বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
খুলনাঞ্চলের বাজারে ইলিশের আকাল চলছে। ভরা মৌসুমেও বাঙ্গালীর রসনার স্বাদ মেটাতে পারছেনা এই মাছের রাজা। বড় সাইজের মাছ একেবারে দুষ্প্রাপ্য। মাঝারি ও জাটকা যা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম লাগামছাড়া। গত কয়েক বছর ইলিশের প্রাচুর্যের পর এবারের বিপরীতমুখী পরিস্থিতিতে হতাশ সবাই। খুলনার পাইকারি ও খুচরা বাজারের বিক্রেতা, রফতানিকারক, সরকারি দফতরের কর্মকর্তা এবং বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরা ট্রলারের জেলেদের সাথে কথা বলে ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়ার জন্য জানা গেল কয়েকটি কারণ।
খুলনার ৫নং ঘাট এলাকার ভৈরব নদে নোঙ্গর করে রাখা ফিশিং ট্রলারের কয়েকজন জেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলতে রাজি হন। তাদের মতে বঙ্গোপসাগরের যে অংশ তারা মাছ ধরেন সেখানে ইলিশের অভয়াশ্রম নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের জালে কেবল মাঝারি ও ছোট ইলিশ ধরা পড়ছে। এবার বড় ইলিশ প্রায় পাওয়াই যায়নি। এরপরও যে ইলিশ আছে তা তারা ধরতে পারছেন না। তাদের কাঠবডির ট্রলার। পক্ষান্তরে পাশের দেশ থেকে স্টীলবডির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ট্রলারে জেলেরা এসে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
খুলনায় সমুদ্র থেকে আহরিত মাছ আসে মূলত দুটি বাজারে। একটি ভৈরব নদের পাড়ে ৫নং স্কীডঘাট এলাকার মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎস্য বাজার। এটি সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অপরটি খুলনার রূপসা নদীর পাড়ে রূপসা পাইকারী মৎস্য বাজার। এই বাজারটির নিয়ন্ত্রক খুলনা সিটি কর্পোরেশন।
মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎস্য বাজারের ব্যবস্থাপক মো: রাসেল সিকদার জানান, গত ২৩ জুলাই সমুদ্রে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়। কিন্তু সে সময় আবহাওয়া চরম দুর্যোগপূর্ণ ছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর মূলত ১ আগষ্ট থেকে বাজারে ইলিশ আসা শুরু করে। গত কয়েক বছর প্রচুর পরিমাণে বড় সাইজের ইলিশের দেখা মিললেও এবার তা একেবারে দুষ্প্রাপ্য।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খুলনার অবতরণ কেন্দ্রে ৮৬০ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৭৬ মেট্রিক টন ইলিশ এসেছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে সেটি নেমে মাত্র ৪৩৫ মেট্রিক টনে দাঁড়ায়। চলতি বছরের জুলাই ও আগষ্ট মাসে ৯৫ মেট্রিক টন ইলিশ এসেছে। আর সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত এসেছে ১০৬ মেট্রিক টন। এ বাজারে মাছ কেনাবেচায় সরকার শতকরা এক টাকা পঁচিশ পয়সা রাজস্ব পায়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে খুলনার বাজারে সবচেয়ে বেশি ইলিশ এসেছে আজ (বুধবার)। ভোর থেকেই ঘাটে আসা ট্রলারগুলো ছিল ইলিশে পরিপূর্ণ। যে পরিমাণ ইলিশ আজ এসেছে তাতে দাম পড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। বরং বড় সাইজের মাছের দাম মন প্রতি কিছুটা বেড়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার ৫২ টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে দুই হাজার আশি টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে বড় ও মাঝারি সাইজের মাছ কিনে ফ্রিজিং ও প্যাকিং করছেন রফতানি করার লক্ষ্যে। ফলে পাইকারী বাজারে মাছের আমদানি বাড়লেও এলসি পার্টির (রফতানিকারকের এজেন্টদেরকে স্থানীয় ভাষায় এই নামে ডাকা হয়) কারণে দাম কমছেনা।
জানা গেছে, বুধবার পাইকারী বাজারে জাটকা ইলিশ প্রতি মন ১৩ হাজার টাকা, ৩৫০ থেকে ৪৫০ গ্রাম সাইজের মাছ প্রতি মন ১৭ হাজার টাকা, ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি মন ২৬ হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি মন ৩৬ হাজার টাকা, কেজি সাইজের ইলিশ মন প্রতি ৪০ হাজার টাকা, ১১শ থেকে ১২ শ গ্রাম ওজনের ইলিশ মন প্রতি ৪৪ হাজার টাকা এবং ১৩শ থেকে ১৪শ গ্রামের ইলিশ মন প্রতি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে খুলনার বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জাটকা ও মাঝারি সাইজের ইলিশ ছাড়া বড় মাছ কেনার কোন সুযোগ পাননি।
বিগত বছরগুলোতে ভরা মৌসুমে নগরীর রূপসা সন্ধ্যা বাজার, ময়লাপোতা এলাকার কেসিসি সন্ধ্যা বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজারে দিনভর মাইক বাজিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করে ইলিশ বিক্রি হতো। উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো ক্রেতা বিক্রেতা সবার মাঝে। ইলিশের প্রাচুর্যের কারণে বাজারে অন্য মাছের দাম পড়ে যেতো। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় ঘরে ঘরে চলতো ইলিশ উৎসব। ইলিশ মাছের কারণে দাম কমতো সব ধরণের মাংসেরও। এবার সেখানে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ইলিশের আকালে অন্য সব ধরনের মাছ এবং মাংসের দাম বেড়েছে। এমনকি ডিমের দাম হালি পৌঁছেছে ৪০ টাকায়।
রূপসা বাজারের ইলিশ বিক্রেতা মনির হোসেন ৯০০ গ্রামের একটি মাছের দাম চাইলেন ১০০০ টাকা। গত বছর এই সময় এই সাইজের মাছ বিক্রি করেছেন ৭০০-৮০০ টাকায়। ক্ষোভের সাথে বললেন, সাইজ যার ভালো, তার ঠিকানা ভারত। আমাদের এই মাছে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এই বাজারে জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। আধা কেজি সাইজের মাছ ৬০০ টাকা কেজি।
অবতরণ কেন্দ্রের একাধিক আড়তদারের অভিমত, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকার বছরে কয়েকবার ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর সুফল সারা দেশ পেয়েছে। যে ইলিশ হারিয়ে যেতে বসেছিল, সেই ইলিশ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে। আমরা সরকারের বিধিনিষেধ মেনে ব্যবসা করতে চাই, জেলেরা মাছ ধরতে চায়। কিন্তু দেশের জেলেদের অহেতুক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। অন্য দেশের জেলেরা সারা বছর আমাদের পানিসীমায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এটা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।
এদিকে আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায় আগে পরে মিলিয়ে মোট ১৫ থেকে ১৭ দিন ইলিশের ডিম ছাড়ার আসল সময়। এই সময়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এরআগে গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল ইলিশের ছয়টি অভয়াশ্রম এলাকায় এবং ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই দেশের নদ নদী ও সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
এদিকে কোস্টগার্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধরার অপরাধে ১১ টি ফিশিং ট্রলার সহ ১২৮ জন জেলেকে আটক করে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে ভারতে ইলিশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। ২০১৯ সালে দুর্গাপূজার সময় ৫০০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয়। এরপর ২০২০ সালে এক হাজার ৪৭৫ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি মেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।