Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

করোনাকালীন বাস্তবতায় দেশের লাখ লাখ মানুষের আয় কমে যাওয়া এবং আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলেও করোনাত্তোর বিশ্ব অর্থনীতি নতুনভাবে শুরু হওয়ায় পণ্যমূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ অত্যন্ত টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছে। মূলত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পণ্য পরিবহণ ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই মূল্যস্ফীতি ঘটছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে সব সময়ই ভূমিকা রাখে। এটা যেমন সত্য, তেমনি আমাদের দেশে অকারণে অথবা সিন্ডিকেটেড কারসাজি, মজুদদারি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফাবাজির কারণেও যখন তখন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়। বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন বিনিয়োগ ও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসায় তেল উৎপাদক দেশগুলোর উৎপাদন সক্ষমতায় বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি হয়েছে, এ কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আমাদের মত আমদানি নির্ভর জ্বালানি ও রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির দেশে পণ্যমূল্য হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবীদরা। এহেন বাস্তবতায় দেশের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পণ্যমূল্যের লাগামহীন স্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে যতই দিন যাবে ততই দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়তে থাকবে।

করোনার আগে প্রায় এক দশক ধরেই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের হার অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। তারপর দেশজ উৎপাদন এবং অর্থনীতির ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপিসহ মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। করোনাকালে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি অনেক দেশের তুলনায় ভালো অবস্থায় ছিল। এখন করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবং সবকিছু সচল হওয়ার পর করোনার ক্ষতি পোষানোর একটা প্রবণতা লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। উৎপাদকরা পণ্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এর প্রভাব এখন সাধারণ মানুষের ওপর পড়ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ দাম কমার সম্ভাবনা অর্থনীতিবিদরা দেখছেন না। ইতোমধ্যে জ্বালানি তেল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববাজারের সাথে তাল মিলিয়ে মূল্যবৃদ্ধির সমন্বয়ের কথা বলেছেন। এই সমন্বয় করতে গেলে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি ছাড়া কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। এর ফলে কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। এডিপি বাস্তবায়নও সময়মতো করা যাচ্ছে না। ফলে নতুন করে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। যেসব মেগাপ্রকল্প রয়েছে সেগুলোর বাস্তবায়নেও ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে এসব প্রকল্প দ্রুত চালু করা জরুরি। অস্বীকার করার উপায় নেই, করোনা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন ধীর করে দিয়েছে। এর মধ্যে জিনিসপত্রের মূল্য আকাশচুম্বি হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপাকে। তাদের জীবনযাপন কষ্টের মধ্যে পড়ে গেছে। বিশ্বে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পণ্যমূল্যকে আরও ঊর্ধ্বমুখী করে দিয়েছে। এখন মূল্য সমন্বয়ের কথা বলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়, তাহলে নিত্যপণ্যের মূল্য আরো বেড়ে যাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অর্থনীতির আকার ও প্রবৃদ্ধির গড় হার সব মানুষের সমভাবে আয়বৃদ্ধি নির্দেশ করেনা। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আয়বৈষম্য নিরসন করাই হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তার প্রথম শর্ত। এ ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম রয়েছে। করোনাত্তোর ২০২১ সালের সম্ভাব্য নতুন অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে দেশের মোট জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৪০৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের হিসাবে ধরা হয়েছিল ৩৫৪ বিলিয়ন ডলার। এটি নি:সন্দেহে খুবই আশাব্যঞ্জক চিত্র। কিন্তু দেশের দরিদ্র মানুষের টিকে থাকার জন্য পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

দেশের অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। প্রথমত: বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে দেশে মূল্য বৃদ্ধি করা হলে তৈরী পোশাক খাতসহ রফতানি খাতে অনুরূপ মূল্য সমন্বয় করে হয়তো সামাল দেয়া যেতে পারে। তবে করোনায় কর্মহীন মানুষের কাজে ফিরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ সৃষ্টি করা না গেলে জাতীয় অর্থনীতির আকার বৃদ্ধি সামাজিক-অর্থনৈতিক দুর্দশা লাঘবে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতাসমুহ দূর করার কার্যকর উদ্যোগের প্রতি বেশি জোর দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে বসে সমন্বয়ের মাধ্যমে চলমান মূল্যস্ফীতি কিভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। তা নাহলে, সামনে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এখন অর্থনীতির গতি ঠিক রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বিশ্ববাজারের সাথে তাল মিলিয়ে এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সমন্বয় করা সঠিক হবে না। এতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ দুদর্শায় নিক্ষিপ্ত হবে। এক্ষেত্রে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বৈদেশিক শ্রমবাজারে সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করে অর্থনীতিতে গতি আনতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
আরও পড়ুন