পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বলা হলেও এখনো প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ চালসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। বর্তমান সময়ে চালের বাজারে যে মূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে, সেটাও খাদ্য ঘাটতির কারণেই হয়েছে। এই অবস্থা থেকে দেশ এবং দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে হলে উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হলে চাষের জমি যেমন ফেলে রাখা যাবে না, তেমনি চাষের উপযোগী জমিকে ভরাট করে আবাসাকি এলাকা গড়া বা বিভিন্ন মিল-কারখানা স্থাপনের প্রবণতাও বন্ধ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, চাষের জমি সংরক্ষণ করতে হবে এবং দেশের এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবে তাতে সাড়া দিতে কাউকে তেমন একটা দেখা যায় না। আমার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। আমি ঢাকা থেকে গিয়ে সেখানে থাকা আমার জমি চাষ করি। কিন্তু দেখা যায়, পাশের জমির মালিক তার জমি পতিত রেখে দেন। সেখানে আগাছা জন্মে, ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে। ফলে আমার জমির ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সারাদেশে এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে আরো অনেক স্থানেই। অন্যদিকে রূপগঞ্জে চাষের উপযোগী প্রায় অর্ধেক জমিই আজ বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির দখলে। শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরে অসংখ্য মিল-কারখানাও গড়ে উঠেছে। সেখানে যেসব কারখানা গড়ে উঠেছে তাদের অধিকাংশই গড়ে উঠেছে চাষের জমি ভরাট করে। এভাবে চলতে থাকলে এদেশের চাষের জমি যেমন দিন দিন কমতে থাকবে, তেমনি খাদ্য ঘাটতিও বাড়তে থাকবে। তাছাড়া যারা তাদের চাষের উপযোগী জমি পতিত রেখে দেন তারা যেমন নিজেদের জমির উৎপাদন সক্ষমতার অপব্যবহার করছেন, তেমনি তাদের পাশে থাকা অন্যদের জমির উৎপাদন ক্ষমতাকেও বাধাগ্রস্ত করছেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অনেক খাস জমি আছে, বিভিন্ন রাস্তার পাশে ছোট-বড় বহু ডোবা বা জলাশয় আছে, যা সারা বছর পতিতই থাকে। অথচ, এসব জমিকেও চাষের আওতায় আনার সুযোগ আছে। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সেসব জমি কাজে লাগানোর সুযোগ কেউ নিচ্ছেন না। সরকারিভাবেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
তাই এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের অনুরোধ, তিনি যেন এ ব্যাপারে সংসদে একটি উপযুক্ত আইন পাস করেন। জমি পতিত না রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা আইন থাকা দরকার। আইনে কেউ তার জমি বিনা কারণে পতিত রাখলে তার জন্য শাস্তিরও ব্যবস্থা থাকবে। সেই সাথে কোনো ফসলি জমি যেন হাউজিং কোম্পানি বা বিভিন্ন শিল্প-কারখানার জন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য কঠোর দণ্ডবিধানের ব্যবস্থা থাকবে। কেননা, কোনো বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন এবং তা লংঘনের দায়ে দণ্ডবিধানের ব্যবস্থা না থাকলে সাধারণ মানুষ সে বিষয়ে সরকারের আহ্বানকে কোনো গুরুত্ব দিতে চায় না। জমি পতিত না রাখার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বারবার আহ্বান জানোর পরও মানুষ তাতে সাড়া না দেওয়ার পেছনেও এটাই মূল কারণ।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।