Inqilab Logo

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সন্ত্রাসবাদ ও ইসলাম

প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুফতি জহির ইবনে মুসলিম

॥ শেষ কিস্তি ॥
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর পৃথিবীতে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি হলো, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ান হবে বা তাদের একদিকে হাত অপর দিকের পা কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে এটা তাদের জন্যে ইহলোকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে আরো ভয়াবহ শাস্তি। সূরা- মায়েদা-৩২
এ আয়াত ইসলাম সন্ত্রাসকে কি পরিমাণ ঘৃণা করে তার পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। অন্যত্র বলা হয়েছে নিশ্চয় আল্লাহ সন্ত্রাস ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে ভালবাসেন না (সূরা কাছাছ, ৭৭)। আরো বলা হয়েছে, ফাসাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের পথ বর্জন করতে। (সূরা- শুয়ারা-১৫২)
অন্য জায়গায় সন্ত্রাসকে হত্যার চেয়েও মারাত্মক বলা হয়েছে। (সূরা বাকারা-১৯১) জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে, এ ধরনের কোন কর্ম, আচরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। হযরত জাবের (রা.) বলেন রাসূল (সা.) কারো হাতে খাপমুক্ত তরবারি বের করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
আরেক হাদীসে কারো প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইশারা না করে কারণ শয়তান তখন তার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেবে এবং সে জাহান্নামের গর্তে পতিত হবে, তা সে অনূভব করতে পারবেন, (বুখারী, মুসলিম)
অন্যত্র বলা হয়েছে কোন মুসলমানের জন্য জায়েজ নয় আরেকজন মুসলমানকে ভয় দেখানো (মেশকাত) উন্মুক্ত তরবারী বা অন্য কোন অস্ত্র দেখলে মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে ইসলাম এটাও বরদাশত করে না। সন্ত্রাসবাদ আর জঙ্গিবাদতো দূরের কথা ইসলাম মানব প্রাণকে এতটাই গুরুত্ব দেয়, যে একজনের প্রাণ হরণ গোটা মানবজাতির প্রাণ হরণের নামান্তর বলে ঘোষণা দিয়েছে, ইরশাদ করেছে, নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্য ছাড়া কেউ অন্য কাউকে হত্যা করলো সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করল। আর কেউ অন্য কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সকল মানুষেরই প্রাণ রক্ষা করল। (সূরা মায়িদা-৩২)
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান খুবই পরিষ্কার এখানে ভুল বুঝার কোন সুযোগ নেই এবং কোন ব্যাখ্যা বা ছুতা ধারে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়া বা বৈধ জ্ঞান করার কোন অবকাশ নেই। যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালায় তারা মুসলিম জাতিকে কলঙ্কিত করার লক্ষ্যে বিশেষ কোন গোষ্ঠির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তাই ইসলামের সাথে তাদের দূরতম সর্ম্পকও নেই তাদের ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
সন্ত্রাস দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ :
নৈতিক শিক্ষা : নৈতিক মূল্যবোধ হলো একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। আর এ নৈতিক মূল্য বোধ আদর্শ শিক্ষার মাধ্যম জাগ্রত হতে পারে। যে শিক্ষার লক্ষ্য বৈষয়িক জাগতিক সে শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিকতা জাগ্রত হওয়া সম্ভব নয়। রাসূল (সা.) প্রদর্শিত তাওহীদভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাই পারে মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং তার মাঝে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে। তাওহীদভিত্তিক শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রেই নৈতিক মূল্যবোধকে মূল হিসেবে গণ্য করা হয়। যা প্রচলিত বস্তুবাদী শিক্ষায় অনুপস্থিত। ফলে ইসলামের নৈতিক শিক্ষার এ মূল্যবোধ যদি প্রতিটি মানুষের মনে জাগ্রত করা হয় তাহলে সন্ত্রাসের মহামারি থেকে দেশ-জাতি মুক্তি পাবে।
আল্লাহ ভীতি : আল্লাহ ভীতি মানুষের হৃদয়ে সদা জাগ্রত থাকলে মানুষ অপরাধ প্রবণতার হাত থেকে বেঁচে থাকতে পারে। কেউ যদি এ বিশ^াস রাখে যে তার অপরাধ-সন্ত্রাসের জন্য একদিন তাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে এবং জবাবদিহি করতে হবে তাহলে সে অপরাধ করতে পারে না এবং কোন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হবে না।
ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা : অনেক ক্ষেত্রে বৈষম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার দরুণ জন্ম নেয় সন্ত্রাস, বৈষম্যের দরুণ মানুষের মাঝে পাশবিকতার জন্ম হয়। আর অপরাধ হচ্ছে তারই ফসল বা উপহার। রাসূল (সা.) প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়ে গেছেন যার সফল প্রয়োগ বিশ^কে সন্ত্রাসমুক্ত করতে পারে।
দয়া ও পারস্পরিক সহযোগিতা : দয়া ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক মনোভাব মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বৃদ্ধি করে ফলে সমাজে সন্ত্রাসের বীজ রোপিত হতে পারে না। রাসূল (সা.) সর্বদা উপদেশ প্রদান করেছেন দয়া ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য। তিনি বলেছেন, পৃথিবীবাসীর প্রতি যদি তুমি দয়া কর, আল্লাহ তায়ালাও তোমার প্রতি দয়া করবেন।
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা : কোন সমাজে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা থাকলে অন্যায়-আনাচর, পাপ, অপরাধ এমনিতেই দূরীভূত হয়ে যায়। শত্রু-মিত্র সকলের প্রতি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সাম্য ও ন্যায় নীতি কায়েম করে সমাজ থেকে সন্ত্রাসকে চিরতরে বিদায় করতে পারে।
কর্ম সংস্থান সৃষ্টি : বেকারত্ব অনেক সময় মানুষকে বিপদগামী করে। ফলে বেকারত্ব দূরীকরণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে। অপরাধীদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে অপরাধীরা সাজা ভোগের পর পুনরায় অপরাধে-সন্ত্রাসে জড়িয়ে না পড়ে।
ইসলামের প্রকৃত আদর্শ বিশ^ দরবারে উপস্থাপন : ইসলাম সুনীতি, কল্যাণ ও মানবতার ধর্ম, সর্বযুগে সর্বকালে সকল মানুষের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা, এ বিশ^াস হৃদয়ে বদ্ধমূল করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বিশ^ময় ছড়িয়ে দিতে হবে। ইসলাম যে জীবন ব্যবস্থা প্রদান করেছে মানুষকে, যে মর্যাদা দিয়েছে অন্য কোন মতবাদ তা দিতে পারেনি, ইসলাম কোন সন্ত্রাসী ধর্ম নয় কোন সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। যৌক্তিক উপায়ে এ সত্য বিশে^র দরবারে তুলে ধরতে হবে। ইসলাম নামের শুচি শুভ্র সৌধ আজ সন্ত্রাস নামের কালিমা লিপ্ত। ইসলাম আজ ষড়যন্ত্র ও তথ্য সন্ত্রাসের শিকার। এর হাত থেকে ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে বাঁচাতে হলে বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান অর্জন ও বুদ্ধিভিত্তিক কোমল উপায় অবলম্বন করতে হবে। সে সব ইসলামী লেবাসধারী কীট ইসলামের নামে বোমা হামলা বা অন্য কোন উপায়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে বিশ^ দরবারে তাদের মুখোশ উম্মোচন করে দিতে হবে। সর্বোপরি সচেতন হতে হবে প্রতিটি মুসলমানকে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন।
লেখক : শায়খুল হাদিস, গ্রন্থকার ও কলাম লেখক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাসবাদ ও ইসলাম

৯ অক্টোবর, ২০১৬
৪ অক্টোবর, ২০১৬
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ