পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেনে প্রশস্তকরণের কাজ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরেই শুরু হওয়ার কথা। এই লক্ষ্যে এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে জমি অধিগ্রহণের কাজও। তবে মহাসড়ক ছয় লেন প্রশস্থকরণ প্রকল্পে নরসিংদীর প্রবেশ মুখ শিমুলতলা থেকে বাগহাটা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক বাদ রেখে নতুন করে অন্য এলাকা দিয়ে বাইপাস সড়ক করার পরিকল্পনা রয়েছে সড়ক বিভাগের। প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত শেখেরচর-বাবুরহাট ও বস্ত্র শিল্পাঞ্চল মাধবদী এলাকা বাদ দিয়ে নতুন বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হলে জেলার অন্যতম বাণিজ্য নগরী এই এলাকাটি জৌলুস হারাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের নরসিংদী অংশে রয়েছে ৫২ কিলোমিটার এলাকা। চলতি বছর থেকেই কাজ শুরু হওয়ার কথা। তবে নরসিংদীর প্রবেশমুখ শিমুলতলা থেকে বাগহাটা অঞ্চল ঘিরে আট কিলোমিটার সড়ক বর্তমান মহাসড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট বিভাগের।
তবে ব্যবসায়ীরা সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাট। এ হাটের পাঁচ হাজার দোকানে সাপ্তাহিক লেনদেন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এই হাটকে কেন্দ্র করেই মাধবদী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা। যাতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষের। সদা প্রাণচঞ্চল এই অঞ্চলের মানুষের কপালে এবার চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কারণ, যে মহাসড়ককে কেন্দ্র করে জমে উঠেছিল মাধবদী-বাবুরহাট, সেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন প্রশস্তকরণ প্রকল্পে মাধবদী-বাবুরহাটকে পাস কাটিয়ে বাইপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বাইপাস সড়ক নির্মাণ হলে একদিকে ১৫০ একর কৃষিজমি ধ্বংস হবে, অপরদিকে প্রাণ হারাবে বস্ত্রশিল্পের জন্য বিখ্যাত মাধবদী ও প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত বাবুরহাট। মুখ থুবড়ে পড়বে জেলার অর্থনীতি।
দেশীয় কাপড়ের ৮০ ভাগ পূরণ হয় এই অঞ্চলের বস্ত্র কারখানাগুলোর মাধ্যমে। এছাড়া বাইপাস সড়কের জন্য নতুন এলাকায় জমি অধিগ্রহণে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ব্যয় এবং বিনষ্ট হবে ১৪৭ একর কৃষি জমি। এজন্য দেশের বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের হাট শেখেরচর-বাবুরহাট ও শিল্প শহর মাধবদীসহ আগের মহাসড়ককে কেন্দ্র করেই নতুন ৬ লেন মহাসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি ব্যবসায়ীদের।
বাবুরহাটের ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের চাওয়া বাবুরহাট বাঁচান, ব্যবসায়ীদের বাঁচান। বাবুরহাট বাঁচলে সরকারে রাজস্ব বাড়বে। আর ধ্বংস হয়ে গেলে কারও লাভ হবে কি। তিনি আরও বলেন, বাইপাস সড়ক হলে লাভ হবে কয়েকজন অসাধু ব্যক্তির।
এ ব্যাপারে নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির বলেন, জেলার পাশাপাশি দেশিয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট ও মাধবদী শিল্পাঞ্চল। সরকারের সিদ্ধান্তে সড়ক উন্নয়ন যেমন জরুরি, তেমনি ব্যবসায়িক এলাকাও বাঁচিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ট্রান্স এশিয়ান মহাসড়কটি সঠিক পরিকল্পনায় পূর্বের অবস্থান ঠিক রেখে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য নরসিংদী চেম্বার তথা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ মহলে দাবি জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক তা যাচাইয়ে কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক বলেন, দেশীয় বস্ত্র চাহিদার ৮৯ থেকে ৯০ ভাগ সরবরাহ হয় প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার শেখেরচর-বাবুরহাট ও মাধবদী থেকে। এই এলাকা বাদ দিয়ে মাত্র ৮ কিলোমিটার নতুন বাইপাস সড়ক নির্মাণ খুব গুরুত্ব বহন করে না। বাইপাস সড়ক করে মাধবদী অঞ্চলকে ধ্বংস করার পায়তারা করা হচ্ছে। নতুন মহাসড়কের জন্য পূর্ব এবং পশ্চিম পাশ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হলে সরকারের খুব বেশি অর্থও খরচ হবে না।
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্ম্কতা জানান, বর্তমান মহাসড়কের বাবুরহাট অংশে শিমুলতলা থেকে বাগহাটার দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। আর বাইপাস নির্মাণ করলে দূরত্ব কমে আসবে ৭ দশমিক ২০ কিলোমিটার। অর্থাৎ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দূরত্ব কমবে মাত্র ২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। বর্তমান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি ছয় লেন করতে জমি প্রয়োজন ২০ দশমিক ৭০ একর। জমির ব্যয় ৪৬০ দশমিক ৯৮ কোটি, স্থাপনা ব্যয় ৭০০ কোটি টাকা, মাটির প্রয়োজন হবে ১ দশমিক ৫০ লাখ ঘনমিটার। মাটিতে ব্যয় হবে ৬ দশমিক ১৫ কোটি টাকা। সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। সর্বমোট ব্যয় দাঁড়াবে ১ হাজার ২৬৭ দশমিক ১৩ কোটি টাকা। আর বর্তমান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি বাদ দিয়ে বাইপাস নির্মাণ করতে জমি প্রয়োজন হবে ১১৬ দশমিক ১৪ একর। জমির জন্য ব্যয় হবে ১ হাজার ২১ দশমিক ২৮ কোটি টাকা। স্থাপনা ব্যয় হবে ৫০০ কোটি টাকা। মাটির প্রয়োজন ২৪ লাখ ঘনমিটার, যার ব্যয় হবে ৯৮ দশমিক ৩০ কোটি টাকা। আর সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ২৫২ কোটি টাকা। সর্বমোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৭১ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা। বাইপাস নির্মাণ করতে হলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৬০৪ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা। মাত্র ২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৬০৪ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা খরচ করতে হবে।
নরসিংদী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোফাজ্জল হায়দার বলেন, ট্রান্স এশিয়ান এই আন্তর্জাতিক মহাসড়কটিতে যানজট ছাড়াই চলাচল করতেই ৮ কিলোমিটার নতুন এলাকায় বাইপাস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ব্যবসায়িক জোন ঠিক রাখতে শেখেরচর-মাধবদী অঞ্চলের বর্তমান মহাসড়কটিকেও চার লেনের পাশাপাশি বাস-বে এবং অধিকতর সুবিধা দেয়ার চিন্তা রয়েছে।
এ বিষয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর কিছু অংশে সম্ভাব্য পরিবর্তন আসতে পারে। বাবুরহাট আড়ালে পড়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, মন্ত্রণালয় বাকি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে অচিরেই জাতীয় এই সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হবে বলে আশাবাদী তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।