পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশ-বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও গুলিতে দলটির ৬০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টন থেকে সম্প্রীতি শোভাযাত্রা করতে গেলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এদিন সকাল ১১টায় নয়াপল্টন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত সম্প্রীতি শোভাযাত্রা বের করার কথা ছিল। কিন্তু সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই ফকিরাপুল, নাইটিঙ্গেল মোড়, নয়াপল্টন এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়, আনা হয় জলকামান, সাজোয়াযান। ফলে ওই এলাকায় একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে বিএনপি নেতাকর্মীরাও নয়াপল্টনে উপস্থিত হতে থাকেন। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টার আগেই ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে শোভাযাত্রা পরিণত হয় সমাবেশে। নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফ্যাস্টুন হাতে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত করেন।
চারিদিকে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে বিএনপি শোভাযাত্রার পরিবর্তে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট একটি ট্রাকের উপর মঞ্চ বানিয়ে বক্তব্য রাখেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষের পর ছাত্রদল নেতা ইসহাক সরকারের নেতৃত্বে একটি মিছিল শুরু করে। সেই মিছিলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কয়েকরাউন্ড টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলটি নয়াপল্টন থেকে কাকরাইলের দিকে যাওয়ার সময় মাঝামাঝি পথে দুই পাশের গলিতে অন্তত ১০ মিনিট এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর বিপুল সংখ্যক পুলিশের সদস্য বিএনপি কার্যালয়ের দু’পাশে অবস্থান নেয়।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তাহেরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলাম। নাইটিংগেল মোড়ের দিকে একটু এগোতেই দু’পাশ দিয়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। আমাদের শরীরে, ঘাড়ে পিঠে লাথি দেয়। যেভাবে ইচ্ছে (পুলিশ) ব্যবহার করেছে। তিনি নিজেও পিঠে-কোমরে আঘাত পেয়েছেন বলে দাবি করেন এই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। পুলিশের পক্ষ থেকে নেতাকমীদের মিছিল থেকে লাঠি নিক্ষেপের অভিযোগ করা হয়েছে, এমন প্রশ্নে তাহেরুল ইসলাম বলেন, না, পুলিশ প্রথমে আক্রমণ করেছে, লাঠিপেটা করেছে।
অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বলা হয়, সমাবেশ থেকে তাদের দলীয় নেতা (মির্জা ফখরুল) মিছিল করবেন না বলে জানালেও তারা একটি মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে কোনও ধরনের উসকানি ছাড়াই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। মতিঝিল জোনের এডিসি এনামুল হক মিঠু বলেন, আজ অনুমতি ছাড়াই বিএনপির একটি কমর্সূচি ছিলো। তারপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে ছিলাম। কিন্তু সমাবেশ শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরা নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশের উপর অতর্কিতে উসকানিমূলক আচরণ করে। পরে আমরা তাদের লাঠিচার্জ করি। ছত্রভঙ্গ করে দেই। তিনি জানান, সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন পুলিশ আহত হয়েছে। সংঘর্ষের পর অন্তত ৩০ নেতাকর্মীকে আটক করার কথাও জানান তিনি।
পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রক্ষা করতে সরকারের চরম ব্যর্থতার প্রতিবাদে আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির শেষে একটা শান্তির মিছিল করার কথা ছিল। প্রথম দিকেই শুরু হয়েছে পুলিশের লোকেরা নেতাকর্মীদের আটক করেছে। পরে সমাবেশের পর নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরে যাচ্ছিল। এসময় পুলিশ অতর্কিতে তাদের উপর হামলা করেছে। তাদের উপর লাঠিচার্জ করেছে, টিয়ারগ্যাসের শেল ছুড়েছে, গুলি করেছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। অনেককে গ্রেফতার (আটক) করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এই সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। গণতান্ত্রিক স্পেসটুকু সংকুচিত করে দিচ্ছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে দেওয়া হয় না। সুতরাং এই সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ ব্যাপারটা আর নাই। তারা শান্তিতে বিশ্বাস করে না।
এদিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ব্যর্থতার প্রতিবাদে বিএনপি ঘোষিত শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা ও গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসময় শতাধিক নেতাকর্মী আটক ও ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রুহুল কবির রিজভী জানান, আটক নেতাকর্মী হলেন- কৃষক দলের মো. শাখাওয়াত হোসেন নান্নু, নারায়ণগঞ্জ তাঁতীদলের এ আর বি মামুন, আবদুর রেজ্জাক, যুবদলের মো. ফরিদ, চায়না সুমন, মো. জসিম, রেজাউল ইসলাম প্রিন্স, মো. সুমন, ইউনুস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মো. রাসেল, মো. রাকিব, বদরুল, জুয়েল, মো. শুক্কুর, মোঃ তুহিন, রাকিব, রাসেল, সালাহউদ্দিন, মহিউদ্দিন, ইমরান গাজি, ছাত্রদলের মো. মুতাছিন বিল্লাহ, মো. জেহাদুল রঞ্জু, মো. আবু সুফিয়ান, আবু হান্নান তালুকদার, জাসাস নেতা হাজী আবদুল কাইয়ুম, মো. জসিম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রুস্তম আলী, বাবুল আহমেদ মুন্না, শাহাদাৎ হোসেন, নাসির উদ্দিন বিপ্লব, বোরহান উদ্দিনসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
এছাড়া পুলিশের গুলি ও হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন- যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বাক গোলাম মাওলা শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দল দক্ষিণের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, যুবদলের মিজান, টুটুল, হানু মিয়া, মোস্তফা, শফিকুল আলম রুবেল, পল্টন থানা বিএনপি নেতা মো. আনোয়ার হোসেন গুলিবিদ্ধ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা জিয়াউল আনোয়ার, জাহিদ, স্বপন, সুফিয়ান, চন্দন, শামসুদ্দিন ভুইয়া, আব্দুর রশিদ, আমির হোসেন, সাত্তার, শামিম, যুবদল নেতা মইন, মোহন মোল্লা, জাবেদ ইকবাল, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মনিরা আক্তার রিক্তা, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশিতা, শওকত আরা উর্মি, মহিলা দলের সোনিয়ারা, নাসরিন, ছাত্রদলের ওমর ফারুক কাওসার, এমদাদুল হক ভূঁইয়া, সুজন মোল্লা, মিল্লাত উদ্দিন ভূঁইয়া, আজিমুল হাসান চৌধুরী, মো. মহসিনসহ ৬০ জনের অধিক নেতাকর্মী। রিজভী পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক হামলা এবং নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।