বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল কোরআন নামের তাৎপর্য কী- তা আমরা আগের এই শিরোনামের এক আলোচনা থেকে কিছুটা উপলব্ধি করতে পেরেছি। যার খোলাসা হলো, ‘আল কোরআন’ নামটি একথাই ঘোষণা করছে, এই মহাগ্রন্থ মানব জাতির সর্বজনীন ‘পাঠ্যগ্রন্থ’, যা সকলের জন্য পাঠ্য ও পঠিতব্য এবং অধিক পরিমাণে ও বারবার পঠনীয়। এই নামের মধ্যে মক্কার কাফির-মুশরিকদের রদ রয়েছে। যারা বলত : তোমরা এই কোরআন শোনো না এবং তা পাঠকালে শোরগোল সৃষ্টি করো, যাতে তোমরা জয়ী হতে পার। (সূরা হা-মীম সিজদা : ২৬)।
কাফিরদের এই অপচেষ্টা সত্তে¡ও কোরআন নামকরণের মাঝে এই ইশারা রয়েছে, কোরআনে কারীমের দাওয়াতকে কোনো অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দমানো যাবে না; বরং কোরআন নাযিল হয়েছে পড়ার জন্য এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা পড়া হবে। আর স্বীকৃত বাস্তবতা হলো, আজ পৃথিবীর বুকে কোরআনে কারীমই সর্বাধিক পঠিত আসমানী গ্রন্থ।
কোরআন মাজীদের তিলাওয়াত কোরআন নাযিলের গুরুত্বপূর্ণ মাকসাদ এবং স্বতন্ত্র একটি আমল ও পুণ্যের কাজ। তা অর্থ না বুঝেই তিলাওয়াত করা হোক না কেন। কেননা শব্দমালার পঠনকেই মূলত আরবিতে ‘কিরাআত’ এবং ‘কোরআন’ বলা হয়। আর শব্দমালার উদ্দিষ্ট অর্থ অনুধাবন করা, তার শিক্ষা ও নির্দেশনা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা ও উপলব্ধি করাকে বলা হয় ‘তাদাব্বুর’ ও ‘তাযাক্কুর’। আর আয়াতের শব্দমালায় বর্ণিত শিক্ষা ও নির্দেশনাকে বাস্তবে অনুসরণ করাকে বলা হয় ‘ইত্তেবা’, ‘ইতাআত’ ও আমল।
আরেকটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়, ‘আল কোরআন’ নামটি একমাত্র আল্লাহ তাআলার কালামের জন্য বিশিষ্ট। অন্য কারো কালামকে কোরআন বলা হয় না। এমনকি কোরআন যাঁর উপর নাযিল হয়েছে তাঁর কালামকে হাদীস বলা হয়; কোরআন বলা হয় না। অথচ কোরআন যেমন ওহীর মাধ্যমে অবতীর্ণ, ছাহেবে কোরআন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কালামের ভিত্তিও ওহী। স্বয়ং কোরআনের সাক্ষ্য, তিনি নিজের থেকে কিছু বলেন না, যা কিছু বলেন ওহী দ্বারা প্রাপ্ত হয়েই বলেন। ইরশাদ হয়েছে : এবং সে মনগড়া কথা বলে না। এটা তো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়। (সূরা নাজম : ৩-৪)।
এবং রাসূল (সা.) নিজে এক হাদীসে ইরশাদ করেন : আমাকে দেওয়া হয়েছে কোরআন এবং কোরআনের অনুরূপ। (মুসনাদে আহমাদ : ১৭১৭৪)।
‘আল কোরআন’ নামের এই বিশেষত্বের কারণ এটাই যে, এর শব্দ ও মর্ম উভয়ই মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এবং উভয়ের সঙ্গেই শরীয়তের বিধান জড়িত। এর শব্দমালার শুধু তিলাওয়াতও মহান আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ যিকির ও ইবাদত হিসেবে গণ্য। এর আয়াত ও সূরা তিলাওয়াত করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত তথা নামাজের অপরিহার্য রোকন ও অংশ হওয়া ছাড়াও নামাজের বাইরেও কোরআনে কারীম তিলাওয়াত করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
এর প্রতিটি হরফ তিলাওয়াতে দশটি করে সওয়াব দানের ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং কোরআনে কারীম তিলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত, ওসিলা ও মাধ্যম নয়। পক্ষান্তরে হাদীসের শব্দমালার শুধু তিলাওয়াত স্বতন্ত্র ইবাদত নয় এবং এর প্রতি হরফ তিলাওয়াতে সওয়াব লাভের ঘোষণাও নেই। যদিও হাদীসের শব্দমালার ভেতরেও রয়েছে নূর ও বরকত (কেননা তা নবীজীর বাণী এবং এর মর্ম ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত)। তবে হাদীসের মূল মাকসাদ হলো এর অর্থ ও মর্ম অনুধাবন করা এবং সে অনুসারে আমল করা। এ কারণে আহলে ইলমদের পরিভাষায় ‘আলকোরআন’কে বলা হয় ‘নামাজে পঠিত ওহী’ এবং হাদীসকে বলা হয় ‘নামাজে অপঠিত ওহী’।
কোরআনে কারীম তিলাওয়াত করা বা পাঠ করা যে স্বতন্ত্র আমল এবং কোরআন নাযিলের গুরুত্বপূর্ণ মাকসাদ তা কোরআন মাজীদের একাধিক আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।