Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কার্গোভিলেজের অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার স্থবিরতা কাটিয়ে রফতানি বাণিজ্য গতি পেয়েছে। করোনাকালে পরিবহন ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ায় পণ্য রফতানির হারও কমেছিল। এখন গার্মেন্টসহ অন্যান্য রফতানি পণ্যের ক্রয়াদেশ অনুযায়ী ক্রেতাদের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সাধারণত বেশিরভাগ পণ্য সমুদ্র পথে রফতানি করা হয়। দেশের ৯০ শতাংশ পণ্য চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে রফতানি হয়। তবে পণ্যজট, কন্টেইনারের অভাবসহ জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি ও সীমাবদ্ধতার কারণে এ বন্দর দিয়ে দ্রুত পণ্য রফতানি করা সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যার কারণে রফতানিকারকরা আকাশ পথে পণ্য রফতানির পথ বেছে নিয়েছেন। এ পথের প্রধানতম বন্দর হচ্ছে, হযরত শাহজালাল বিমান বন্দর। রফতানিকারকরা এখন এ বন্দরের মাধ্যমে দ্রুত পণ্য রফতানির দিকে ঝুঁকেছেন। এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বন্দরের অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা। অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, মালামাল রাখার পর্যাপ্ত জায়গার অভাব, দক্ষ জনবলের সংকট, স্ক্যানিং মেশিন ও ওজন মাপার যন্ত্র বিকল থাকায় পণ্য রফতানিতে ব্যবসায়ীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব সমস্যার মধ্যেই রফতানিকারকদের বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। প্রতি টন পণ্যে অতিরিক্ত খরচ পড়ছে ৩ হাজার টাকা। এছাড়া পণ্য চুরি, হারিয়ে যাওয়াসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। গত বুধবার ব্যবসায়ীদের নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে এক ঝটিকা পরিদর্শনে যান। সেখানের নানা অনিয়ম ও অব্যস্থাপনায় তিনি হতাশা ও ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা মধ্য আয়ের দেশে প্রবেশ করব। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। আমরা বলছি, উন্নয়নশীল দেশ। অথচ আমাদের বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। এটা লজ্জার।

করোনায় অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরায় সচল করতে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আমদানি-রফতানি গতিশীল ও বৃদ্ধি করা ছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য বন্দরসহ পরিবহণ ব্যবস্থা মসৃণ ও নিরবিচ্ছিন্ন হওয়া আবশ্যক। রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের কাছে দ্রুত পণ্য পৌঁছাতে না পারলে ক্রয়াদেশ বাতিলসহ তারা দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এ পরিস্থিতির অবসানে সমুদ্র ও বিমানবন্দরগুলোর সুযোগ-সুবিধা সবার আগে নিশ্চিত করা দরকার। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, রফতানিকারকরা পণ্য রেডি করে জাহাজীকরণ করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়টি নতুন নয়। যাত্রী সুযোগ-সুবিধা যেমন অপ্রতুল, তেমনি পণ্য রফতানির সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রটি আরও বেশি সংকুচিত। উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরগুলোতে পণ্য মজুদ, নিরাপত্তা থেকে শুরু করে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। ফলে দেশগুলো রফতানি পণ্য দ্রুত ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে। বন্দরগুলোও লাভবান হচ্ছে। আমাদের দেশে আমদানি-রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিমানবন্দর লাভজনক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা যেমন অধিকমাত্রায় বিমানবন্দর ব্যবহার করবে, তেমনি সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতিও লাভবান হবে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এদিকে খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। তার উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ব্যহত হচ্ছে এবং অর্থনীতি পিছিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোও হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ইতোমধ্যে সউদী, এমিরেটস, ইতিহাদসহ আরো বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনস এ বিমানবন্দরে কার্গো সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। এটি দেশের ভাবমর্যাদার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে, দেশের রফতানিকারকদের অনেকে দ্রুত ও সাশ্রয়ে পণ্য রফতানি করার জন্য পাশ্ববর্তী কলকাতা বিমানবন্দর বেছে নিচ্ছেন। সড়ক পথে পণ্য পাঠিয়ে সেখান থেকে তারা পণ্য রফতানি করছেন। আমাদের বিমানবন্দরে টার্মিনাল হ্যান্ডলিং, সিকিউরিটি স্ক্যানিং ও অন্যান্য খরচসহ কেজিপ্রতি খরচ পড়ে ১৮ থেকে ২০ সেন্ট। কলকাতায় এ খরচ ৮ থেকে ১০ সেন্ট। ফলে রফতানিকারকরা এখন কলকাতা বিমানবন্দরের দিকে ছুটছেন। বিমানবন্দরের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং খরচ বেশি হওয়ায় বিকল্প পথে যাওয়া ছাড়া তাদের উপায়ও নেই। এতে আমরা যেমন রাজস্ব হারাচ্ছি, তেমনি বদনামেরও ভাগিদার হচ্ছি। দেখা যাচ্ছে, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের অনিয়ম, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা অন্তরায় হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ে চীনে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অনেক বস্ত্রকল বন্ধ রয়েছে। ভিয়েতনামে করোনার কারণে কলকারখানা বন্ধ। এ অবস্থায় আমাদের ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে দ্রুত এগিয়ে নেয়া সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন, দ্রুত সময়ে বিমানবন্দরের বিদ্যমান সমস্যা দূর করার উদ্যোগ।

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও উদাসীনতা রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তা নাহলে, চারটা স্ক্যানিং মেশিনের মধ্যে চারটাই নষ্ট হয়ে থাকবে কেন? ইডিএস মেশিনসহ অন্যান্য সুবিধা অপ্রতুল থাকবে কেন? বিমান কর্তৃপক্ষ করোনার অজুহাত দেখিয়ে দায় সারতে চাচ্ছে। অথচ করোনার স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমদানি-রফতানিকারকরা যাতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে পণ্য দ্রুত জাহাজীকরণ করতে পারে, এজন্য কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হওয়া উচিৎ ছিল। আমরা মনে করি, বিমান কর্তৃপক্ষের এ ব্যর্থতার কারণে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিৎ। তার গাফিলতির কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। এর দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। আমদানি-রফতানিকারকরা বিমানবন্দরে যাতে কাক্সিক্ষত সুযোগ-সুবিধা পায় সে ব্যাপারে বিমান কর্তৃপক্ষকে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। সব ধরনের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। সালমান এফ রহমানকে ধন্যবাদ যে, তিনি দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসায়ীদের সমস্যা উপলব্ধি করে দ্রুত বিমানবন্দর পরিদর্শনে গিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন এবং তা নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কার্গোভিলেজ
আরও পড়ুন