দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচ জেলার ১১টি উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ১১ নভেম্বর। তবে ভোটের আগেই শাসক দল সমর্থিত ৬ চেয়ারম্যান, ৭ সদস্য ও আরো ৬জন সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। করোনার চোখ রাঙানির মধ্যে গত ২১ জুন এ অঞ্চলের ৬ জেলার ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও ভোটের আগেই ২৬ চেয়ারম্যান এবং সাধারণ ৩১ সদস্য ও ৭ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় অনেক এলাকাতেই ভোটারদের কোন আগ্রহ ছিলনা। আসন্ন ইউপি নির্বাচনেও প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে ১১ নভেম্বরের এ ভোট নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের নির্বাচনী এলাকাগুলো এখন কিছুটা সরগরম। সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্তই গ্রামের জনপদ জেগে থাকছে নির্বাচনী প্রচারনায়।

ঝালকাঠী বাদে এবারে যে ৫টি জেলায় নির্বাচন হচ্ছে, সেসব এলাকায় স্থানীয় সরকার পরিষদের আসন্ন ভোট গ্রহন নিয়ে নানামুখি আলোচনাও চলছে। এ নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নিলেও কোন কোন এলাকায় দলের বাইরে তাদের প্রত্যক্ষ ও পরক্ষো সমর্থন রয়েছে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রতি। এমনকি কোন কোন এলাকায় অঘোষিতভাবে মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেও সমর্থন করছে বিএনপি !

বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদে ইসলামী আন্দোলনের চেয়ারমান প্রার্থীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন পরে এবার আওয়ামী লীগ কিছুটা শক্ত অবস্থান গ্রহন করেছে। এখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক মাষ্টার নুরুল ইসলাম দলীয় প্রার্থী। তার প্রতিদন্ধী ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী, পীরছাহেব চরমোনাইর ছোট ভাই জিয়াউল করিম। দীর্ঘদিনের পরক্ষো রাজনৈতিক মিত্র ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে এবার খোদ চরমোনাই ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাশীন দল শক্ত অবস্থান গ্রহন করায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলেও কিছুটা কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।

পাশাপাশি বিএনপি’র এক সময়ের রাজনৈতিক ঘাটি চরমোনইতে অনেক দিন পরে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করায় পর্যবেক্ষক মহল ‘বাস্তব ও বিকল্প কৌশলী অবস্থান’ বলে মনে করছেন। বরিশাল সদরের সংসদীয় আসনটি নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আগ্রহ দীর্ঘ দিনের। কিন্তু ১৯৭৮ সাল থেকে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি পরাজিত হয়নি। ফলে ইসলামী আন্দোলন বিএনপি’কে অন্যতম রজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করে আসছে। এমনকি এ আসনের কারনেই আওয়ামী লীগের সাথে তাদের কিছুটা পরক্ষো মিত্রতাও ছিল এতদিন। যা জাতীয় পর্যায়েও কাজে লাগিয়েছে শাষক দল । আসন্ন ইউপি নির্বাচন নিয়ে সেখানে চীর ধরতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। আর এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চরমোনইতে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারনায় এখন বিএনপি কর্মীরাও অংশ নিচ্ছেন।
এদিকে আগামী ১১ নভেম্বর দক্ষিণাঞ্চলে যে ৪৮টি ইউপিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে বরিশাল সদরে ৬টি, আগৈলঝাড়ায় ৫টি ও বানরীপাড়ায় ১টি ছাড়াও পটুয়াখালীর সদর, গলাচিপা ও দশমিনাতে ১৯টি, পিরোজপুর সদর,নাজিরপুর ও ইন্দুরকানীতে ৯টি, ভোলার দৌলতখানে ৭টি এবং বরগুনা সদরে ১টি ইউপি রয়েছে।

১১ নভেম্বর এসব ইউপি নির্বচনে ভোটার সংখ্যা ৮ লাখ ২৮ হাজার ১৪ জন। যারমধ্যে নারী ৪ লাখ ৭ হাজার ৩১ জন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৭৩, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৪৮৮ এবং সাধারন সদস্য পদে ১,৫৭২ জন প্রতিদন্ধীতা করছেন। দক্ষিণাঞ্চলের ৫টি জেলার ৪৪৯টি কেন্দ্রের ২ হাজার ৪৮৭টি বুথে এসব ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ লাভের কথা। তবে এ নির্বাচন কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে নিকট অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সংশয়Ñসন্দহ রয়েছে অনেক প্রার্থী ছাড়াও ভোটারদের মধ্যেও।

গত ২১ জুন দক্ষিণাঞ্চলের ১৭৩টি ইউপি নির্বচনের ভোট গ্রহনের দিনে আইনÑশৃংখলা বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার সদস্য মোতায়েনের পরেও বিভিন্নস্থানে সহিংশতায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। আহতের সংখ্যা ছিল শতাধীক। ঐ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলার ১৭৩টি ইউপিতে ভোটার সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৯ জন।