Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হুমকিতে ভূঞাপুরের গাইড বাঁধ, ভূঞাপুর-তারাকান্দি মহাসড়ক ও আশ্রয়ন প্রকল্প

যমুনায় অবৈধ বালু উত্তোলন

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২১, ৯:২৫ এএম

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশে যমুনা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদী রক্ষা গাইড বাধঁ, ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও প্রধানমন্ত্রীর নব নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর। এমনকি অবৈধ বাংলা ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তুলে নদী রক্ষা গাইড বাঁধের উপর রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে বালু খেকো প্রভাবশালীরা। আর এ কাজে প্রশাসনের কঠোর নজরদারী না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে বালু খেকোরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার যমুনা নদী থেকে বালু তুলে ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহা সড়কের পাশে এবং যমুনা নদীর ভাঙ্গন রোধে নির্মিত গাইড বাঁধের উপর বালু মজুত ও বিক্রয় করে যাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। বাল্কহেডে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে যমুনা নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করার কারণে হুমকিতে রয়েছে যমুনা নদীর ভাঙ্গন রোধে নির্মিত গাইড বাঁধ, ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সদ্যনির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও তারা কোন ফল পায়নি। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযানে বের হলে ঘটনাস্থালে পৌঁছার আগেই জেনে যায় এই অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা। ঘটনাস্থলে প্রশাসন গিয়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের না পেয়ে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে চলে আসেন, অভিযান শেষে প্রশাসন ফিরে যাওয়ার পর পরই আবার আগের মতই চলে বিক্রি ও উত্তোলণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় অর্ধশত জায়গায় বালু বিক্রয় ও মজুদের স্থান গড়ে তুলেছে বালু দস্যুরা। গাইড বাঁধ এবং ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে অবাধে নদী থেকে শক্তিশালী নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলণ ও বিক্রয়ের মহোৎসব। অবৈধভাবে বালু উত্তোলণের কারণে সম্প্রতি অর্জুনা ইউনিয়নের,গাড়াবাড়ি, চরতাড়াই, চর বোরার বয়রা, বলরামপুর, কুঠিবয়ড়া, চুকাইনগর, অর্জুনা, ভরুয়া, জগৎপুরা, চর তালতলা, চর শুশুয়া ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া, জিগাতলা, গোবিন্দাসী, ভালকুটিয়া ও খানুরবাড়িসহ বিভিন্ন গ্রামের সিংহভাগ অংশ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ঘর বাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে রাস্তার ধারে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

ঘাট মালিকদের সাথে বালু উত্তোলন ও বিক্রি বিষয়ে কথা হলে তারা জানান আমরা বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি বালু মহাল থেকে বালু কিনে এখানে বিক্রি করি। তবে কোন ঘাট মালিকের কাছেই নেই কোন বালু মহাল থেকে বালু কেনা হয়েছে তার রশিদ। যমুনা নদী থেকে বালু তুলে বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তর প্রথমে দিতে না চাইলেও পরে শিকার করে তারা বলেন, আমরা নদী থেকে কিছু বালু তুলে বিক্রি করি, তাও জমি কিনে। জমির মালিক যারা আছেন তারা প্রতি জাহাজ (বাল্কহেড) বালুর জন্য এক হাজার করে টাকা নিয়ে থাকে। বালু উত্তোলণ বা বিক্রির অনুমোদন বা বৈধ কোন কাগজের কথা বললে তারা জানান, আমাদের কাছে শর্তানুযায়ী কোন কাগজ নাই, তাছাড়া কোন ঘাট মালিকের কাছেই কাগজ নেই। এরপরও অবৈধ ঘাট মালিক বা তাদের সহযোগি কাউকেই আইনের আওতায় আনতে পারেনি ভ্রাম্যমান আদালত।

এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল রনী জানান, আমরা প্রতিনিয়তই অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি উপজেলার জগৎপুরা গ্রামে রাস্তার পাশে অবৈধ বালু ঘাটে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রির সময় ১১ জনকে ২০ দিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। এছাড়াও গত ২ মে মাসে র‌্যাবের তৎপরতায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অবৈধ বালু ঘাটে অভিযান চালিয়ে দুই লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা ও দুই জনকে ১০ দিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। তবে অবৈধ বালু উত্তোলনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইড বাঁধের যে ক্ষতি হচ্ছে তাতে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সাথে নিয়ে অচিরেই অভিযান চালাবো। অভিযানের মাধ্যমে এসব অবৈধ বালু ঘাট ও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অবৈধ বালু উত্তোলন

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ