Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ছাতকে আবারো বন্যা, বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত: লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২২, ৫:৩৮ পিএম

সুনামগঞ্জের ছাতকে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার সবত্রই এখন দেখা দিয়েছে বন্যা। এক মাসের ব্যবধানে আবারও বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও হাট-বাজার। উপজেলার সর্বত্রই এখন বন্যার পানি থৈ-থৈ করছে।

বুধবার (১৫ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এখানে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদী সহ সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ও নদ- নদীর পানি প্রবল বেগে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ধারণা ছাতকে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ইতিমধ্যে উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলা সদরের সাথে ১৩ ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শহরের অদুরে রহমতবাগ এলাকায় তলিয়ে গেছে ছাতক-সিলেট সড়ক। দুপুর থেকে সিলেট সহ সারা দেশের সাথে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শহরের অলি-গলি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ভরপুর । ছাতক-আমবাড়ি দোয়ারা সড়ক, ছাতক-জাউয়াবাজার, নোয়ারাই -বালিউরা, নরশিংপুর, চৌমুহনীবাজার, লক্ষীবাউর সড়ক, কৈতক-হায়দরপুর, জালালপুর-লামারসুলগঞ্জ, জাউয়া-বড়কাপন, মুক্তিরগাও, গোবিন্দগঞ্জ-লাকেশ্বর বাজার, বুরাইয়া, দোলার বাজার, কালারুকা, হাসনাবাদ, কান্দিগাও, হাদা, মাদরাসা বাজার সড়কসহ গ্রামীণ সব ক'টি সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। গ্রামীণ হাট বাজার ছাড়াও ছাতক পৌরশহর, নোয়ারাই বাজার, ফকির টিলা, পেপার মিল, কুমনা, মুক্তিরগাও, রহমতবাগ, মন্ডলীভোগ, ছোরাব নগর, চরেরবন্দ এলাকার শত-শত বাসা-অফিস ও দোকানে বন্যার পানি ঢুকেছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে গোবিন্দগঞ্জ, দোলারবাজার, ধারণ বাজার, জাউয়াবাজার, আলীগঞ্জ বাজার, পীরপুর বাজার, কপলাবাজার, বুরাইয়াবাজার, জাহিদপুর বাজার, কামারগাঁও বাজার, হাজীর বাজার, মাদরাসা বাজার, হাদা বাজার, লক্ষীবাউর বাজার, হাসনাবাদ বাজার, কালারুকা বাজার, আমেরতল বাজারসহ সকল গ্রামীণ হাট। অনেকেই দোকান ও বাসাবাড়ির মালামাল সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারনে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে ব্যাপক হারে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শহরের সকল চুনশিল্প কারখানা, ক্রাশার মিল বন্ধ। সুরমা নদীতে নৌকা-কার্গো লোডিং আন লোডিং বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে শত-শত শ্রমিক এখানে বেকার।

একাধারে ভারী বর্ষণের কারণে জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাচনী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের দেয়া তথ্যমতে বুধবার (১৫ জুন) সকাল পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশন ২৬৮, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ১.৭৪ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত। ফলে নদ-নদীতে সীমিত আকারে বড় নৌ-যান চলাচল করছে। পানি বন্দি হয়ে পড়া মানুষের জন্য ত্রাণ ও ইউনিয়নে-ইউনিয়নে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র খোলার জন্য দাবী করেছেন উত্তর খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ।

নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আবদুল খালিক রাজা জানিয়েছেন, ইউনিয়নে অনেক মৎস্য খামার, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে সকল হাটবাজার। শত-শত বসত ঘরে বন্যার পানি ঢুকেছে।
ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেল জানান, বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কাঁচা ঘরবাড়ি। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। তার ইউনিয়নের সকল মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যার পানি থানা আঙ্গিনায় প্রবেশ করেছে। থানার সামনের একমাত্র সড়কটিতে হাটুজল পানি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর এলাকায় ও অফিসে বন্যার পানি। পরিষদের অধিকাংশ বাসায়ও পানি ঢুকে গেছে। ছাতক পেপার মিল হাই স্কুল, বৌলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মন্ডলীভোগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬০ পরিবার ইতিমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রয়োজনে আরো আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ