২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মহামারি করোনার কবলে যখন সারাদেশের মানুষ দিশেহারা। এরই মাঝে মশা বাহিত প্রাণঘাতী ডেঙ্গু রোগ যুক্ত হয়ে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। আমাদের সচেতনতার অভাবে ডেঙ্গু রোগ ব্যাপক বিস্তার লাভ করছে। মানুষ সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করলে এ রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব। ডেঙ্গু জ¦র সাধারণ ভাইরাস জ্বর হতে অনেক বেশি তাপমাত্রা হয় এবং শরীরে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু হলে অনেক সময় রক্তে পানীর পরিমান ও অনুচক্রিকার সংখ্যা কমে যায়। আর তখনই রোগীর বিপদ হয়ে দাড়ায়। সচেতন ও উপযুক্ত খাবার গ্রহণে ডেঙ্গু রোগ হতে তাড়াতাড়ি সুস্ত্যতা ফিরে পাওয়া যায়। তাই ডেঙ্গু রোগীদের সুস্ত্যতার জন্য যেসব খাবার বেশি প্রয়োজন ও উপকারি তা জেনে নিন। ডেঙ্গু হলে প্রায়ই ডায়রিয়া দেখা এবং খাওয়ার রুচি কমে যায়। রোগী খেতে চায় না। তাই সুস্থ্যতার জন্য রোগীর সেবাকারী বা অভিবাবকগণ সচেতন হয়ে খাবার খাওয়াতে হবে। এসময় শিশু বা প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রচুর পরিমাণে পানি বা তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার খুবই প্রয়োজন। তার সাথে লেবুর শরবত, টাটকা ফলের রস, সুপ, ডাবের পানি ও খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। নিজের ঘরের তৈরী টাটকা অন্যন্য খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে যেকোনো মানুষের শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যাক্তি প্রতি ঘণ্টায় ৭ মিলিলিটার তরল বা পানি বা জলীয় খাবার খেতে হবে। সেই হিসাব মতে প্রাপ্ত বয়স্ক ৬০ কেজি ওজনের এক ব্যক্তি প্রতি ঘণ্টায় ৪২০ মিলিলিটার তরল খাবার অর্থাৎ পানি, শরবত, ডাবের পানি বা সুপ বা ফলের রস খাওয়ানো খুবই প্রয়োজন। মনে রাখবেন ঔষধের পাশাপাশি রোগীকে যত তরল খাবার খাওয়ানো যাবে জ্বর তত তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আসবে। কোনো অবস্থায় যেনো শরীরে পানির অভাব দেখা না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে চিকিৎসকের মতে ঔষধ সময়মতো খাওয়াতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার ও খাওয়াতে হবে। নিম্নে ১০টি উপকারি খাবারের বর্ণনা তুলে ধরা হলোঃ
১. ডালিম :- ডালিম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে তাছাড়া এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ই, কে, পটাশিয়াম, সোডিযাম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক পাওয়া যায়। যা অসুস্থ্য শরীরকে সুস্থ্য করতে অপরিহার্য্য ভূমিকা রাখে। ভাইরাস প্রতিরোধ করে সদির্, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বাতব্যাথায় খুবই উপকারি হিসেবে কাজ করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মুখের রুচি বাড়ায়। দেহের অনুুচক্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। ক্লান্তি, ও অবসাদ দূর করে।
২. ডাবের পানি :- শরীরের সুস্থ্যতার জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারি। প্রায় সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। যা দেহের পানি শূন্যতা দূর করে শরীরকে নিস্তেজ হতে দেয় না। বিশেষ করে ডায়রিয়ার ফলে দূর্বল ব্যক্তিদের ডাবের পানির সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম খুবই উপকার করে।
৩. কমলা বা মাল্টা :- কমলা বা মাল্টার রসে প্রায় সব ভিটামিন ও খনিজ উপাদান কম বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা ডেঙ্গু রোগীর জন্য জ্বর নিয়ন্ত্রণে খুব সহায়ক।
৪. হলুদ :- টাটকা হলুদের গুঁড়া এক চা চামচ এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে ডেঙ্গু রোগীকে খাওয়ালে খুবই উপকার পাওয়া যায়। হলুদ ভাইরাস প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা পালন করে।
৫. পালং শাক :- পালং শাকে প্রচুর আয়রন ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে । ডেঙ্গু রোগীর রক্তের অনুচক্রিকার দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে ।
৬. ব্রোকোলি :- এ সবজিটিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন কে পাওয়া যায়। যা রক্তের প্লেটনেট বা অনুচক্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। তাই এটি ডেঙ্গু রোগীর জন্য খুবই উপকারি।
৭. পেঁপে ও তার পাতার রস :- পেঁপে গাছের পাতা পাপাইন এবং কাইমোপাপাইনের মতো এনজাইম সমৃদ্ধ যা হজমে সাহায্য করে এবং রক্তের অনুচক্রিকার সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া পাকা পেঁপে অসুস্থ্য রোগীদের জন্য খুবই ফল। তাই পাকা পেঁপের জুস বানিয়ে খাওয়ানো যায়।
৮. মিষ্টি কুমড়া :- মিষ্টি কুমড়া অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। যা দেহের রক্তের কণিকা তৈরী করে এবং শক্তিশালী করে। এর খনিজ উপাদান ও ভিটামিনগুলো শরীরকে দূর্বল হতে দেয় না। মিষ্টি কুমড়ার বীজ ও পুষ্টিকর একটি খাবার। বীজ ভেজে খাওয়া যায়।
৯. মেথি :- মেথি শরীরের বিষ ব্যাথা কমাতে সাহায্য কমাতে খুবই সাহায্য করে। দেহে প্রশান্তি বয়ে আনতে এবং শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যা ডেঙ্গু রোগীরদের জন্য খুবই প্রয়োজন। তবে তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতে খেতে হবে।
১০. আমলকি:- বর্ষাকালের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল আমলকি। যাকে ভিটামিন সি এর ভান্ডার বলা হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, রক্তের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে,মুখের রুচি বাড়াতে, শরীরের ব্যাথা বেদনা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই ভাল কাজ করে। তবে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ফলটি খুবই উপকারি।
সর্তকতা:- ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই খাবার গ্রহণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এসময় অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও মসলা যুক্ত এবং ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া যাবে না। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন গাঢ় লিকার য্ক্তু চা, কফি, কোমল পানীয় খাওয়া যাবে না। রোগীকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে। দিন রাত অবশ্যই মশারির মধ্যে থাকতে হবে।
মোঃ জহিরুল আলম- শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।