Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষকের হয়রানি বন্ধ করা হোক

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। তবে যেসব প্রান্তিক কৃষকের দ্বারা এই বিপ্লব তাদের অনেকেই কিছু অতিউৎসাহী ব্যাংকারের কারণে ঘরছাড়া। গড়ে মাত্র ২০ হাজার টাকা ঋণের দায়ে তিন লাখ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হবার কারণে এদের মধ্যে প্রায় ২৪ হাজার কৃষক ঘরছাড়া। যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা তাদের অধিকাংশই নানা প্রাকৃতিক ও মানবঘটিত দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা না করার নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তা আমলে নিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। বিদ্যমান প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খালেদ কৃষকদের নামেমাত্র ঋণগুলো মাফ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বড় বড় অনেক ঋণও তো মওকুফ করে দেয়া হয়। বছরের পর বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করে হিসাব থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে সরকারের উচিত অসহায় কৃষকের বিষয়টি বিবেচনায় আনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বছরের সেপ্টেম্বরভিত্তিক খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারি ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের দায়ে মামলায় পড়েছেন ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫শ’ ৪৭ জন প্রান্তিক কৃষক। এই কৃষকদের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের পাওনা ৬শ’ ১৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় সারা দেশে ঘরছাড়া আছেন ২৩ হাজার ৭৮৫ জন কৃষক।
কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে নানা ধরনের খোড়া যুক্তি দেখিয়েছেন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কেউ বলেছেন, সরকারি দলের লোক বলে কি মামলা হবে না? কেউ বলছেন নিয়মের বাধ্যবাধকতা। আবার কেউ নানা অজুহাত তুলে ধরার চেষ্টা করছেন অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছোট ছোট এ ধরনের কৃষিঋণের বিপরীতে মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানায় না গিয়ে বরং ব্যাংকগুলোকে কৃষকদের কাছ থেকে নমনীয়ভাবে অর্থ আদায়ের পরামর্শ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর ফলে কৃষক হয়রানি কমে যাবে। বাস্তবে ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মানছে না। এটি কেন হচ্ছে বা হতে পারছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অথচ এ কথা সবাই জানে, সরকারি ব্যাংকগুলোর কোটি কোটি টাকা কতিপয় প্রভাবশালী এবং এক শ্রেণির ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় লুটপাট হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যবসার নামে দেশের বাইরে পাচার করেছে একটি সিন্ডিকেট। প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা করেছে কৃষি ব্যাংক। যে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাই করা হয়েছে কৃষকের উন্নতি তথা কৃষির উন্নয়নের জন্য সেই ব্যাংক কৃষকের সর্বনাশের কথা কিভাবে চিন্তা করতে পারে তা বোধগম্য নয়। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ব্যাংকের একশ্রেণির কর্মকর্তার অপকর্ম ঢাকতে কৃষকদের হয়রানির এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাধারণত ঋণ মওকুফের সাথে এক ধরনের তদবিরের সম্পর্ক রয়েছে। কৃষকদের পক্ষে সে ধরনের তদবির করার কেউ না থাকায় অথবা করতে না পারার কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞর মতে, অল্পকিছু টাকার জন্য প্রান্তিক কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা করার এই বাধ্যবাধকতা থেকে সরে আসা উচিত।
কৃষক দেশের অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে বিবেচিত। তাদের অবিশ্রাম পরিশ্রমের কারণেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে চলেছে। বান-বন্যা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই তারা এ কাজ করে যাচ্ছে। আজকের বাস্তবতা এটাই যে, আধুনিক কৃষিতে যে মাত্রায় খরচ হয় তা প্রান্তিক কোনো কৃষকের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। সে কারণে তার ব্যাংকের সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া নীতি অনুসরণ করবে, এটাই প্রত্যাশিত। কৃষকদের আলাদা ভাবার কোনো যুক্তি নেই। কৃষক উৎপাদন করে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। আমাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এখনো টিকে আছে এবং যতটুকু সাফল্য কৃষিখাতে তা এই কৃষকের জন্যই। দেশের জন্য নিবেদিত এই কৃষকরা যদি এতটুকু সহযোগিতা না পায় তাহলে তারা টিকে থাকবে কীভাবে? ঋণের কারণে যদি তাদের ঘর ছাড়াই হতে হয় তাহলে উৎপাদন করবে কারা? হয়রানির শিকার কৃষকরা যাতে ঘরে ফিরে আসতে পারে সেদিকে সংশ্লিষ্টরা নজর দেবেন, এটাই দেশবাসী প্রত্যাশা করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষকের হয়রানি বন্ধ করা হোক
আরও পড়ুন