চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
অন্যদিকে কোন ছেলে-মেয়ের মধ্যে বয়ঃপ্রাপ্ত কোন লক্ষণ যদি আদৌ প্রকাশ না পায়, তাহলে পনের বছর বয়সে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত তারা উভয়ই কিশোর-কিশোরী হিসেবে বিবেচিত হবে বলে ইমাম শাফি’ঈ, ইমাম আহমাদ, হানাফী আইনবিদ ইমাম মুহাম্মাদ ও আবু ইউসুফ রহ. সহ অধিকাংশ আইনবিদ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ‘আল-কাসানী, বাদাইউস সানাঈ’, প্রাগুক্ত, খ. ৭, পৃ. ১৭২; ইবন হাজার আল-‘আসকালানী, ফাতহুল বারী, প্রাগুক্ত, খ. ৫, পৃ. ৩৪৮; জালালুদ্দীন ‘আব্দুর রহমান আস-সুয়ূতী, আল-আশবাহ ওয়ান নাযাইর, আল-কাহেরা; তাব’আ আল-বাবী আল-হালাবী, ১৩৮৭ হি., পৃ. ২৪০; ড. ওয়াহাবাতুয যুহায়লী, আত্-তাফসীরুল মুনীর, দামিশ্ক; দারুল ফিক্র, ১৪১৮ হি., খ. ৪, পৃ. ২৫০; মুহাম্মদ আবু যাহরাহ, আল-জারীমাহ, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৩৭’।
অপরাধের আরবী আল-জারীমাহ। ইংরেজীতে একে crime, offense বলা হয়। 'J. Milton Cowan, A Dictionary of Modern Written Arabic, London: Macdonald and evens Ltd, 1980, p. 121'। আল-জারীমাহ শব্দটি একবচন, বহুবচনে আল-জারাইম, যা আল-জুরম থেকে উদ্ভুত। আল-জুরমু শব্দটির জীম অক্ষরে পেশ যোগে অর্থ পাপ, সীমালংঘন ইত্যাদি। ‘ইব্ন ফারিস, মু’জামু মাকাঈসিল লুগাহ, বৈরূত; দারুল ফিক্র, ১৯৯৮ খ্রি., পৃ. ২১০; ইব্ন মানযূর, লিসানুল ‘আরব, আল-কাহেরা; দারুল হাদীছ, ১৪২০ হি., খ. ২, পৃ. ১০৫’। ইসলামী আইনের পরিভাষায় অপরাধ বলতে শরী’আতের এমন আদেশ-নিষেধের লঙ্ঘনকে বুঝায়, যা করলে হদ্দ অথবা তা’যীর প্রযোজ্য হয়। ‘আবুল হাসান ইব্ন মুহাম্মদ আল-মাওয়ারদী, আল-আহকামুস সুলতানিয়্যাহ, বৈরূত; দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, ১৪০৫ হি., পৃ. ২৭৩’।
কিশোর অপরাধ প্রত্যয়টির সংজ্ঞায়নে বিভিন্ন দৃস্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়। সমাজতাত্ত্বিক দৃস্টিকোণ থেকে কিশোর বয়সে অবাঞ্ছিত ও সমাজ বিরোধী আচরণ সম্পাদন করাকেই বলা হয় কিশোর অপরাধ। ‘সাধন কুমার বিশ্বাস ও সুনীতা বিশ্বাস, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ও নির্দেশনা, ঢাকা: প্রভাতী লাইব্রেরী, ২০০৫ খ্রি., পৃ. ২৪৪’। মার্কিন অপরাধ বিজ্ঞানী ঈধাধহ বলেন, সমাজ কর্তৃক আকাক্সিক্ষত আচরণ প্রদর্শনে কিশোরদের ব্যর্থতাই কিশোর অপরাধ। ‘Dr. N. V. Pranjape, Criminology and Penology, ibid, pp. 486-87’। আইনগত দিক থেকে কিশোর অপরাধ বলতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে কর্তৃক আইন বিরুদ্ধ দন্ডনীয় কর্ম সম্পাদন করাকেই বুঝায়। এ প্রসঙ্গে ১৯৮০ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত দ্বিতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে কিশোর অপরাধের নির্ধারিত সংজ্ঞাটি উল্লেখ করা যেতে পারে। সংজ্ঞায় বলা হয়, Juvinile Delinquency should be understood the commission of an act which is commited by an adult, would be considered a crime. æC.N. Shankar Rao, Sociology : Primary principles of sociology, S. Chand Limited, 2006, p. 543”।
কিশোর অপরাধ বলতে কমিশন সে কাজকে বুঝায়, যে কাজ একজন বয়স্ক ব্যক্তি দ্বারা সংঘটিত হলে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে কিশোর অপরাধের পরিচয়ে বলা যায় যে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে কর্তৃক সংঘটিত দেশীয় আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের পরিপন্থী কর্মকান্ডকেই কিশোর অপরাধ বলে। কৈশোরকাল মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ স্তর শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক মানব সন্তানের উপর বিভিন্ন শর’ঈ বিধি-বিধান ও সামাজিক দায়-দায়িত্ব আরোপিত হয়। এর আগ পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীরা গায়রু মুকাল্লাফ বা বিধি-বিধান পালনের বাধ্যবাধকতামুক্ত হিসেবে বিবেচিত। কেননা হাদীসে তিন ব্যক্তিকে শরী’আতের বিধান পালনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তিন ব্যক্তি যাবতীয় দায় থেকে অব্যাহতি পেয়েছে; ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক যতক্ষণ না বয়ঃপ্রাপ্ত হয় এবং পাগল যতক্ষণ না সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন হয়। ‘ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, অধ্যায়: আল-হুদূদ, অনুচ্ছেদ; আল- মাজনূনু ইয়াসরিকু আও ইউসিবু হাদ্দা, রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা’আরিফ, ১৪১৯ হি., খ. ৩, পৃ. ৫৬, হাদীস নং-৪৪০৩; হাদীসটির সনদ সহীহ; মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল=আলবানী, সহীহ ওয়া য’ঈফু সুনানি আবী দাউদ, আল-মাকাতাবাতুশ শামিলা, ২য় সংস্করণ, খ. ৯, পৃ. ৪০৩, হাদীস নং-৪৪০৩’।
সেজন্য আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘনজনিত অথবা মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণকরণজনিত কারণে তাদের উপর শরী’আত নির্ধারিত হুদূদ ‘হুদূদ; আরবী ভাষায় ‘হুদূদ’ শব্দটি ‘হদ্দ’ এর বহুবচন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।