একটা শঙ্কার কথা দিয়েই শুরু করি, পরের ম্যাচে ওমানের কাছে হেরে গেলে বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠার আগেই বিদায় নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে এখন বিদায়ের শঙ্কাতেই টিম বাংলাদেশ।
১৪১ রানের টার্গেট খুব একটা বড় চিন্তার কারন হবার কথা ছিলনা বাংলাদেশের জন্য। প্রস্তুতি ম্যাচের ফলের পর একাদশে নেই নাইম শেখ। তার পরিবর্তে ওপেনিংয়ে ফিরিয়ে আনা হয় সৌম্য সরকারকে। প্রথম বলেই ফ্লিক শটে চার মেরে আত্মবিশ্বাসী সৌম্য জানান দিলেন ফর্মের। প্রথম ওভারের বাকি বল দেখে শুনেই খেললেন দুই ওপেনার।নতুন বলে সিম কাজে লাগিয়ে দারুন কিছু মুভমেন্ট আদায় করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সেটিতে পিছিয়ে ছিলেননা স্কটিশরাও৷ হালকা মুভমেন্টেই পরের ফ্লিকশটে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারলেন না সৌম্য সরকার। পাঁচ বলে পাঁচ রান করে ফিরলেন প্যাভিলিয়নে। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন সাকিব আল হাসান।
৩ ওভার ৩ বলের সময় ১৮ রানে দলের দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। হুইলের বলে ডাউন দ্য উইকেট খেলতে গিয়ে ৭ বলে ৫ রান করে ফিরে যান লিটন দাস। চার নম্বরে বড় দ্বায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করতে নামেন মুশফিকুর রহিম।
প্রথম ছয় ওভারে ডটের পর ডট বল বাংলাদেশের আস্কিং রান রেট বেড়ে যাচ্ছিলো অনেক। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ মাত্র ৪ দশমিক ১৭ রানরেটে সংগ্রহ করে ২৫ যেখানে ১৪ বলে সাকিবের রান ৯ এবং মুশফিকের রান ১০ বলে ৪। পাওয়ার প্লের পরের দুই ওভারে স্কটল্যান্ড অধিনায়ক দুইজন স্পিনারকে বোলিংয়ে আনেন।
তাদের সামনেও যেন বন্দী সাকিব-মুশফিক। ঠিক তারপরই যেন দ্বায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। নবম ওভারে মুশফিকের ব্যাক স্কুপ আর স্লগ সুইপের টানা দুই ছক্কার পর ১৬ রান তুলে নিলো বাংলাদেশ। দশ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫৯ রানে দুই উইকেট।
১২ তম ওভারের শুরুতেই অস্বস্তিতে থাকা সাকিব ফিরে যান সহজ এক বলে ছক্কা মারতে গিয়ে। ম্যাচ বাঁচাতেই কিনা একটু আগেভাগে নামলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩৬ বলে ৩৮ রান করে মুশফিকুর রহিম আউট হয়ে গেলে বড় বিপদের সামনে পরে যায় বাংলাদেশ।
৭৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ঢুকছে বাংলাদেশ তখন উইকেটে আসেন আফিফ। ১৪ ওভারের পরে বাংলাদেশের আস্কিং রানরেট দশের উপরে চলে যায়। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ শুরু থেকেই আক্রমনাত্বক হবার চেষ্টা করলেও তেমন ব্যাটে বলে করতে পারছিলেন না।
শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ৫৪ রান।১৬ তম ওভারে বাংলাদেশ করতে পারে মাত্র ৫ রান। শেষ চার ওভারে বারো রানের বেশি রান রেটে বাংলাদেশকে করতে হতো ৪৯। ১৭ তম ওভারে বাংলাদেশ বারো রান নিলে শেষ তিন ওভারে রান দরকার আর ৩৬।১২ বলে ১৮ রান করে আফিফও আউট হলে বাংলাদেশ নিজেদের পরাজয় দেখতে থাকে প্রায়। ১৮ তম ওভারে বাংলাদেশের পকেটে যোগ হয় ৪ রান, শেষ বারো বলে দরকার ৩২। শেষ ওভারের শুরুতে আউট হয়ে যান নুরুল হাসান সোহানও। এরপর মাহমুদউল্লাহর ছক্কার পর সে হিসেব গিয়ে দাড়ায় ৮ বলে ২৫ রানে।
২২ বলে ২৩ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও৷ শেষ ৭ বলে বাংলাদেশের রান দরকার ২৫। শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৪ রান। বাংলাদেশ করতে পারে ১৭ রান। স্কটল্যান্ড ম্যাচটি জিতে নেয় ৬ রানে৷
বাংলাদেশের চাই ১৪১ রান
ইনিংসের শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসেছেন মোস্তাফিজ। ওভারের দ্বিতীয় বলে ৪৫ রান করা গ্রিভসকে সাকিবের হাতে ক্যাচ বানিয়ে পরের বলে বোল্ড করলেন জশ দেভীকে। হ্যাট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েও পারলেন না মুস্তাফিজ। এই ওভারে ফিজ দিলেন ৭ রান। ২০ ওভার শেষে স্কটল্যান্ডের রান ১৪০ রান। ম্যাচ জিততে বাংলাদেশকে করতে হবে ১৪১ রান।
মালিঙ্গাকে ছাড়িয়ে সবার উপরে সাকিব
রিচি বেরিংটনকে ফিরিয়ে লাসিথ মালিঙ্গাকে স্পর্শ করেছিলেন সাকিব আল হাসান। একই ওভারে মিচেল লিস্ককে ফিরিয়ে মালিঙ্গাকে ছাড়িয়ে যান তিনি। তাতে ১০৮ উইকেট নিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক সাকিব।
মেহেদির জোড়া আঘাত
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল হলেও প্রত্যাশার চাপ তো থাকছেই। এমন ম্যাচে শুরুটা বেশ ভালো হয়েছে টাইগারদের।
আল আমেরাতে টস ভাগ্য সহায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। স্কটল্যান্ডকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশি বোলাররা দারুণ সূচনা এনে দিয়েছেন অধিনায়ককে।
তাসকিন আহমেদকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম ওভারে তাসকিন দেন মাত্র ৪ রান। মুস্তাফিজুর রহমান পরের ওভারে আরও মিতব্যয়ী, খরচ করেন ১।
তৃতীয় ওভারে আবারও বোলার বদল। এবার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে আক্রমণে আনেন মাহমুদউল্লাহ। প্রথম তিন বল ডট দিয়ে চতুর্থ বলেই সাফল্য পান সাইফউদ্দিন। টাইগার পেসার পরিষ্কার বোল্ড করেছেন কাইল কোয়েতজারকে (৭ বলে ০)।
ক্রস খেলতে গিয়েই আউট হয়েছেন ম্যাথিউ ক্রস। ইনিংসের অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে শেখ মাহেদি হাসান এলবিডব্লিউ করেছেন তাকে (১৭ বলে ১১)। এর তিন বল পর তিনি বোল্ড করেছেন ভয়ংকর জর্জ মুনসেকেও (২৩ বলে ২৯)।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৯ ওভার শেষে স্কটল্যান্ডের সংগ্রহ ৩ উইকেট ৫০ রান। রিচি বেরিংটন ২ আর কলাম ম্যাকলিওড ৩ রানে ব্যাট করছেন।
পাওয়ার প্লেতে স্কটল্যান্ড ৩৯/১
পাওয়ার প্লের দুই অর্ধ বাংলাদেশের কেটেছে দুই রকম। প্রথম তিন ওভারে তিন পেসার ছিলেন আঁটসাঁট। পরের তিন ওভারে বেশ রান এসেছে।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৩৯ রান করেছে স্কটল্যান্ড। ১৮ বলে দুটি করে ছক্কা ও চারে ২৬ রানে খেলছেন জর্জ মানজি। ম্যাথু ক্রস ৮ বলে করেছেন ১২ রান।
প্রথম তিন ওভারে স্কটল্যান্ড করেছিল ১ উইকেটে ৭। পরের ৩ ওভারে এসেছে ৩২।
বোলিং এলোমেলো হয়ে যাওয়ার শুরু তাসকিন আহমেদের ‘নো’ বল দিয়ে। সেই বলে ক্যাচের চেষ্টায় সফল হননি সাকিব আল হাসান। উল্টো হাত থেকে ফস্কে হয়ে যায় ছক্কা। পরের দুই ওভারে খরুচে ছিলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও মুস্তাফিজুর রহমানও।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ পাওয়ার প্লেতে বোলিং আনেনি কোনো স্পিনারকে।
সাইফউদ্দিনের ইয়র্কারে শূন্যেই শেষ কোয়েটজার
তৃতীয় ওভারে দলকে সাফল্য এনে দিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ওভারের চতুর্থ বলটি ব্লকহোলে ইয়র্কার দেন সাইফউদ্দিন।কোয়েটজার ব্যাট নামাতে না নামাতেই বল সরাসরি আঘাত হানল স্টাম্পে। ৩ ওভার শেষে ১ উইকেট হারিয়ে স্কটিশদের রান ৭।
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। শুরুতেই অবশ্য একটা ‘জয়’ পেয়ে গেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচে টস জিতেছেন তিনি, নিয়েছেন ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত।
বিশ্বকাপে নিজেদের শুরুর ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত কেন? এর জবাবে অধিনায়ক রিয়াদ জানান, মূলত সন্ধ্যায় শিশির-নিয়ামকের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার ভাষ্য, ‘দেখে ভালো উইকেট মনে হচ্ছে। অনেক রান হবে। কিন্তু আমরা এই ম্যাচে রান তাড়া করতে চাই, এর কারণ হচ্ছে শিশির।’
সে ভাবনা স্কটল্যান্ড অধিনায়ক কাইল কোয়েটজারের মগজেও আছে। তবে আগে ব্যাট করাতেও খুব একটা সমস্যা নেই তার, বরং একটা সুবিধাও দেখলেন তিনি। বললেন, ‘যাই হোক, আমরা খুশি। শুরুতে ব্যাট করতে পেরে আনন্দিত। কারণ আপনি স্কোরবোর্ডে রান জমা করতে পারবেন, দ্বিতীয়ার্ধে যা প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।’
তবে শেষ অর্ধে যে শিশিরও একটা অসুবিধা হয়ে যাবে, সেটাও ভুলে যাচ্ছেন না তিনি। বললেন, ‘শেষ দিকে কিছুটা শিশির একটা নিয়ামক হয়ে দাঁড়াতে পারে, তবে সেটাকে আমাদের ভালোভাবেই সামলাতে হবে।’
বাংলাদেশ একাদশ
লিটন দাস, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান, মাহাদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
স্কটল্যান্ড একাদশ
কাইল কোয়েটজার, জর্জ মুন্সি, ম্যাথিউ ক্রস, রিচি বেরিংটন, ক্যালাম ম্যাকলয়েড, মাইকেল লিস্ক, ক্রিস গ্রিভস, মার্ক ওয়াট, জশ ডেভি, সাফিয়ান শরীফ, ব্র্যাড হুইল।