চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুফতি জহির ইবনে মুসলিম
॥ এক ॥
বর্তমান বিশে^ সন্ত্রাস এক মহামারি আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি এমন কোন দেশ নেই যে দেশ ও দেশের জনগণ সন্ত্রাসের ভয়ে আতঙ্কিত নয়। সমগ্রবিশে^ প্রতিটি দেশে সন্ত্রাস ক্রমাগতভাবে বিস্তার লাভ করছে। সমাজ রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে সন্ত্রাসের কারণে আজ বিশ^ মানবতার শান্তি, নিরাপত্তা পদে পদে বিঘিœত হচ্ছে। পরস্পরে মতবিরোধ প্রতিহিংসার দরুণ যেমনিভাবে সামাজিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাস বিস্তৃত হচ্ছে তেমনিভাবে নানা মতবাদ ও আদর্শে বিশ^াসী একশ্রেণির মানুষ সাংগঠনিকভাবে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তেমনি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছে। ভ্রান্তবিশ^াস ও উগ্র মতবাদে বিশ^াসীরা ধর্মীয় স্থান, বিদেশী দূতাবাস, সরকারি স্থাপনা, রাজনৈতিক কার্যালয়, বিচারালয়, বিমান বন্দর, রেলস্টেশন, শপিংমল প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জনসমাগম লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কার্য পরিচালনা করে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে।
সা¤্রাজ্যবাদী দেশগুলোর অন্যতম ঘৃণ্য নীতি হলো বিশে^র বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে নানা দল, উপদল সৃষ্টি করে সে দেশের সরকারকে অস্থির করে তোলা। এ মিশন তারা যুগ যুগ ধরে অব্যাহত রেখেছে। পরাশক্তি আমেরিকা সউদী আরবকে অস্থির রাখার জন্য সউদী ধনকুবের ওসামা বিন লাদেনকে আবিষ্কার করে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলে। লাদেন পরিবারের সাথে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার বাবা সিনিয়র বুশের ছিল ঘনিষ্টতম সর্ম্পক এবং তাদের মাঝে ছিল শত শত মিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। এ লাদেনের মাধ্যমে আমেরিকা তৈরি করলো আলকায়দা নামক সংগঠন। এখন খোলশ পরবর্তন করে সৃষ্টি হল আইএস। বর্তমানে আলকায়দা আর আই এস-এর মাধ্যমে গোটা মুসলিম বিশ^কে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করার কঠিন চক্রান্ত চলছে।
এক সময়ের প্রতাপশালী অখ- রাশিয়া আফগানিস্তান দখল করার পর আমেরিকা বিন লাদেনকে প্রচুর সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত করে আফগানিস্তানে এনে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাল, রুশ বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর আমেরিকার স্বার্থ হাসিলে ব্যাঘাত ঘটলে এ বিন লাদেনকে উপলক্ষ্য করেই আমেরিকা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে আফগানিস্তান ও ইরাকের মত দু’টো ইসলামী ঐতিহ্যপূর্ণ দেশকে দখল করে হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করে রক্ত নদী বয়ে দিল। মুসলমানের তাজারক্তে সে ¯্রােতকে শানিত করার অপচেষ্টা আমেরিকা আজও অক্ষত রেখেছে। প্রতিনিয়ত খেলে চলেছে রক্তের হোলি খেলা। আমেরিকা রক্ত চায়, তাজা রক্ত, মুসলমানের রক্ত, নিরপরাধ ভাই-বোন আর কচি শিশুর রক্ত। লাখ কোটি বনী আদমের রক্ত পান করেও যেন তার পিপাসা মিটবার নয়। তাই সে এ বিন লাদেনকে উপলক্ষ্য করে পাকিস্তান, সিরিয়া, আফগানিস্থান, লিবিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের রক্ত পানের নেশায় মত্ত। এভাবে সা¤্রাজ্যবাদী ও পরাশক্তি নিজেদের স্বার্থে নানা সন্ত্রাসী সংগঠনকে অর্থ ও সামরিক সাহায্য দিয়ে বিশে^র বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটা অতিবাস্তব যে, বিশে^র যেখানেই সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটছে জঙ্গি তৎপরতা দেখা দিচ্ছে, সেখানেই ঘৃণ্য কর্মের সাথে মুসলমানদের যোগসূত্র আবিষ্কার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মুসলমানের নামের সাথে সন্ত্রাসের মূলোচ্ছেদকারী, অতি পবিত্র ইসলামের সাথে সর্বোত্র যুক্ত করে বলা হচ্ছে ইসলামী উগ্রবাদী, ইসলামী মৌলবাদীরা সবর্ত্র সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। এভাবে গোটা মুসলিম জাতি ও পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কালিমা লিপ্ত করে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু এ সন্ত্রাস কেন? কি এর লক্ষ্য- উদ্দেশ্য প্রকৃত সন্ত্রাসী করা। কারা এ সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। ক্ষেত্র বিশেষে সন্ত্রাসী তৎপরতায় মুসলিম নামধারী লোকদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সন্ত্রাসের দায় দায়িত্ব কেন ই-বা ইসলাম ও মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? মুসলমানরা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করলেও তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, কিšুÍ ইসরাঈল আর আমেরিকা ও তার দোসররা স্বাধীন ভূখ- দখল ও নিরপরাধ মানুষের রক্তে হোলি খেলায় মেতে উঠেন তবুও তারা সন্ত্রাসী হচ্ছে না কেন? এসব কেনর উত্তর আমাদের সকলের জানা দরকার। কিন্তু এ সকল প্রশ্নের ব¯ুÍনিষ্ঠ জবাব জানার জন্য প্রয়োজন নাতিদীর্ঘ আলোচনা যা এ ক্ষুদ্র পরিসরে সম্ভব নয়। সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় মানবতার ধর্ম ইসলাম ও শান্তিপ্রিয় জাতি মুসলমানকে কলঙ্কিত করার লক্ষ্যে ইসলামের দুশমন সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি ও ইহুদিচক্র সুদূর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে যাতে ইসলামের মতো সার্বজনীন মানবদরদি জীবন দর্শনের শে^ত শুভ্র গাত্রে কালিমা লেপন করা যায়। জাতি হিসেবে মুসলমানরা যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। তাই কিছু অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত নামধারী লেবাসধারী মুসলমানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করিয়ে তারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। আলকায়দা ও আইএস যে আমেরিকার সৃষ্টি এটা আজ দিবা লোকের মত সুস্পষ্ট।
সন্ত্রাসবাদ ইসলামী দৃষ্টিকোণ:
ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম পরস্পরে প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির মাধ্যমে ইসলাম চায় এ মর্তের ধরাকে স্বর্গের ছোঁয়ায় গড়ে তুলতে। সুখ-শান্তি ও চির কল্যাণের মধুময় সমীকরণ প্রবাহিত করে ইসলাম চায় মানুষের সর্বোপরি কল্যাণ ও মঙ্গল। তাই ইসলাম কল্যাণ ও হিত সাধনে উৎসাহ যোগায় ও নির্দেশ দেয়। আর গর্হিত, নিন্দনীয়, অকল্যাণকর কাজে নিরুৎসাহী করে এবং সব ধরনের অহিতকর কাজ থেকে ইসলাম বিরত থাকতে নির্দেশ করে। ইসলাম ও মুসলিম এ শব্দ দুটোর মূলেই নিহিত রয়েছে শান্তি, কল্যাণ, স্বস্তি, উন্নতি, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদমুক্ত সুন্দর জীবন-যাপনের অর্থ। “ছিল মুন” ধাতু থেকে ইসলাম এর অর্থ হলো শান্তি। সুতরাং ইসলাম শান্তির দিকে পথ নির্দেশ করে। মুসলিম শব্দের অর্থ শান্তিকামী-আত্মসর্মপনকারী আল্লাহ তা’য়ালা মানুষের নিরাপত্তা, উন্নতি, সমৃদ্ধি ও শংকামুক্ত যে জীবন বিধান দান করেছেন এর সমষ্টির নাম হলো ইসলাম। এ বিধানের কাছে যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করেছে এবং অন্যের কল্যাণকামী হয়েছে সে ই হলো মুসলমান অন্য কথায় সন্ত্রাসবাদের বিপরীতে যে শান্তি, উন্নতি ও নিরাপত্তা প্রদানের নিশ্চয়তামূলক বিধানের কাছে যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করেছে তার নাম হলো মুসলমান। এ বিধানের কাছে যে ব্যক্তি তার সত্তাকে সমর্পণ করেছে সে হলো মুসলমান এ কারণে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যার হাত ও মুখের কথা থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ থাকে সে হলো প্রকৃত মুসলমান। যে মহান প্রভু আল্লাহ্ তায়ালা মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তির নিশ্চয়তামূলক বিধান ইসলামে মানুষের জন্য একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন সে মহান আল্লাহর নিরানব্বইটি নামের মাঝে গুণবাচক একটি নাম ‘সালাম” অর্থাৎ শান্তিদাতা। তাঁর নবীকেও তিনি পাঠিয়েছেন পৃথিবীর কল্যাণ ও রহমতের জন্য, সে ইসলাম কীভাবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করতে পারে। সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়াতো দূরের কথা বরং এ সন্ত্রাসবাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টির ব্যাপারে ইসলাম কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, কুরআনে ইরশাদ হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।