নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সোমবার সারাদিন ধরে একটা রসিকতা খুব চলল। শেষ চারের দরজা খুলতে গেলে বিরাট কোহালিদের এক হাজার রান করে জিততে হবে বাকি ম্যাচগুলোতে। এতটাই নাকি কঠিন অঙ্ক তাঁদের সামনে! তারও আগে প্রধান শর্ত, নিউজ়িল্যান্ডকে হারতে হবে আফগানিস্তানের কাছে। না হলে তো কোনও আশাই নেই!
কোহালির দলের এমন ইন্দ্রপতনের ময়নাতদন্তে বসে প্রথমেই মনে হচ্ছে, সাত বছর ধরে চলার পরে সংসার খানখান হওয়ার মুখে। চারদিকে বিভ্রান্তি, ধোঁয়াশা আর সম্পর্ক হানাহানির কাহিনি। ওপেনিং থেকে সরে যাওয়া রোহিত শর্মার স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে প্রথম বলেই মারতে যাওয়া। অশ্বিনকে নিয়ে চলতে থাকা বিবাদ। দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের ঝড়। সুরতাল কেটে যাওয়া একটা দল। বোর্ডের উচ্চমহলে অধিনায়ককে নিয়ে উষ্মা আরও বাড়িয়েই তুলবে। আর তার প্রভাব কোহালির পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে নেতৃত্ব-ভবিষ্যতের উপরে পড়লেও অবাক হওয়ার নেই।
কিন্তু কে হবেন পরবর্তী অধিনায়ক? রোহিত শর্মা? আগামী বছর ফের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তখন ৩৫ বছর বয়স হবে রোহিতের। কারও কারও মনে হচ্ছে, চলতি বিশ্বকাপে এই বিপর্যয়ের পরে নতুন প্রজন্মের দল গড়ে তোলা হোক। ২০০৭ প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেমন সচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়দের ছাড়াই তরুণ মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে অধিনায়ক করে দল পাঠানো হয়েছিল। তেমনই অবিলম্বে কোহালি, রোহিতদের বলে দেওয়া হোক, তোমরা টেস্ট আর ওয়ান ডে খেলো ঠিক আছে। কিন্তু এই এক বছরে যত টি-টোয়েন্টি রয়েছে, নতুনরা খেলবে। যাতে ঋষভ পন্থ, শ্রেয়স আয়ার, শুভমন গিল, ঈশান কিশানদের নিয়ে আগামী বিশ্বকাপের দল গড়ে তোলা যায়। অধিনায়ক করা হোক কে এল রাহুল বা পন্থকে।
এক-এক সময় মনে হচ্ছে, এত অবাক হওয়ারই বা কী আছে? অশনি সঙ্কেত তো আগে থেকেই ছিল। গোটা আইপিএলে রোহিত তেমন ফর্মে ছিলেন না। কোহালিকে দেখে মনে হয়নি পুরনো কোহালি। যশপ্রীত বুমরা বা ভুবনেশ্বর কুমারের সেই আগুন বা সুইং কিছুই দেখা যায়নি। রক্তাল্পতায় ভোগা ব্যাটিং, ক্লান্ত-অবসন্ন বোলিং নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছিল ভারত।
রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো বাজনা বাজাচ্ছিলেন। আর বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের আমফান যখন শক্তি অর্জন করছিল, বোর্ড কর্তারা ব্যস্ত ছিলেন আইপিএল নামক সোনার রাজহাঁস রক্ষা করায়। কৌন বনেগা ক্রোড়পতি ক্রিকেট লিগ সম্পূর্ণ করার নেশায় তাঁরা এতটাই মাতোয়ারা ছিলেন যে, ম্যাঞ্চেস্টারে টেস্ট বাতিল হয়ে গেল! বিশ্বকাপের এক সপ্তাহ আগে পর্যন্তও আইপিএল চলল। বোর্ড আইপিএলের লাইটিংয়ে বুর্জ খলিফাকে রঙিন করতে চেয়েছিল। মনে রাখেনি, বিশ্বকাপের রং ফিকে হতে শুরু করেছে।
হার্দিক পাণ্ড্যের বিশ্বকাপের দলে টিকে যাওয়া ভারতীয় ক্রিকেটের সব চেয়ে বড় নির্বাচনী কেলেঙ্কারিগুলোর একটা। গোটা আইপিএলে হার্দিক বল করেননি। অথচ, বিশ্বকাপের দল নির্বাচন সেরে চেতন শর্মা বলেছিলেন, ‘‘আইপিএলে বল করবে হার্দিক। ওকে অলরাউন্ডার হিসেবে নেওয়া হয়েছে।’’ শারজায় মিয়াঁদাদের হাতে শেষ বলে ছক্কা খাওয়ার জন্য তা-ও চেতনকে ক্ষমা করে দিতে পারে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। মরুশহরে হার্দিক কেলেঙ্কারির জন্য পারবে না। বোর্ডের উচিত এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া। কিন্তু আদৌ কি তা
করা হবে?
কলকাতায় পেট্রোলের দরের সমান ১১০ নিয়ে যে এখনকার দিনে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জেতা যায় না, তা বোঝার জন্য শার্লক হোমস হওয়ার দরকার নেই। আইপিএলের দেশের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে জ্বালানির অভাব অনেক দিন থেকেই প্রকট। কোহালি, রোহিত, কে এল রাহুলরা সব ধ্রুপদী ক্রিকেটীয় শটে ইনিংস সাজান। সুইপ, রিভার্স সুইপ, স্কুপ বা রিভার্স স্কুপ মারেন না। কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলে যাওয়া অস্ট্রেলীয় ওপেনার ক্রিস লিন শুধু আইপিএলে সফল হওয়ার লক্ষ্যে ছক্কা মারার বিশেষজ্ঞ কোচ নিয়োগ করেছিলেন। টি-টোয়েন্টি যুগে এতটাই বিপ্লব ঘটে গিয়েছে ক্রিকেটে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল হাত বদলে সুইচ হিটে ছক্কা মেরে দিচ্ছেন। কোহালি, রোহিতরা এখনও কুড়ির ক্রিকেটে সেই লুপ্তপ্রায় ব্যাটিংয়ে পড়ে।
ধোনিকে মেন্টর করে এনে বাজিমাত করতে গিয়েছিলেন বোর্ড কর্তারা। সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। রাতারাতি ধোনি কি কাউকে হেলিকপ্টার শট মারা শিখিয়ে দেবেন? এ বার রবি শাস্ত্রীর জায়গায় আনা হচ্ছে রাহুল দ্রাবিড়কে। ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বকালের সেরাদের এক জন দ্রাবিড়। কিন্তু ‘দ্য ওয়াল’-ও তো ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ঘরানার। রক অ্যান্ড রোল-এ উৎসাহিত করতে পারবেন? টেস্টের জন্য যোগ্যতম নাম। কিন্তু রিভার্স স্কুপ মারতে বলবেন কি কাউকে? নাকি সৌরভদের উচিত, টি-টোয়েন্টি কোচ হিসেবে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের মতো কারও খোঁজ করা? যিনি নিজে ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিনবত্ব দেখিয়েছেন, কোচ হিসেবেও ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছেন না।
ক্রিকেটের ইতিহাস ঘাঁটলে ১৯২০ সালে দলীপ সিংহজির একটা শটের হদিশ পাওয়া যায়। যেখানে তিনি ব্যাট ঘুরিয়ে রিভার্স শট খেলেছিলেন। নন-স্ট্রাইকার এল পি জয়ের লেখায় যার বর্ণনা রয়েছে। ফিল্ডিং দল ‘আনফেয়ার প্লে’-র দাবি তোলে কিন্তু আম্পায়ার নাকচ করে দেন। নব্বইয়ের দশকে ওয়ারউইকশায়ার কাউন্টিতে কোচ বব উলমার ও অধিনায়ক ডারমট রিভের হাতে রিভার্স সুইপ আরও মোক্ষম অস্ত্র হয়ে ওঠে। অফস্পিনারকে পাল্টা আক্রমণের জন্য উলমার তাঁর ব্যাটসম্যানদের হাতে এই শটের নকশা তুলে দেন। আজ থেকে একশো বছর আগে দলীপ সিংহজি যে অভিনবত্ব দেখিয়েছিলেন, এখনও তা করতে নারাজ তাঁর বংশধরেরা।
ভয়ডরহীন ক্রিকেট কোথায়, এ তো কম্পমান ভারত! মরুশহরে মহাপতনের মুখে! আনন্দবাজার
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।