নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের হতাশাজনক হারের পর গত দুইদিনে হারের কারণ হিসেবে সমর্থক-বিশ্লেষক-গণমাধ্যম সকল শ্রেণীর আঙ্গুল ঘুরেফিরে তিনটি দিকেই ইঙ্গিত করছে- মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টানা তিন ওভার পার্টটাইমার দিয়ে বোলিং করানোর সিদ্ধান্ত, লিটন দাসের দুটি ক্যাচ মিস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের এক ওভারে ২২ রান দেওয়া।
তবে এই তিনটির বাইরেও হারের নতুন আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি এবারে তুলে ধরলেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক দীর্ঘ পোস্টে খেলোয়াড়দের দায়ের পাশাপাশি টিম ম্যানেজমেন্ট তথা প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কিছু ভুলের দিকও তুলে ধরেছেন ম্যাশ। ঝেড়েছেন বর্তমান কোচিং প্যানেলের প্রতি নিজের তীব্র ক্ষোভও। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলিতে অধিনায়কের সাথে কোচের বোঝাপড়ার তীব্র অভাব টের পেয়েছেন মাশরাফি, দিয়েছেন এর যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাও।
“ম্যাচের ৯.৪ ওভার ৭৯ রানে ওদের ৪ উইকেট, ঠিক তখন আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ড্রিংকস ব্রেক। তার মানে কোচ মাঠের ভিতর আসবে। আমাদের কোচও এসেছিল। তাহলে উনি এসে রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) সাথে কি কথা বলেছিল? যদি বলে থাকে, তাহলে কি সব দায় রিয়াদের?”- পোস্টে বলেছেন মাশরাফী
“মানলাম, অন ফিল্ড ক্যাপ্টেন’স কল ইজ ফাইনাল। তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ক্রাঞ্চ মোমেন্টে কি কোচ ডিসকাশন করে না? ক্যাপ্টেন তখন বিভিন্ন বিষয়ে চাপে থাকে। তার প্ল্যান কী, এটা কি জানতে চেয়েছিল কোচ? আর যদি কথা হয়ে থাকে, তাহলে কি কোচের প্রেস হ্যান্ডেল (প্রেস কনফারেন্সে) করা উচিত ছিল না? কারণ রিয়াদের ভুলটা ধরা হয়েছে ঠিক ঐ সময় থেকেই।”– আরো যোগ করেছেন তিনি
১২, ১৩, ১৪- টানা তিন ওভারের দুই ওভার নিজে করেছেন, এক ওভার আফিফ হোসেনকে দিয়ে করিয়েছেন। অনেকের চোখেই ওই তিন ওভারে রিয়াদের এই ‘অদ্ভুতুড়ে’ সিদ্ধান্তই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে। যদিও আফিফের বলে একটি ক্যাচ উঠেছিলো, যেটি ধরতে ব্যর্থ হন লিটন। সমগ্র ব্যাপারটিতে রিয়াদ বা লিটনের ‘ভুল’কে কে এতোটা শূলে চড়ানোতে ম্যাশ জানিয়েছেন আপত্তি। বরং এখানেও কোচের সামান্য দায় দেখছেন তিনি।
“১১ নাম্বার ওভার করে মেহেদি, দলের মূল বোলার। ১২ নাম্বার ওভার করে রিয়াদ, সম্ভবত ৫/৬ রান দেয় (৫ রান)। ১৩ নাম্বার ওভার করে আফিফ, যে ওভারে ১৫ রান হয়। কিন্তু রিয়াদ যে চিন্তা থেকে আফিফকে এনেছিল, সেটাতেও কিন্তু সুযোগ তৈরি হয়েছিল। যদি সুযোগ হাতছাড়া না হতো, তাহলে আমরা বলতাম দারুণ ক্যাপ্টেন্সি।”
“ক্যাচ মিসের অযুহাত না দিলেও এটাই সত্য, ক্যাচ মিস এই প্রথম হয়নি। আর লিটন দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন। কোনো কোনো সময় ভাগ্যটাও সাথে থাকতে হয়। তাহলে স্রেফ দল সফল না হওয়ার কারণে, এই দুজনকে (মাহমুদউল্লাহ ও লিটন) এতটা তুলাধুনা করা কতটা ঠিক, আমি শিওর না। ঠিক এ কারণেই আমার মনে হয়েছে, যদি কোচ এ বিষয়ে রিয়াদের সাথে কথা না বলে থাকে, তাহলে তো ব্রেকের সময় দলের টিম বয়কেই মাঠে পাঠিয়ে দেওয়া যায় হাই-হ্যালো করতে, কোচের আর প্রয়োজন কী!”
নাসুমকে ওই ম্যাচের জন্য একাদশে ফেরানো হলো, কিন্তু দুই ওভার পর ওকে বোলিং দেওয়া হলো একেবারে ১৯তম ওভারে। এই সিদ্ধান্ত রিয়াদের হলেও মাশরাফী মনে করছেন, রিয়াদকে সঠিক পথ দেখানো ছিলো কোচের কর্তব্য।
“যখন নাসুমকে নেওয়া হয়েছে, তাহলে ব্রেকের সময় কোচ রিয়াদকে কি বলেছে যে, ‘নাসুম দলের মুল বোলার ওকে ব্যাক করো?’ কারণ ঐ নাসুমই ব্রেকটা পরে দিয়েছে (রাজাপাকসাকে আউট করে), ততক্ষণে ম্যাচ প্রায় শেষ। তাহলে ঐ সময় কোচ কি বসে বসে কোন প্ল্যান না করে শুধু খেলা দেখেছে? আবারও বলছি, সিদ্ধান্ত রিয়াদ নেবে। কিন্তু ওকে তো হেল্প করতে হবে! কারন মাঠে ক্যাপ্টেন কখনও কখনও অসহায় হয়ে পড়ে। আর ঠিক তখনই টিম ম্যানেজমেন্টকে টেক অফ করতে হয়। অন্যান্য দলে তো তা-ই দেখি।”
লিটনের ক্যাচ ছাড়ার জন্য কোনো অজুহাত না দেখলেও বাজে ফিল্ডিংয়ের জন্য ম্যাশ আঙ্গুল তুলেছেন ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুকের দিকে, যিনি বছরের পর বছর ধরে কাজ করছেন কিন্তু দলের ফিল্ডিংয়ের সামগ্রিক উন্নতি ঘটাতে পারেননি একরত্তিও।
“লিটনের ক্যাচ মিসের কোনো এক্সকিউজ দেব না, এমনকি লিটন নিজেও দেবে না। তবে ক্যাচ মিস খেলার একটা অংশই। কিন্তু ফিল্ডিং কোচের কাছে কি এ বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাওয়া হয়? ক্যাচ মিস কি এই প্রথম হলো? ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ম্যানেজমেন্ট এর প্রায় সবাই চাকরি হারিয়েছে, স্রেফ বর্তমান ফিল্ডিং কোচ ছাড়া। তাহলে আমরা বিশ্বকাপে বা তারপর কি সেরা ফিল্ডিং সাইড হয়ে গিয়েছি?”
প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক, ফিজিও জুলিয়ান ক্যালেফাতো- জাতীয় দলে এখন তিনজন সাউথ আফ্রিকান। মাঝখানে কিছুদিন শার্লে ল্যাঙ্গেভেল্টও ছিলেন বোলিং কোচ হিসেবে, তাঁকে সরিয়ে যিনি এসেছেন সেই ওটিস গিবসনও ২০১৭-২০১৯ ছিলেন সাউথ আফ্রিকার প্রধান কোচ। কোচিং প্যানেলে এই ‘সাউথ আফ্রিকা সিন্ডিকেট’ একেবারেই মানতে পারছেন না মাশরাফী। তাঁর দৃষ্টিতে, এই কোচিং প্যানেল শুধু নিজেদের দিক নিয়েই ভাবে, দল নিয়ে নয়।
“এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার, যেখানে সাউথ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচগুলো একসাথে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে। এদের বাদ দেওয়া আরও বিপদ, কারণ চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে। তাহলে দাঁড়াল কি, তারা যতদিন থাকবে আর মন যা চাইবে, তাই করবে।”
“হেড কোচ এক-এক করে নিজ দেশের সবাইকে আনছে, এরপর যারা অস্থায়ীভাবে আছে, তাদেরও সরাবে আর নিজের মতো করে ম্যানেজমেন্ট সাজাবে। তাও মেনে নিলাম কিন্তু রাসেল (হেড কোচ) ম্যানেজমেন্টের জন্য যেভাবে স্টেপ আপ করে, মূল দলের জন্য তাহলে লুকিয়ে কেন? কেন তামিম, মুশফিক, রিয়াদ ভালো থাকে না? এটা ঠিক করা কি তার কাজ না?”
সবকথার শেষেও দায় যে মাঠে থাকা খেলোয়াড়দের এটি স্বীকার করেছেন মাশরাফী। তবে খেলোয়াড়দের কাঁধে টিম ম্যানেজমেন্টের হাত রয়েছে, দলে এমন আবহ তৈরি করার দিকে জোর দিয়েছেন সাবেক এই অধিনায়ক। দলকে জানিয়েছেন আগামী ম্যাচগুলোর জন্য শুভকামনাও।
“আমি আমার ক্যাপ্টেন্সির শেষ প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলাম, এই দলের কোচ যে-ই হোক না কেন, এখন এই দলের রেজাল্ট করার সময়, এক্সপেরিমেন্টের না। কোচের চাহিদা মেটানোর আগে আমাদের দেশের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। কারণ, ক্রিকেট দেশের মানুষের কাছে এখন স্রেফ খেলা নাই, রীতিমতো আবেগে পরিণত হয়েছে। ভালো করুক আমার প্রিয় দল। আল্লাহ সহায় হোন আমাদের।”
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।