Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাজার বছরের পরম বন্ধু ছন বিলুপ্তির পথে

পাহাড়ের মাটিতে প্রাকৃতিকভাবেই কুঁড়ি জন্ম নেয়

মো. ইব্রাহিম শেখ, খাগড়াছড়ি থেকে | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

ছনের ঘরে তুলনামূলক কম গরম অনুভূত হয়। একটা সময় ছিল পাহাড় কিংবা গ্রামে ছনের ঘর দেখা যেত। প্রযুক্তির ছোয়ায় বর্তমানে ছনের ঘর খুবই কম দেখা যায়। পাহাড়ে আর আগের মতো ছন চাষ করছেন না চাষিরা।
রোদে চিকচিক করা রূপালি ঢেউটিনের চালা বহুদূর থেকেই জানান দেয় তার সদম্ভ অস্তিত্বের কথা। সবুজের ফাঁকে সাদার ঝিকিমিকি। আর হাজার বছরের পরম বন্ধু অভিমানি ‘ছন’ তাই নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে চলেছে। এমন চিত্র পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলাতেই দেখা গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে ছনের চাষ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন উপজেলার উত্তর শুকনাছড়ির আব্দুল মোতালেব। তিনি জানান, বাংলা বছরের আশ্বিন থেকে চৈত্র পর্যন্ত ছন আহরণ করা হয়। চাষাবাদে তেমন পরিশ্রম নেই। শুধুমাত্র পাহাড়ের যে অংশে ছন চাষ করা হবে তা পরিস্কার করে দিলেই কিছুদিন পর প্রাকৃতিকভাবেই ছনের কুঁড়ি জন্ম নেয়।

দেড় দুই হাত লম্বা হলে আগাছা পরিষ্কার করে একবার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। আর ৬ থেকে ৭ ফুট লম্বা হলেই কাটার উপযুক্ত হয়। এরপর রোদে ২০ থেকে ২৫ দিন শুকিয়ে নিলেই ব্যবহার উপযোগী হয়। অন্যদিকে বাগানে বড় কোনো গাছ থাকলে তার ছায়া ও পাতা পড়ে ছনের বৃদ্ধিতে যেমনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তেমনি ছনে পচন ধরে নষ্ট হয়। ফলে উৎপাদন হ্রাস পায়।

আশ্বিন মাসে ছন আহরণ করা হলেও বাজারে চাহিদা তেমন থাকে না। ফলে ভারপ্রতি মাত্র ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই ছন ব্যবহারকারীরা তাদের পুরনো ঘরের চালা মেরামতের উদ্যোগ নেন। এ জন্য চৈত্র মাসে ভারপ্রতি বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ২৬০ টাকায়।
বিক্রেতাদের কথায়, নিজেদের বাগানে চাষাবাদ করলে দিনে একজন শ্রমিক ছয় বোঝা ছন কাটতে পারে। কিন্তু কাঁচা অবস্থায় দূর থেকে বহন করে আনা সম্ভব হয় না। আবার শুকোতেও সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ দিন। বাগান না থাকলে বিভিন্ন উন্মুক্ত পাহাড় থেকে খুঁজে খুঁজে ছন আহরণ করতে হয়।

তারা জানান, আগের মতো চাহিদা না থাকায় দামও পাওয়া যায় না ভালো। ফলে এ কাজে শ্রম না দিয়ে বরং অন্য কাজে দিলে দিনে ৩০০ টাকা আয় করা যায়। তাই এই পেশার উপর নির্ভর করা যায় না। ফলে পেশা পরিবর্তন করা ছাড়া উপায় থাকছে না।

জামিনিপাড়ার পান চাষি আব্দুল ছাত্তার জানান, অনেক চাষিরা ইতোমধ্যে ছনের বিকল্প ব্যবহার শুরু করেছেন। বিশেষত ধনিয়া পাতা চাষের জন্য ক্ষেতের চারপাশে বেড়া এবং উপরে রোদ প্রতিরোধক চালা তৈরি করছেন এই ছন ব্যবহার করে। তিনি নিজেও ২০ বরজে ছন ব্যবহার করছেন।

তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল জানান, পাহাড়ে ছনের উৎপাদন ও ব্যবহার কমে যাওয়ায় এখন বিলুপ্তির পথে। মূলত প্রতিবছর ছন কিনে চালা মেরামতে অর্থ ব্যয় না করে সবাই কমদামি ঢেউটিন ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আবার যাদের তেমন সামর্থ্য নেই তারা ছনের উপরই ভরসা রাখছেন। তবে এক সময় হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত এই ছন হারিয়ে যাবে চিরদিনের জন্য। এর নানাবিধ ব্যবহার বাড়ানো গেলে হয়তো ছন রক্ষা করা সম্ভব হতো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ