Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৈশ্বিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

মহান স্বাধীনতার ৫০তম চলছে। ইতোমধ্যে দেশের জনসংখ্যা আড়াইগুণ বেড়ে ১৭ কোটির অধিক হয়েছে। যা বিশ্বে সপ্তম বৃহৎ। সর্বোপরি দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘন-জনবসতির দেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশও। তদুপরি বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ। দেখা যাক, ২০২১ সালে খাতভিত্তিক বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কী। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বিশ্বখ্যাত সংস্থা ও শক্তিশালী দেশের বৈশ্বিক সূচকসমূহ বিশ্বব্যাপীই স্বীকৃত ও সমাদৃত। এসব নিয়ে কোথাও তেমন একটা বিতর্ক নেই। তাই এসব সূচকই দেশের অবস্থানের প্রকৃত মাপকাঠি। ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচক-২০২১ মতে, ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৪তম। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ। একওর তথ্য মতে, ১৯৭টি দেশের জাতীয় শিক্ষাখাতে গড় জিডিপি ব্যয়ের পরিমাণ ৪.৫%, বাংলাদেশে ১.৩%। শিক্ষা খাতে বরাদ্দের বৈশ্বিক সূচক-২০২১ মতে, ১৬২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫২তম। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন-২০২১ মতে, বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৮৮.৫% জেএসসি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। কারিগরি শিক্ষার হার বাংলাদেশে ১৪% আর অধিকাংশ দেশে ৬০-৭০%। আইএলও’র শ্রমশক্তি জরিপ-২০২১ মতে, ‘বাংলাদেশের শ্রমশক্তির ৯.৯%-কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না, ৬% উচ্চশিক্ষিত (তন্মধ্যে নারী ৩.৮%), ৮.৩% ব্যবস্থাপনা ও কারিগরির, উচ্চ দক্ষ ও নিম্ন দক্ষ কর্মীদের মজুরির পার্থক্য ব্যাপক। নিয়োগ দাতাদের অভিযোগ, যোগ্য লোক পাওয়া যায় না। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন-২০২১ মতে, নারী-পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৬৫তম। আইএমএফের তথ্য-২০২১ মতে, কর জিডিপির অনুপাতের ক্ষেত্রে ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৫তম। অনুপাত: বাংলাদেশে ৯.৯০%, ভারতে ১৯.৬৭%, পাকিস্তানে ১৪.৮৮%। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন-২০২১ মতে, বাংলাদেশে ২০২০ সালে এফডিআই এসেছে ২৫৮ কোটি ডলার (আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১১% কম), চীন, মিয়ানমার ও ভারতে বেড়েছে। আইএলও’র গ্লোবাল ওয়েজ রিপোর্ট ২০২০-২১ মতে, ‘ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় ২০১৯ সালে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ছিল, বাংলাদেশে ৪৮ ডলার (শোভন মজুরি প্রয়োজন ২৫২ মার্কিন ডলার), আর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গড় ৩৮১ ডলার। ২০২০ সালে করোনাকালে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট-২০২১ মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বার্ষিক মৃত্যুহার উচ্চ আয়ের দেশগুলোর দ্বিগুণ এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ নৈপুণ্য দেখানো অর্থনীতিগুলোর চেয়ে পাঁচ গুণের অধিক। আঙ্কটাডের এলডিসি প্রতিবেদন-২০২১ মতে, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি করলেও এখনও মাথাপিছু জিডিপি বৈশ্বিক গড়ের মাত্র ১৫%। ডমেস্টিক রিসোর্স মবিলাইজেশন জিডিপির ১০%, যা দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের তুলনায়ও কম। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট-২০২১ মতে, প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্যের পেছনে ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা নেই বাংলাদেশের ৪৬% পরিবারের, যা এখন প্রায় ৭০% হয়েছে সব খাদ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও করোনায় প্রায় অর্ধেক মানুষের উপার্জন কমে যাওয়ায়। এমসিসিআই ও পলিসি চেঞ্জ বাংলাদেশ প্রকাশিত ‘বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ সূচকে ১০টির মধ্যে ৬টি সূচকেই অবস্থা নড়বড়ে। তবে ৪টি সূচক উন্নতির দিকে। স্কোর ৬১। ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ইনডেক্স ফর পোস্টাল ডেভেলপমেন্ট-২০২১ মতে, ১৬৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৩তম, ভারত ৫০তম, পাকিস্তান ৬২তম। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট-২০২১ মতে, মৌসুমি রোগীর মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ওষুধ ক্রয়ের হার বাংলাদেশে ৬৩%, ভারতে ৩০%। আইএমএফ’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে পিপিপির ভিত্তিতে জিডিপির হিসাবে বিশ্বে বাংলাদেশের অংশ ০.৬৫৯%, ভারতের অংশ ৭.৩৯%। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-২০২১ মতে, ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বিশ্বের ১১৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৭৬তম, পাকিস্তান ৯২ ও ভারত ১০১তম। দেশের অপুষ্টির হার, পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের দৈর্ঘ্য, শিশু মৃত্যুর হার প্রভৃতি ভিত্তিক এই সূচক। সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের ‘বেস্ট কান্ট্রি ফর এন্ট্রাপ্রেনারশিপ-২০২১’ মতে, ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম (স্কোর ১২.৯৯। এর মধ্যে উদ্ভাবনে ৪.৩৪, প্রতিযোগিতায় ৪.৮৯, শ্রম দক্ষতায় ২৩.০৫, অবকাঠামোয় ২০.৪৭, মূলধনে ৯৩.৬২ ও মুক্ত ব্যবসায় ১.০৭), ভারত নবম, পাকিস্তান ৯৯তম। গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমিক রিপোর্ট ২০২০-২১ মতে, ২০১৯ সালে বিশ্বে হালাল পণ্যের বাণিজ্য হয়েছে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের অধিক। কিন্তু বাংলাদেশ এই বাণিজ্যের সামগ্রিক স্কোরে শীর্ষ ১৫ দেশের মধ্যে নেই । শুধু হালাল ফ্যাশনে শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। ইউনিসেফ’র সিসিআরআই প্রতিবেদন-২০২১ মতে, বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের শিকার হওয়ার অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫তম। গ্রিন পিসের বায়ু দূষণ প্রতিবেদন-২০২১ মতে, বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। আর সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে ঢাকা তৃতীয়। ফ্রিডম হাউসের ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট-২০২১ মতে, ইন্টারনেটে বাক স্বাধীনতার সূচকে ১০০-তে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৪০। সে মতে, বাংলাদেশ আংশিক মুক্ত শ্রেণির তলানিতে (২০১৩ সাল থেকেই এই শ্রেণীতে আছে)! এবারের সূচকে পাকিস্তান ২৫, ভারত ৪৯ । সার্ফশার্ক এর ‘ডিজিটাল কোয়ালিটি অব লাইফ ইনডেক্স-২০২১’ মতে, ডিজিটাল জীবনমানে বিশ্বের ১১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৩তম, ভারত ৫৯তম। ইন্টারনেট সামর্থ্য, ইন্টারনেটের মান, ই-অবকাঠামো, ই-নিরাপত্তা, ই-সরকারকে ভিত্তি করে এটি প্রণীত। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসুচির ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স-২০২১ মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর এক কোটি টনের বেশি খাবার নষ্ট হয়। স্কাইট্র্যাক্স-২০২১ মতে, বিশ্বের সেরা একশ’ বিমানবন্দরের মধ্যে ভারতের চারটি এবং পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ভুটানের একটি করে বিমানবন্দর রয়েছে। কিন্তু এতে বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরের নাম নেই! এমনকি এশিয়ার সেরা ১০ বিমানবন্দরের মধ্যেও বাংলাদেশের নাম নেই। টাইমস হায়ার এডুকেশন সূচক-২০২১ মতে, ৯৯টি দেশের সেরা ১,৬৬২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের ৩টি, পাকিস্তানের ১৬টি, ভারতের ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ প্রতিবেদন-২০২১ মতে, শিশুদের বুকের দুধ পান করানোয় মায়েদের সহায়তার ক্ষেত্রে বিশ্বের ৯৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। ‘লয়েড’স লিস্ট’ সূচক- ২০২১ মতে, বিশ্বের ১০০ শীর্ষ বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম। জাতিসংঘের আইটিইউ’র বৈশ্বিক সূচক-২০২১ মতে, বাংলাদেশের অবস্থান: সাইবার নিরাপত্তায় ৫৩তম, আইসিটি উন্নয়নে ১৪৭তম ও নেটওয়ার্ক রেডিনেসে ১০৫তম। ফিফার সূচক-২০২১ মতে, ২১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৮৮তম, ভারত ১০৫তম। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ-২০২১ মতে, ২০২০ সালে পোশাক রফতানিতে চীন প্রথম, ভিয়েতনাম দ্বিতীয়, বাংলাদেশ তৃতীয়।
নাউট ফ্রাঙ্ক ও সিটি গ্রুপ প্রণীত ‘দ্য ওয়েলথ রিপোর্ট-২০২১’ মতে, বিশ্বের সম্পদপ্রবাহ ও সম্ভাব্য বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০৫০ সালের মধ্যে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রথম চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। সিইবিআর’র ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, অর্থনীতির দিক দিয়ে ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪১তম, ২০৩৫ সাল নাগাদ হবে ২৫তম। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ২০২০ সালে পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ ৩৯তম, ভারত ১৬তম ও পাকিস্তান ৪৫তম। আর আমদানিতে বাংলাদেশ ৩২তম। জাতিসংঘের প্রতিবেদন-২০২১ মতে, বাণিজ্য সহজীকরণ সম্পর্কিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের বৈশ্বিক হার বাংলাদেশে ৬৪.৫২%, ভারতে ৯০%। আইটিইউসি’র গ্লোবাল রাইটস ইনডেক্স-২০২১ মতে, শ্রমিকের অধিকার বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। আইডিএমসি’র ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয়, ভারত চতুর্থ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ট্রাফিকিং ইন পারসনস প্রতিবেদন-২০২১ মতে, বাংলাদেশ ‘স্তর ২’ তালিকায় রয়েছে। এর আগে একনাগাড়ে তিন বছর ‘স্তর ২ পর্যবেক্ষণ’ তালিকায় ছিল। হু ও ইউনিসেফের জেএমপি প্রতিবেদন-২০২১ মতে, ২০২০ সালে স্যানিটেশন সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের হার: বাংলাদেশে ৫৪%, পাকিস্তানে ৬৮%, ভারতে ৭১%। অনুন্নত শৌচাগার ব্যবহার করে: বাংলাদেশে ২২%, ভারতে ২%, পাকিস্তানে ৩%। পাইপে পানি প্রাপ্তির হার: বাংলাদেশে ১৫%, ভারতে ৪৪%, পাকিস্তানে ২৬%। ২৩০টি দেশের পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক উপাত্ত নিয়ে এটি প্রণীত। বিশ্বব্যাংকের ‘গিয়ারিং আপ ফর দ্য ফিউচার অব ম্যানুফ্যাকচারিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন-২০২১ মতে, সারাবিশ্বের উৎপাদনশীল খাত ইআরপি সফটওয়্যারের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেখানে বাংলাদেশ এটা ব্যবহার হচ্ছে ১৫%। এছাড়া, কম্পিউটারের ব্যবহার ২০%, সেলফোন অ্যাপের মাধ্যমে ২%, বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে ১৫%। পণ্যের মান যাচাইয়ে ম্যানুয়াল পরিদর্শন পদ্ধতি ব্যবহার করছে ৭৫% প্রতিষ্ঠান। কলেজ পর্যায়ের ডিগ্রি নেই এমন লোক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে দেশের অর্ধেক উৎপাদন কারখানা। এডিবি প্রণীত সংখ্যালঘু বিনিয়োগকারী সুরক্ষা সূচক-২০২১ মতে, ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৯তম, পাকিস্তান ২৬তম ।
ওকলার স্পিড টেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স-২০২১ মতে, মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৪তম। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গতিতে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৬তম। জিএসএমএ মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০২১ মতে, মোবাইলে ইন্টারনেটের হার বাংলাদেশে নারীর ৬৪% ও পুরুষের ৮৪%, ভারতে নারীর ৬৭% ও পুরুষের ৭৯%, পাকিস্তানে নারীর ৫২% ও পুরুষের ৭৮%। বৈশ্বিক শান্তি সূচক-২০২১ মতে, ১৬৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯১তম, ভারত ১৩৫তম, পাকিস্তান ১৫০তম। এ সূচকের মানদণ্ড হচ্ছে: নিরাপত্তা, সুরক্ষা ব্যবস্থা, সামরিকায়ন ও সংঘাতের মাত্রা। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্কের প্রতিবেদন-২০২১ মতে, এসডিজি অর্জনে ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৯তম, ভারত ১২০, পাকিস্তান ১২৯। ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের সূচক-২০২১ মতে, ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকা ১৩৭তম, গড় পয়েন্ট ৩৩.৫ (স্থিতিশীলতায় ৫৫, স্বাস্থ্যসেবায় ১৬.৭, সংস্কৃতি ও পরিবেশে ৩০.৮, শিক্ষায় ৩৩.৩ ও অবকাঠামোতে ২৬.৮ নম্বর)। ইউএনএইচসিআর এর তথ্য মতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অবৈধ পথে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টায় থাকা উদ্ধারকারী লোকদের মধ্যে বাংলাদেশ ৪র্থ। কিউআইএমএর ইথিক্যাল অডিট সূচক-২০২১ মতে, তাইওয়ান ১ম, বাংলাদেশ ২য়, ভিয়েতনাম ৩য়, চীন ৭ম। শ্রমিকের বেতনভাতা, কর্ম পরিবেশ, সাধারণ ও মাতৃত্বকালীন ছুটি, সামাজিক ও পরিবেশগত নিরাপত্তার শর্ত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি ভিত্তিক এটি প্রণীত। জাতিসংঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস’ প্রতিবেদন অনুসারে গত ৩১ মার্চ-২০২১ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রথম, ভারত পঞ্চম, পাকিস্তান ষষ্ঠ।
গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন-২০২১ মতে, বিশ্বের শীর্ষ ১৯৪টি ধনী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৪০তম, ভারত ১২৮তম, পাকিস্তান ১৪৪তম। আইএমএফের তথ্য মতে, কভিড মোকাবেলায় জিডিপির ব্যয়: বাংলাদেশে ১.৪%, ভারতের ৩.৩%, পাকিস্তানে ২%। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’র বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক-২০২১ মতে, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫২তম, পাকিস্তান ১৪৫, ভারত ১৪২। হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স-২০২১ মতে, বিশ্বের শক্তিশালী ১১৬ পাসপোর্টের তালিকায় বাংলাদেশ ১০৮তম, ভারত ৯০তম ও পাকিস্তান ১১৩তম। অক্টোবর-২০২০ প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট মতে, ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৭৭তম, ভারত ১০০তম, পাকিস্তান ১৪৭তম । এছাড়া, ব্যবসায় চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৮৯তম। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ওয়েবসাইট মিলিটারি ডিরেক্ট এর সূচক-২০২১ মতে, সামরিক শক্তিতে বিশ্বে বাংলাদেশ ৪৫তম, মিয়ানমার ৩৮তম, ভারত চতুর্থ । জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০১৮-২০২০ মতে, বিশ্বের ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০১তম, ভারত ১৩৯তম, পাকিস্তান ১০৫তম। সামাজিক সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক উদারতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, জিডিপি, গড় আয়ু, দুর্নীতির মাত্রা ও করোনাভাইরাস মহামারীতে মানুষের সার্বিক পরিস্থিতি ভিত্তিক এটি প্রণীত। সুইডেন ভিত্তিক ভ্যারিয়াস ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের গণতন্ত্রের সূচক-২০২১ মতে, বিশ্বের ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫৪তম, স্কোর ০.১। বাংলাদেশের বর্তমান শাসন ব্যবস্থাকে ‘নির্বাচিত একনায়কতন্ত্র’ বিভাগে রাখা হয়েছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক-২০২১ মতে,বিশ্বে বাংলাদেশ ১২০তম, পাকিস্তান ১৫২ তম। করের বোঝা, ব্যক্তিগত ও করপোরেট করের হার, জিডিপির তুলনায় কর ও রাজস্ব আয়ের হার ইত্যাদি ভিত্তিক এটি প্রণীত ।
হু’র প্রতিবেদন-২০২১ মতে, স্ত্রী নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিশ্বের ১৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ, পয়েন্ট-৫০%। ২০০০-২০১৮ সাল পর্যন্ত নারী নির্যাতনের তথ্যভিত্তিতে এটি প্রণীত। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎপাদন সক্ষমতার সূচক-২০২১ মতে, ১৩৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৮তম। বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত নোমাড’র প্রতিবেদন মতে, ২০২০ সালে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বাংলাদেশ ২২, (বৈশ্বিক সপ্তম স্থান), ভারত ৮৩, পাকিস্তান ২৬। জিডিপির তুলনায় ব্যাপক মুদ্রার অনুপাত বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৭%, বৈশ্বিক গড় ১৩৩% ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর ১৪৬%। বিশ্বব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৭৩তম (স্কোর ৪৯.৪), ভারত ১২৩তম। অস্ট্রেলিয়ার লোওয়ি ইন্সটিটিউটের কোভিড পারফরম্যান্স ইনডেক্স-২০২১ মতে, ৯৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম, ভারত ৮৬তম। মার্কিন সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন-২০২১ মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ১০০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৮১তম, ভারত চতুর্থ, পাকিস্তান ৩৭তম। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রভাব, প্রতিরক্ষা বাজেট, অস্ত্রভাণ্ডার, বৈশ্বিক জোট, কূটনৈতিক ক্ষমতা ও সামরিক শক্তি বিবেচনায় এটি প্রণীত। যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কর্পোরেশনের ‘বাংলাদেশ স্কোর কার্ড-২০২০-২১’ প্রতিবেদন মতে, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অধিকারসহ ১৩টি সূচকে ফের রেড জোনে নাম উঠেছে। ২০১৯-২০ সালে ছিল একই জোনে ১২টি সূচক। এবার নতুন করে যোগ হয়েছে ফিসক্যাল পলিসি। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গ্লোবাল থিংক ট্যাঙ্কস জরিপ মতে, সারাবিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন ৬৮টি গবেষণা ও নীতি নির্ধারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্রি ১৬তম, আইসিআরআইএসএটি ২৯তম, বাংলাদেশের সিপিডি ৩৫তম ও ফিলিপিন্সে অবস্থিত ইরি ২৯তম, ইরি ৫৯তম।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশের অবস্থান
আরও পড়ুন