Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাভারে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতি ভিক্ষুকের ভালবাসার নিদর্শন

সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১৬ পিএম

সাভারে ষাটোর্ধ্ব এক নারী ভিক্ষুকের ভালবাসার উপহার পেয়ে বাবরুদ্ধ ও আবেগেআপ্লুত হয়েছেন এক ইউপি চেয়ারম্যান। ভিক্ষুক ওই নারী তার জমানো টাকা দিয়ে ভালোবাসার নিদর্শন স্বরুপ তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমরের জন্য কিনে এনেছেন মুরগী, নারিকেল ও দুধ। হঠাৎ করে ভিক্ষুকের কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে অপ্রস্তুত চেয়ারম্যান উপস্থিত লোকজনকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মানুষের জন্য ভাল কিছু করলে তার প্রতিদান দুনিয়াতে পাওয়া যায়। আজকের ঘটনা তারপ্রমান আপনারা সবাই বিপদে মানুষের পাশে থাকুন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর চেয়ারম্যান সমর তার হেমায়েতপুরের বাসার সামনে রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিষদের মেম্বার ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। হঠাৎকরেই ষাটোর্ধ্ব এক নারী হাতে একজোড় ামুরগী, একজোড়া নারিকেল ও বড় বোতল ভর্তি ৬সের গরুর দুধ নিয়ে সেখানে হাজিরহন। এলাকায় ভিক্ষুক হিসেবেতার পরিচিতি থাকায় উপস্থিত অনেকেই তাকে চিনতে পারেন। তার হাতে মুরগী, নারিকেল ও দুধ দেখে উপস্থিত লোকজন সেখানে যাওয়ার কারণ জানতে চান। সাইমুনা বেগম (৬৫) নামের ওই নারী তাদেরকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ জানতে পেরে তিনি গ্রাম থেকে তারজন্য এসব কিনে নিয়ে এনেছেন। কাছ থেকে দেখে তাকে দোয়া করতে এসেছেন। ’সায়মুনার কথা শোনার পর সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আবেগআপ্লুত চেয়ারম্যান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তারপ্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করেন। সাইমুনার বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়, ভাড়া থাকেন সাভারের হেমায়েতপুর দক্ষিণপাড়ায়।
সায়মুনা জানান, দুনিয়ায় তার আপন কেউ নেই। চেয়ারম্যান তাকে কখনো ফেরান না। তার মতো সবগরীব মানুষেই চেয়ারম্যানের সাহায্য পান। করোনার সময় লকডাউনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ানিষেধ ছিল। তখন চেয়ারম্যান ডাল, আটা, পেয়াজ, মরিচ, আদা, রসুন, মাছ, মাংস, সবজি কিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি পাঠান। ঈদের আগে পাঠান সেমাই, দুধ, পোলাউয়ের চাল, শাড়ি, লুঙ্গি, জুতা। তিনি না থাকলে হাজার হাজার গরীব মানুষের অনেক কষ্ট হবে, মানুষের জন্য তাকে বাঁচতে হবে। ভিক্ষা করে জমানো টাকা দিয়ে তিনি তার জন্য এসব কিনে এনেছেন বলেজানান। সায়মুনা বলেন, গরীব মানুষকে ভালবাসা দিয়েই তার আনন্দ।
এ প্রসঙ্গে তেঁতুলঝোড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর গতকাল শুক্রবার বিকেলে বলেন, অসহায় ভিক্ষুক ওই নারী নি:সন্তান, স্বামী নেই। বিভিন্ন সময় তিনি সাহায্যের জন্য আসলে সাধ্যমতো চেষ্টা করি। তিনি চেয়ারম্যানকে বাবা বলে সম্বোধন করেন জানিয়ে সমর বলেন, করোনাকালে তিনি সাধ্যমতো মানুষের পাশে ছিলেন। দেড় বছর সর্বস্ব দিয়ে মানুষের পাশে থাকার এক পর্যায়ে তিনি নিজে করোনা আক্তান্ত হয়ে ঢাকার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার সুস্থতা কামনায় মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগুডায় প্রার্থনা হয়েছে। এতিম, অসহায়রাও তার জন্য রোজা রেখে দোয়া করেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে হাজার হাজার মানুষ বাড়িতে এসে আবেগে বিলাপ করেন। বৃদ্ধা সায়মুনা তাদেরই একজন। সমর বলেন, মুরগী, নারিকেল ও দুধ পেয়ে তিনি ওই নারীকে দুই হাজার টাকা দিতে চাইলেও তিনি নেননি। বলেছেন, আমি গ্রাম থেকে আপনার জন্য ভালবেসে এসব এনেছি। টাকা দিলে আমাকে অপমাণ করা হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উপহার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ