Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘটনাটি উদ্বেগজনক ও ভয়ঙ্কর

| প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা একইসঙ্গে উদ্বেগজনক ও ভয়ংকর। জানা গেছে, নথিগুলোর বেশির ভাগ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজের ক্রয় সংক্রান্ত। এব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের তরফে শাহবাগ থানায় গত বৃহস্পতিবার একটি জিডি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, গত বুধবার অফিস করে নথিগুলো ফাইল ক্যাবিনেটে রাখা হয়। পরদিন দুপুর ১২টায় কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, ফাইলগুলো ক্যাবিনেটের মধ্যে নেই। এত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ফাইলগুলো কোথায় গেলো, কে বা কারা সরালো, সেটাই প্রশ্ন। বলা বাহুল্য, ওই বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া বাইরের কারো ফাইলগুলো সম্পর্কে জানা থাকার কথা নয়। কাজেই, বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফাইল হারানোর দায় এড়িয়ে যেতে পারবেন না। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা নথি গায়েবের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করা যায়, অচিরেই হারিয়ে যাওয়া নথির সন্ধান মিলবে এবং কে বা কারা নথি সরানোর সঙ্গে জড়িত তার বা তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, নথি গায়েবের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি এইসঙ্গে আশ্বস্থ করেছেন এই বলে যে, গায়েব হওয়া ফাইলের একাধিক কপি স্বাস্থ্য অধিদফতরে সংরক্ষিত রয়েছে। ফলে তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।

ফাইলগুলো যে বা যারাই সরাক, খেলাচ্ছলে যে সরাইনি, তাতে সন্দেহ নেই। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সরানো হয়েছে। সেটা বুঝা যায়, ৪৮ ঘণ্টায়ও ফাইলগুলোর হদিস না মেলায়। ওই বিভাগের অন্য কোথাও আছে কিনা কিংবা ইতোমধ্যেই তা সচিবালয়ের বাইরে চলে গেছে কিনা, এখনো তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাইলগুলো গায়েব হওয়ায় তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলে জানালেও ব্যাপারটি উপেক্ষাযোগ্য বলে মনে করার কারণ নেই। যদি স্বাস্থ্য অধিদফতরে ফাইলগুলোর একাধিক কপি সংরক্ষিত না থাকতো তাহলে কী হতো? পর্যবেক্ষকদের ধারণা, গায়েব হওয়া ফাইলগুলোতে হয়তো ক্রয় নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ আছে। প্রমাণ মিটিয়ে দেয়ার জন্য ফাইলগুলোই গায়েব করে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদফতর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিককালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। এসব দুর্নীতির অনেক খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। জনমনে এমন একটা ধারণা জন্মেছে যে, অনিয়ম-দুর্নীতির বাইরে একটি সূচও বোধহয় কেনা সম্ভব নয় বা সম্ভব হয়নি। এরকম গণধারণা কোনো মন্ত্রণালয় বা তার বিভিন্ন অঙ্গের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও হেয়কর। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে পদস্থ কর্মকর্তা এবং এমন কি স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজিও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ফাইল গায়েব হওয়ার ঘটনা কতটা গুরুত্বর হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।

রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নথিতথ্য সংরক্ষণের বিধান ও ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশেই নয়, অন্যান্য দেশেও। এমন কিছু নথি বা তথ্য থাকে যা অতি গোপনীয়। সেগুলো যথাযথ নিরাপত্তায় সংরক্ষণ করা হয়। প্রয়োজনে রাষ্ট্র কোনো বিষয়ে নীতি, সিদ্ধান্ত এবং তথ্য গোপন রাখে, সংরক্ষণ করে জাতীয় স্বার্থে। এটা জনগণের বা অন্য কারো কাছে প্রকাশযোগ্য নয়। প্রকাশ করলে গোপনীয়তার লংঘন ও দেশের অনাকাক্সিক্ষত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। গোপন তথ্য প্রকাশ হলে কী ঘটে বা ঘটতে পারে তার বহু নজির বিশ্বে রয়েছে। উইকিলিকস, প্যান্ডোরা পেপার্স প্রভৃতির উন্মোচিত তথ্যাবলী বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সব দেশেরই নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু সমুদয় তথ্য নয়। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়ার অধিকার তাদের নেই। ফাইল গায়েবের ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে, আমাদের দেশে ফাইল বা নথি তথ্য সংরক্ষণে পূর্ণ সর্তকতা ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের অতিগোপনীয় ফাইল বা নথিতথ্যও চুরি বা গায়েব হয়ে যেতে পারে। পাচার হয়ে যেতে পারে দেশের বাইরে। স্বাধীনতার পর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সচিবালয় থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল, সেটা বিদেশে পাচার হয়ে গিয়েছিল বলে শোনা গিয়েছিল। তাই, অতিগোপনীয় ফাইল ও নথিতথ্য উপযুক্ত ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করতে হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করতে হবে। আলোচ্য ঘটনার সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাক, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টামূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

 



 

Show all comments
  • abdul quaium shekh ১ নভেম্বর, ২০২১, ৯:১৫ এএম says : 0
    অধরাধীকে শণাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘটনাটি উদ্বেগজনক ও ভয়ঙ্কর
আরও পড়ুন