পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কেন এবং কোন বাস্তবতায় বিশ্বকে চলমান ‘জঙ্গি’ সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে সে আলোচনা নতুন করে না করলেও এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্বশীল আহ্বানকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা না করে উপায় নেই। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মহাসচিব বান কি মুন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো জঙ্গিবাদী সংগঠনকে রুখতে মানবাধিকার লংঘন না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কঠোর পন্থা নেয়ার ফলে জঙ্গিবাদ বরং বেড়ে গেছে। তিনি বলেছেন, অপরিকল্পিত নীতি ও কঠোর পন্থা অবলম্বন করে জঙ্গিবাদ নির্মূলের চেষ্টা হয়েছে। এতে উপেক্ষিত হয়েছে মানবাধিকার। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এসব পন্থা নেয়ার ফলে জঙ্গিবাদ বেড়েছে। ভুল নীতির ফলে আমরা নিষ্ঠুর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে হেরে চলেছি। এ ধরনের নীতি মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। কোণঠাসা হওয়া মানুষ দিন দিন আরো কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। আর এর ফলে শত্রুদের হাতই শুধু শক্তিশালী হচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, আমাদের মাথা ঠা-া রাখতে হবে এবং সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মসজিদে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিরোধী নেতা জেরেমি করবিন। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ব্রিটেনের যেসব শহরে নানা দেশের ও নানা জাতির লোকেরা সৌহার্দ্যরে সাথে বসবাস করে আমি তাকে সেসব শহরে যেতে বলব, মসজিদে যেতে বলব। তাদের সাথে কথা বলতে বলব। তাদের কাছ থেকে তিনি কিছু শিখতে পারবেন।
আইএস নিয়ে চলমান আলোচনা হঠাৎ করে আলোচনায় আসেনি। আইএস অধ্যুষিত এ অঞ্চল একরমক শান্তিই বিরাজমান ছিল। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব এমনকি পোপের আহ্বানকেও অস্বীকার করে সে সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার প্রধানমিত্র ব্লেয়ার মিলে অসত্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে ইরাক-আফগানিস্তানে যে নৃশংস হামলা চালিয়েছে কার্যত তার মাশুলই এখন দিচ্ছে বিশ্ব। প্রতিরোধের মুখেই ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্যদের এক প্রকার বিদায় হতে হয়েছে। দখলদারবাহিনী হিসেবে সেখানে অবস্থানকালে সৈন্যরা যেভাবে মানবাধিকার লংঘন করেছে বোধকরি আধুনিক সভ্যতায় তার অন্যকোন উদাহরণ নেই। অথচ এসব ঘটনার জন্য কেউই দুঃখ প্রকাশ করেনি। ভুল স্বীকারও করেনি। একথাও বলার অপেক্ষা রাখে না, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই বিশ্বজুড়ে মুসলমান নিধনের তত্ত্ব গৃহীত হয়েছিল। সেখানে মুসলিমবিদ্বেষী নানা ধরনের চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। যে ৯/১১-এর ঘটনার সূত্র ধরে পুরো ব্লেইম গেইমের উৎপত্তি তার সাথে কারা জড়িত আজ পর্যন্ত তা নিয়ে কোন নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি। ফলে চরম বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে মুসলমানরা। আন্তর্জাতিক ইহুদিবাদের চক্রান্তের কারণে বিশ্ব এখন কার্যত বিপর্যস্ত। এখানে অবশ্যই ভাববার রয়েছে, ইরাক-আফগানিস্থানে মার্কিনবাহিনী যাদের ধরেছে তাদের একটি বড় অংশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহের নাগরিক। কেন এবং কি কারণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জীবন ছেড়ে তারা ঝুঁকিপূর্ণ জীবন বেছে নিয়েছিল তাও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এই বাস্তবতায় মার্কিন নির্বাচনে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বারাক ওবামা। প্রথম মেয়াদে নির্বাচিত হবার পরপরই তিনি মিশরে এসে মিশরবাসী এবং সেই সাথে বিশ্বের কাছে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখনও তিনি অনুরুপ আহ্বানই জানাচ্ছেন। তিনি মুসলমানদের অপমান না করার বরং তাদেরকে সম্মান করার জন্য মার্কিনবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। জঙ্গিবাদ নির্মূলে জাতিসংঘের মহাসচিবের সুপারিশেও অনুরূপ কথাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের একপেশে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রায়ই প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা হয়। কারও মুখ বন্ধ করতে বা কাউকে বাধা দিতে কোন সরকারেরই এ ধরনের আচরণ করা উচিৎ নয়। জঙ্গিবাদ সব সময়ই এধরনের পরিস্থিতির সুযোগ নেয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোন সমস্যারই সমাধান সম্ভব নয়। বল প্রয়োগের ফল কখনোই ইতিবাচক হয়নি, হতে পারে না। যারা আক্রান্ত হয় তারা আরো শক্তিসঞ্চয় করে দ্বিগুণ বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে প্রতিহিংসাই বাস্তবায়িত হয়। ইসলাম কোন বিবেচনাতেই জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। ইসলামের প্রধান কাজ দাওয়াত দেয়া। এখানে সংঘর্ষের কোন অবকাশ নেই। কার্যত সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব তথা কোন কোন মহলের আচরণের কারণেই যারা সংক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ তাদের আলোচনাই এখন বিশ্বজুড়ে ঠাঁই পেয়েছে। সুতরাং সমাধান কেবলমাত্রা আলোচনার মাধ্যমেই বেরিয়ে আসতে পারে। সে বিবেচনায় জাতিসংঘের মহাসচিবের আহ্বান সময়োপযোগী। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এতে ইতিবাচক সাড়া দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।