Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রয়োজন আরো সতর্কতা

প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গত তিন মাসে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে মোট নিহতের সংখ্যা ৩৩। গুলশানের হলি আর্টিসান ঘটনার একশ’ দিনের ভেতর গত পরশু পুলিশ ও র‌্যাবের একদিনের অভিযানেই নিহত হয়েছে ১১ উগ্রপন্থী। এ নিয়ে গত তিন মাসে সাতটি অভিযানে নব্য জেএমবির ২৫ সদস্য নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আশুলিয়ায় র‌্যাবের আরেক অভিযানের সময় পাঁচতলা বাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। র‌্যাবের দাবি, আবদুর রহমান ওরফে নাজমুল হক নামে এ ব্যক্তি জঙ্গিদের মূল অর্থজোগানদাতা। গত শনিবার গাজীপুরের দু’টি পৃথক অভিযানে নয়জন এবং টাঙ্গাইলে এক অভিযানে দুইজন নিহত। এই ১১ জনের মধ্যে মাত্র তিনজনের নাম জানতে পেরেছে র‌্যাব-পুলিশ। অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডিএমপি নিউজে বলা হয়েছে, পুলিশের অভিযানে নিহত একজনের নাম ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ ওরফে প্রভাত। তিনি নব্য জেএমবির ঢাকা বিভাগের অপারেশন কমান্ডার ছিলেন। ঘটনাস্থলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর এই আকাশ সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। অন্যদিকে র‌্যাব জানায়, গাজীপুরে তাদের অভিযানে নিহত দুইজনের নাম হলো মো: রাশেদ মিয়া ও তৌহিদুল ইসলাম। এর মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) ছাত্র এবং রাশেদ এবার এসএসসি পাস করেছে। র‌্যাব বলেছে, তারা এই নাম বাড়ির মালিকের কাছ থেকে পেয়েছে। এসব তাদের প্রকৃত নাম-পরিচয় কি না, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, পাতারটেক এলাকার অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন শরতের তুফান’। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অপারেশনের নাম বাংলায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন অনেক বিশিষ্টজন। তাদের কথামতোই এবারের নাম বাংলায় দেয়া হয়েছে। গাজীপুরের পুলিশ সুপার বলেছেন, জেএমবি ঢাকা বিভাগীয় কমান্ডার আকাশ তার সঙ্গীদের নিয়ে নোয়াগাঁও এলাকার পাতারটেকে দোতলা একটি বাড়িতে অবস্থান করছে এমন খবর ছিল। এরই ভিত্তিতে সকাল ১০টার দিকে সেখানে অভিযান চালায় জেলা পুলিশ, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও সোয়াট টিমের যৌথ দল। প্রথমে তাদের আত্মসমর্পণের কথা বলা হয়। কিন্তু তারা তা না করে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোঁড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে। বিকালে অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সানোয়ার হোসেন সেখানে সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তবে নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বলে তিনি জানান। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
একই দিন ঢাকা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল তিনটি জেলায় অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো হতাহত ছাড়াই কেবল উগ্রবাদীদের ১১ জনকে শেষ করে দেয়া সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি বড় ধরনের সাফল্য। পুলিশের বরাতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও উগ্রপন্থা নির্মূলে সরকার বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। জঙ্গিদের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে এবং সন্ত্রাসের হুমকি থেকে দেশ ও জাতি এখন অনেকাংশেই নিরাপদ। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো যে, গোয়েন্দা নজরদারি ও জনগণের সহযোগিতার ফলে আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই সন্ত্রাসীদের কর্মতৎপরতার খোঁজ পেয়ে যাচ্ছে। যথাসময় অভিযান চালিয়ে তারা উগ্রবাদী ও তাদের হোতাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। র‌্যাব-১২ এর কমান্ডার অ্যাডিশনাল ডিআইজি শাহাবুদ্দীন খান বলেছেন, সন্ত্রাসীরা দুর্গাপূজা ও আশুরায় কোনো হামলা পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় এর উত্থান বিকাশের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করা এবং এর সুদূরপ্রসারী নিরসন, মূলোৎপাটনের বিকল্প নেই, এ কথা খুবই সত্য। অবশ্য জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় সরকারের সক্ষমতা খুবই আশাপ্রদ। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, সন্ত্রাসীদের বিষয়ে আরো খোঁজখবর নেয়া এবং তাদের নাম-পরিচয় ইত্যাদি নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালানো যেমন উত্তম ঠিক তেমনি তাদের জীবিত পাকড়াও করা অধিক কাম্য। এতে তাদের শিকড়, উৎসাহসদাতা, অর্থ ও মদদদাতাসহ মূল হোতাদের ধরা সহজ হবে। তাছাড়া, কোনো নিরীহ বা নিরপরাধ মানুষও ভুলক্রমে বা অসতর্কতায় প্রাণ হারাবে না। কেননা, সন্ত্রাসী নাম নিয়ে নিহত হওয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি অসম্মানজনক মৃত্যু। যার ফলে আত্মীয়স্বজনরাও মৃতদের লাশ নিতে অস্বীকার করে এবং এসব ব্যক্তিকে বেওয়ারিশ পরিচয়ে দাফন হতে হয়। সংশ্লিষ্ট পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনকে সামাজিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হতে হয়। নাম, পরিচয় অজ্ঞাত নিহতের মধ্যে কোনো নিরপরাধ থাকবে না এমনটাই সকলের কাম্য হওয়া উচিত। তাছাড়া, বাংলাদেশে যদি গোপন খবরের ভিত্তিতে এমন অভিযান চলতে থাকে, আর কোনো অবিবেচক মানুষ ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো মানুষকে জঙ্গি-সন্ত্রাসী সাব্যস্ত করে বদ্ধ ঘরে এভাবে হত্যা করায় তাহলে এর পরকালীন দায় কে নেবে? এ ক্ষেত্রে নিখুঁত তদন্ত, খোঁজখবর ও সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হওয়ার বিকল্প নেই। বিশেষ করে তথ্য ও অনুসন্ধান শতভাগ নির্ভুল হলে জঙ্গিদের সংখ্যা, সক্ষমতা, অস্ত্র, গোলাবারুদ ইত্যাদি সম্পর্কেও অভিযানকারী কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট ধারণা থাকবে, তাদের নাম-পরিচয়ও পূর্বেই বের করা যাবে এবং তাদের জীবিত ধরাও কঠিন হবে না। এতে করে বিনাবিচারে হত্যা এবং সন্দেহ ও ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রাণঘাতী অভিযানেরও প্রয়োজন হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও নৈপুণ্যের জন্য, ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া নিঃসন্দেহে অধিক উপযোগী। সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা নির্মূলে সরকারের উদ্যোগ সফল হবে, এ প্রত্যাশা এখন সকলের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে প্রয়োজন আরো সতর্কতা
আরও পড়ুন