পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশ ফাইভজি ইন্টারনেট যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এতে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রা এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে। পর্যায়ক্রমে টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি সেবা আসায় তার সুফল দেশের মানুষ ভোগ করতে পারছে। যদিও ইন্টারনেটের গতি, প্রাপ্যতা, মাসুল ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন আছে, তারপরও এই পর্যায়ক্রমিক সেবাসুবিধায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে ফাইভজি সেবা। প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রায়াত্ত টেলিকম কোম্পানি টেলিটকের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য অপারেটর এই সেবা চালু করবে। জানা গেছে, প্রথমে ঢাকার ২০০টি সাইটে ফাইভজি সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে। পরবর্তীতে ফাইবার কোয়ালিটি বিবেচনায় এ সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। ইতোমধ্যে টেলিটককে ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ অর্থ টেলিটক তার নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে ব্যবহার করবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও গোটা দেশকে পরিপূর্ণভাবে ডিজিটালাইজ করে তার যাবতীয় সুবিধা লাভ করার অব্যাহত চেষ্টা চলছে। ফাইভজি সেবা সংযোজন এরই প্রমাণ ও অগ্রগতির স্মারক। আমরা এখন ফোরজির সেবাসুবিধা পাচ্ছি। ফাইভজি তার তুলনায় আরো অনেক বেশি সেবাসুবিধা নিশ্চিত করবে।
জানা গেছে, ফোরজি ইন্টারনেটের চেয়ে ফাইভজিতে দ্রুতগতিতে তথ্য ডাউনলোড ও আপলোড করা যায়। ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্কে হাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে একইসঙ্গে একই সময়ে অনেক মোবাইল ফোনে দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। মানুষ ও ডিভাইসের মধ্যে তৈরি হয় জিরো ডিসটেন্ট কানেক্টিভিটি। বলা হচ্ছে, ফাইভজি মানুষের জীবনচিত্রই পাল্টে দেবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যম চালকবিহীন গাড়ি চলবে রাস্তায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আরো বাড়বে। স্মার্টসিটি বিনির্মাণ সহজ হবে। এরসঙ্গে যুক্ত থাকা রোবট পরিচালনা করা যাবে। বাড়বে আইটি প্রযুক্তির ব্যবহার। এছাড়া বিগডাটা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমূল পরিবর্তন আসবে শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়ন ও পরিবর্তন সাধিত হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, ফাইভজি সেবা বেশি কাজে লাগবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানায়। সেদিকেই বেশি নজর থাকবে। পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পকারখানায় ফাইভজি সেবার জন্য বিটিসিএলকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বের বেশ কিছু বড় দেশে যেমন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, স্পেনে ইতোমধ্যে ফাইভজি সেবা চালু করা হয়েছে। সেবাকে কীভাবে আরো উন্নত করা যায়, তার চেষ্টাও তারা করে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছর আরো অনেক দেশে এই সেবা চালু হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন-অগ্রগতি মানুষের জীবনধারা, উৎপাদন ব্যবস্থা, যোগাযোগ, যাতায়াত, শিক্ষা-গবেষণা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধন করে চলেছে। এই পরিবর্তন ও সেবাসুবিধা থেকে কোনো জনপদের মানুষেরই দূরে থাকার অবকাশ নেই। যারা দূরে থাকবে তারা পিছিয়ে পড়বে। আমরা সঙ্গতকারণেই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কল্যাণ ও সেবা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারি না। বিশ্বমানবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে চলতে হবে। এই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে মোবাইল ফোনে ফাইভজি ইন্টারনেট সুবিধা লাভ করা আমাদের শুধু প্রয়োজন নয়, অধিকারও বটে। ফাইভজি সুবিধা দেয়ার সরকারি এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে এ সুবিধা যথার্থই যাতে মানুষ লাভ করতে পারে এবং তার সুফলভোগী হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তিক্ত হলেও বলতে হচ্ছে, ফোরজি সেবাসুবিধা আগেই দেয়া হয়েছে; কিন্তু কতিপয় বড় শহর ছাড়া সর্বত্র এই সুবিধা সহজলভ্য নয়। গ্রামাঞ্চলের মানুষ ফোরজি তো পরের কথা, টুজি সুবিধাও পায় না। ফলে শুধু ‘জি’ বা জেনারেশন বাড়িয়ে লাভ নেই, যদি কাক্সিক্ষত সেবাসুবিধা না পাওয়া যায়। শহর-গ্রাম বলে কথা নেই, ইন্টারনেটের গতি অত্যন্ত মন্থর। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের অবস্থান এক্ষেত্রে সবচেয়ে নিচে। বাংলাদেশ কেবল তার ওপরে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে। এই পটভূমিতে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর এবং ঘোষিত সেবাসুবিধা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ এদিকে যথাযথ দৃষ্টি দেবে এবং প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।