Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিষয়টি অবমাননাকর ও লজ্জাজনক

| প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

পাটুরিয়া ফেরিঘাটে রো রো ফেরি শাহ আমানতের ১৭টি মালবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানসহ কাত হয়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনাটি জনমনে বিষ্ময় ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে লঞ্চ-জাহাজডুবির মত ঘটনা প্রায়শ ঘটলেও এ ধরণের ফেরি ডুবে যাওয়ার কোনো নজির নেই। এ কারণে ফেরিতে চলাচলকে মানুষ নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ বলে বিবেচনা করে আসছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ৫ নম্বর জেটিতে পৌছার পর দু’টি গাড়ী দ্রুত নেমে যাওয়ার পরই শাহ আমানত ফেরিটি ইঞ্চিনসহ একদিকে কাত হয়ে পড়লে ফেরিতে থাকা ১৫টি মালবাহী গাড়ী ও বেশকিছু মোটরসাইকেল নদীতে পড়ে যায়। ফেরিতে সাধারণ যাত্রী না থাকা এবং তীরে এসে অগভীর পানিতে ডুবে যাওয়ায় তেমন প্রাণহানীর ঘটনা না ঘটলেও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নেহাত কম নয়। গতকাল পর্যন্ত ডুবে যাওয়া যানবহনগুলো উদ্ধারে কাজ করছিল উদ্ধারকারি জাহাজ হামজা, রুস্তম এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ছাড়াই শান্তনদীর তীরে এসে ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য লজ্জাজনক।

এ ধরণের যে কোনো দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রথমেই একটি তদন্ত কমিটির ঘোষণা দিয়ে থাকে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয়নি। নৌপরিবহণ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুলতান আব্দুল হামিদকে আহবায়ক করে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানই শুধু নয়, অন্যান্য ফেরির অবস্থা এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে তদন্ত কমিটি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা’ জনমনে ক্ষোভের উদ্রেক করেছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, নৌরুটে চলাচলকারি ৫৩টি ফেরির মধ্যে ৪৭টিরই কোনো ফিটনেস সনদ নেই। বহু আগেই এসব ফেরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। শাহ আমানত ফেরিটির বয়েস ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও মাঝখানে ওভারহোলিং করে তা চালু রাখা হলেও নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষা বা তদারকি করা হয়নি। বিস্তীর্ণ পদ্মায় প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন নিয়ে চলাচলকারি ফেরিগুলোর মেন্টেনেন্স ও মেনেজমেন্টে এমন গাফিলতি মেনে নেয়া যায় না। এমনকি নদী তীরে দুর্ঘটনা কবলিত ফেরিটির উদ্ধারকাজে ঘাটতি ও ব্যর্থতার চিত্রও এখন স্পষ্ট। আটশ টনের বেশি ওজনের ফেরিটি উদ্ধার করতে উদ্ধারকারি জাহাজ হামজা ও রুস্তমের ওজন ফেরির চেয়ে কম হওয়ায় দুইদিনেও ফেরিটিকে ডকে নেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়।

সম্ভবত দীর্ঘদিন কোনো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ফেরির তলা দুর্বল হয়ে ফেটে গিয়ে এই দুঘর্টনা সংঘটিত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দীর্ঘদিনে ইঞ্জিনের পাশাপাশি ফেরিগুলোর বডি বা অবকাঠামোও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অথচ দেশে এসব ফেরির মেরামত ও সংস্কারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে নির্মিত রো রো ফেরি এবং পণ্যবাহী জাহাজ এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। অধিকাংশ ফেরিই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ফিটনেসহীন হয়ে পড়ায় শাহ আমানত ফেরির এই দুর্ঘটনা আমাদের জন্য বিশেষ মেসেজ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বৃটিশ আমলে চালু হওয়া ফেরিগুলো এখনো জোড়াতালি দিয়ে চালানোর ঝুঁকি এখন প্রমাণিত। শাহ আমানত ফেরির দুর্ঘটনা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিআইডাবিলিউটিএ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা দায় এড়াতে পারেন না। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে ট্রাজিক নৌদুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হতে দেখা গেছে। এসব কমিটির রিপোর্টে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার উদাহরণ উঠে আসলেও তাদের কাউকেই জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। এ কারণেই রো রো ফেরির মত ঝুঁকিমুক্ত ও আস্থাশীল নৌপরিবহনও এখন মানুষের কাছে আস্থার সংকটে পতিত হল। পদ্মাসেতুর স্প্যানে বার বার ফেরির ধাক্কা লাগার পেছনে নাশকতার আশঙ্কার পাশাপাশি ফেরিগুলোর ইঞ্জিনের দুর্বলতা এবং চালকদের অদক্ষতারও দায় থাকতে পারে। চলাচলকারি অন্তত ১৪টি ফেরির বয়েস ৪০ বছরের বেশি। সবগুলো ফেরির ইঞ্জিন ও অবকাঠামোগত অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরণের দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে হলে এই দুর্ঘটনার পেছনে যাদের গাফিলতি ও দায়িত্ব অবহেলার যোগসুত্র রয়েছে, তাদের অবিলম্বে জবাবদিহিতা ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিষয়টি অবমাননাকর ও লজ্জাজনক
আরও পড়ুন