পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। করোনাকালীন বাস্তবতা দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে যে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে তাতে আরো অনেক আগেই দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন ছিল। অনেক দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের হাজার হাজার প্রবাসী কর্মীর মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল। গত দেড় বছরের করোনা সংকটে অনেক শ্রমিক দেশে এসে আটকা পড়েছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, অনেকের শেষ হওয়ার পথে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের দেশগুলোতে গণটিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে করোনা সংকট উত্তরণের পথে এখন নতুনভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হলেও আমাদের প্রবাসী কর্মীরা করোনা পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মাসের পর মাস ধরে অপেক্ষা করেও কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর প্রায় একমাস অতিক্রান্ত হলেও দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হযরত শাহজালালে এখনো আরটি-পিসিআর ল্যাব বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু করা যায়নি। গত মঙ্গলবার থেকে এই বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে আরটি-পিসিআর ল্যাব চালুর কথা থাকলেও বেবিচকের নির্বাচিত ৬টি আরটি-পিসিআর ল্যাবের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের মান সম্পর্কে আরব আমিরাতের অনুমোদন না পাওয়ার কারণে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটসহ আরব আমিরাতের সব ফ্লাইট স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
বিমান বন্দরের ছাদে উন্মুক্ত স্থানে টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের ক্ষেত্রে অসুবিধা ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আগে থেকেই সংশ্লিষ্টদের আপত্তি থাকলেও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেনি বলেই শেষ মুহূর্তে এসে অহেতুক জটিলতা ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে বিদেশগামী যাত্রীরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর একমাসের প্রস্তুতি শেষে ২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর টেস্ট এবং দুবাইগামী যাত্রীদের ফ্লাইট আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে, এমন ঘোষণার ভিত্তিতে মঙ্গলবার সারাদেশ থেকে দুবাইগামী শত শত যাত্রী বিমানবন্দরে এসে ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে বিড়ম্বনার শিকার হন। নির্বাচিত বেসরকারি অপারেটরদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর মূল্যায়ন সম্পর্কে আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্ট কোনো সময়সীমা না দেয়ায় ঠিক কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে, বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ও বেবিচকের চেয়ারম্যানের বরাতে প্রকাশিত রিপোর্টে এসব তথ্য জানা যায়। নির্বাচিত আরটি-পিসিআর ল্যাবগুলোকে কিসের ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া হলো, সেখানে আরব আমিরাত বা অন্যকোনো দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পাওয়া বা গড়িমসির সঙ্গত কারণ আছে কি না, থাকলে তা নিরসনের উপায় কী, এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ আছে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।
করোনামহামারি মোকাবেলায় শুরুতে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশ এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে শুরু থেকেই করোনা টেস্টিং ক্যাপাসিটি নিয়ে এক ধরনের পরিকল্পনাহীনতা, গড়িমসি ও ব্যর্থতার ধারাবাহিক চিত্র দেখা যাচ্ছে। দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত প্রবাসীদের কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে করোনা টিকা ও করোনা টেস্টিং ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত করার তাগিদ উচ্চারিত হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ সীমাহীন গাফিলতি ও ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারবে না। যেখানে করোনাকালে দেশে দেশে দু’এক সপ্তাহের মধ্যেই শত শত বেডের হাসপাতাল তৈরির অনেক উদাহরণ রয়েছে, সেখানে দেড় বছরেও দেশের প্রধান বিমানবন্দরে মানসম্মত আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করতে না পারার জন্য দেশের হাজার হাজার প্রবাসী কর্মীর জীবনে যে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হলো, দেশের বৈদেশিক আয়ে এর যে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা তৈরি হলো, তার দায় কে নেবে? বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে যেসব গাফিলতির অভিযোগ শোনা গেছে তার কোনো জবাবদিহি দেখা যায়নি। বিমান বন্দরে অহেতুক কার্গোজট নিরসন না করে আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান বিমানবন্দরটিকে আস্থার সংকটে ফেলার জন্যও তারা দায়ী। এখন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মীর কর্মসংস্থানকে অনিশ্চিত করার পেছনেও তাদের ব্যর্থতার দায় স্পষ্ট। সব ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক দীর্ঘসূত্রিতা ও গাফিলতির এমন ধারাবাহিক প্রবণতা দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিমান বন্দরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন কোনো অসম্ভব কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে একটি কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।