপজেলার ফজুমিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী এক মতবিনিময় সভায় তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল আমিন মাস্টার ও রামগতি পৌরসভার মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন মেজুকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। সভায় গোলাম ফারুক পিংকু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা) প্রার্থী ও বতর্মান চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফল্লাহকে হুমকি দিয়ে বলেন,আপনি নাকি চরকাদিরা ইউনিয়নে নৌকার সমর্থকদের হাত-পা কেটে ফেলবেন,

ভেঙে দিবেন। আপনার এত ক্ষমতা এলো কোথথেকে? আপনার দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তো এত সাহস করে কথা বলে না। আপনি কি বাংলা ভাই হতে চান? এ সময় তিনি রামগতি ও কমলনগর উপজেলার যে সব ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে না ওই সব ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সহ সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের এনে চরকাদিরা ইউনিয়নের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে শান্তি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। তার এমন বক্তব্যে চরকাদিরা ইউনিয়নের নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে।ইতিমধ্যে রামগতি-কমলনগর উপজেলা যেসব ইউনিয়ন ভোট হচ্ছেনা,ঐ সব ইউনিয়নের বহিরাগত লোকজনে ভরপুর হয়ে গেছে চরকাদিরা ইউনিয়ন। সুত্র জানায়,ইতিমধ্যে রামগতি পৌরসভার মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন মেজু,চরআব্দুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন মন্জু,হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, তোরাবগন্জ ইউপি চেয়ারম্যান আশ্রাফুল জামান রাসেল,সাহেবেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার আবুল খায়ের,উপজেলা আঃলীগের সভাপতি মাস্টার নুরুল আমিন,আলেকজান্ডার এলাকার শরীফ উকিল ও উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক হাজিরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদুল্লাহ সহ বহিরাগত প্রায় হাজারের মত লোকজন কেন্দ্র ভিক্তিক মহড়া ও পাহারার দায়িত্ব নিয়ে বিরোধী প্রার্থীর লোকজনকে দমন পিড়নের পরিকল্পনা গ্রহন করেন। বিরোধী প্রার্থী ও তাদের লোকজনকে
প্রতিনিয়ত মারধর,নানা হুমকি-ধমকি প্রদান ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ,ভোটার ও কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ কেন্দ্র দখলের হুমকি দিয়ে আসছে তারা।এসব বহিরাগত অস্ত্রধারী লোকজনকে নির্বাচনের আগেই চরকাদিরা ইউনিয়ন থেকে বের করে দেওয়া না হলে সকল প্রার্থী একযোগে নির্বাচন ভয়কট করাসহ সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান এই প্রতিবেদককে।

গত শুক্রবার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ভুঁইয়া পাড়া এলাকায় নৌকার বহিরাগত লোকজন হাতপাখার ২ কর্মীকে মারধর করে তাদের পথসভা করতে দেয়নি। পথসভায় আগত লোকজনকে মারধর ও নানা হুমকি ধমকি দেন। গত শনিবার আবারো বটতলি-বাদামতলি ও চরবসু এলাকায় নৌকার কর্মিরা হাতপাখা ও মোটরসাইকেল প্রতিকের ২ কর্মিকে মারধর করেন।এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে কেন্দ্র না আসার ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। আচরণ বিধি লংঘন করে একের পর এক মোটরসাইকেল শোডাউন ও নানা হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এতে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরব ভূমিকাকে দায়ী করেন ভোটাররা। এমন উত্তপ্ত পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের মাঝে রয়েছে সুস্থ নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া নিয়ে নানা সংশয়।

ভোটাররা বলেন,সুস্থ নিরপেক্ষ নির্বাচন না দিতে পারলে এমন নির্বাচন করার কোন মানে হয়না? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে কোন লাভ হচ্ছেনা।নৌকার লোকজন যে ভাবে কেন্দ্র দখল করবে, ভোট কেটে নিবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে। তাতে মনে হয় লক্ষ্মীপুর ও কমলনগরে কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন নেই।অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে তারা জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

নৌকার মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন রাজন (রাজু)কে উদ্দেশ্য করে পিংকু বলেন, রাজু তুমি নৌকার মনোনয়ন চেয়েছো আমরা তোমাকে দিতে পারিনি। তাই বলে তুমি নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করতে পারো না।
তোমার এতো সাহস এলো কিভাবে? তুমি দ্রুত আমার সাথে দেখা করো।তোমাকে দলের গুরুত্বপূর্ণস্থানে নিয়ে যাবো। ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে তৎক্ষনাৎ প্রতিবাদ জানানো হয়। বর্তমানে ঐ এলাকায় টানটান উত্তেজনা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।হাতপাখা-নৌকা-মটরসাইকেল মার্কা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। শনিবার সন্ধায় ফজুমিয়ারহাট বাজারে নৌকা মার্কার সমর্থনে আয়োজিত এক পথসভায় হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আঃলীগের সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন নৌকার বাহিরে ভোট করা অন্য প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে বলেন,আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। ঐ দিন নৌকা মার্কা ছাড়া আর কোন মার্কা ও প্রার্থী থাকবেনা। শুধু মাত্র একটি মার্কায় ভোট হবে।তা হলো নৌকা।সকল কেন্দ্র আমরা দখল করে নৌকা মার্কার বিজয় ছিনিয়ে আনবো বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন।এতে চরকাদিরা ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ ও ভোটাররা নির্বাচন সুস্থ হওয়া নিয়ে রয়েছে আতংকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউপি নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ