Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তিস্তার পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের ৩ উপজেলার ৪০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি

রবিশস্যসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা

রংপুর থেকে স্টাফ রিপোটার | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২১, ৬:২৮ পিএম | আপডেট : ৭:৪১ পিএম, ২১ অক্টোবর, ২০২১

উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের সবকয়টি গেট খুলে দেয়ায় তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৩০টি, কাউনিয়া উপজেলায় ১০টি ও পীরগাছা উপজেলার ৫টি গ্রাম হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে। ওইসব গ্রামের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। রবিশস্যসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভানা দেখা দিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ভারতে প্রবল বর্ষণ এবং পাহাড়ী ঢলের কারনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারেজের সবক’টি গেট খুলে দিয়েছে। এতে বুধবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি আকস্মিকভাবে বাড়তে শুরু করে এবং ১২টা নাগাদ ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি এবং পানির প্রবল ¯্রােতে তিস্তা ব্যারেজ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ড রেড এ্যালার্ট জারি করে এবং তিস্তার চরাঞ্চলসহ আশপাশের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। আকস্মিক এবং অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারনে তিস্তা বিধৌত নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে একের পর এক গ্রাম তলিয়ে যেতে শুরু করে। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে বিভিন্ন বাঁধ। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পানির প্রবল ¯্রােতে ভেঙে যায় তিস্তা ব্যারেজের লালমনিরহাট অংশের একটি ফ্লাড বাইপাস। নি¤œাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পানির প্রবল ¯্রােতের কারনে পাউবো কর্তৃপক্ষ তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেন। ব্যারেজের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত ফ্লাড ফিউজ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। এতে বুড়িমারী, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধার সঙ্গে নীলফামারী জেলার সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারী জেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ নামক স্থানে প্রায় ৪’শ মিটার গ্রোয়েন বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে করে ওই উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারীসহ ১০টি ইউনিয়ন এলাকার ২৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পানিবন্দী হয়ে পড়েন প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ। চরাঞ্চলের এসব এলাকার বাড়িঘরে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি উঠেছে। পানির নিচে তলিয়ে যায় এলাকার সকল রাস্তা-ঘাট।
গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ, মর্নেয়া, লক্ষ্মিটারি, আলমবিদিতর, নোহালী, কচুয়া এবং গজঘণ্টা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে এখনও হাটু থেকে কোমর পরিমাণ পানিতে তলিয়ে আছে। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় শত শত পরিবার বাড়ি ছেড়ে তিস্তা নদী রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ ১০টি গ্রাম কোমর তলিয়ে গেছে। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় কয়েক হাজার পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
পীরগাছা উপজেলার ৫টি গ্রামে হাঁটুর উপরে পানি। এসব গ্রামের ফসলি জমিসহ বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটও পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে, আকস্মিকভাবে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় চরাঞ্চলের সবজিসহ ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দু’দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। চরের নিম্নাঞ্চলে রোপনকৃত ধান, আলু ও রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন চরে কয়েক শ হেক্টর জমিতে রোপনকৃত আগাম জাতের আলু নষ্ট হয়ে যাওয়া পথে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং সন্ধ্যা নাগাদ আরও ১০ সেঃ মিঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। তবে পানি কমলেও বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানিয়েছেন, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়লেও এখন কমতে শুরু করেছে। ডালিয়া ও গঙ্গাচড়া পয়েন্টে পানি কমেছে। কাউনিয়া পয়েন্টেও কমতে শুরু করেছে। রাতের মধ্যে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। ## হালিম আনছারী, রংপুর। ২১-১০-২১

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানিবন্দি

১৭ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ