পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জ্বালানি তেলে ভেজাল দেয়া কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। অনুমোদনহীন পাম্প ও দোকানে জ্বালানি তেলে ভেজাল দেয়ার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট বলে ধরে নেয়া হলেও অভিযোগ আছে, অনেক অনুমোদিত বা বৈধ পাম্পেও ভেজাল দেয়া হয়। সাধারণত বেশী দামী জ্বালানি তেলের সঙ্গে কম দামী জ্বালানি তেল কিংবা গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট মেশানো হয়। কিছু দিন আগে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, কনডেনসেট বাজারে ছাড়া হয়েছে এবং সেই কনডেনসেটে জ্বালানি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। কনডেনসেট বাজারে ছাড়ার ব্যাপারে তিনটি রিফাইনারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা খবরে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ওই তিনটি রিফাইনারী মোট সাড়ে সাত কোটি লিটার কনডেনসেট কেনে বিপিসি’র কাছ থেকে। এই কনডেনসেট পরিশোধন করে বিপিসি’র কাছে বিক্রী করার কথা থাকলেও তারা বিক্রী করে ২৯ লাখ লিটার। বাকীটা সম্ভবত পরিশোধন না করেই পাম্পগুলোর কাছে তারা বিক্রী করে দিয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও তার কতদূর কি হয়েছে জানা যায়নি। কনডেনসেট পরিশোধন বা রূপান্তর না করে বিক্রী করা একটি গুরুতর অপরাধ এবং পাম্পগুলোর ওই কনডেনসেট কিনে জ্বালানি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রী করাও একই পর্যায়ের অপরাধ। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগের যথাযথ বিহিত করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এটাও কম বিস্ময়কর ব্যাপার নয় যে, দেশের বৈধ পাম্পের পাশাপাশি অবৈধ পাম্পও আছে এবং এর সংখ্যা শতাধিক। কিভাবে কর্তৃপক্ষীয় অনুমোদন ছাড়া এসব পাম্প গড়ে উঠেছে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। সম্প্রতি প্রকাশিত অন্য এক খবরে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বহু সংখ্যক জ্বালানি তেলের দোকান গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ দোকানের জ্বালানি তেলের উৎস বিভিন্ন যানবাহন। যানবাহন থেকে তেল চুরি করে চালকরা দোকানগুলোতে বিক্রী করে। এই তেল প্রয়োজনে অন্যান্য যানবাহন ক্রয় করে। এই পর্যায়েও ভেজাল হওয়া স্বাভাবিক।
জ্বালানি তেলের বিশুদ্ধতা নিয়ে কোনো পর্যায়েই যে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই, এ থেকে তা স্পষ্ট। ভেজাল জ্বালানি তেল ব্যবহারে মারাত্মক ক্ষতি হয় যানবাহনের বিশেষ করে ইঞ্জিনের। এর আয়ুষ্কাল কমে যায়, সিস্টেমের ক্ষতি হয়। অন্যদিকে পরিবেশের ওপরও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। জ্বালানি তেল নিয়ে এধরনের তেলেসমাতি অন্যকোনো দেশে হয় কিনা আমাদের জানা নেই। সম্ভবত এমন নজিরও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না যে, পাম্প থেকে জ্বালানি তেল কম দেয়া হয়। আমাদের দেশে এটা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, এক শ্রেণীর অনুমোদিত-অননুমোদিত পাম্প জ্বালানি তেল বিক্রীর সময় পরিমাণে কম দিচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫৫ লিটার অকটেন ও ৩০ লিটার ডিজেল-পেট্রোল কম দেয়া হচ্ছে। এর মূল্য মাসিক হিসাবে ২৭ লাখ টাকা। এই টাকা যানবাহন মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে পাম্প মালিকরা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম স্বীকার করেছেন, অনেক পাম্প তেল কম দিচ্ছে। তিনি বলেছেন, সেগুলো বন্ধ করে দেয়ার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি। পাম্পগুলোর ওপর নজরদারির যে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে, জ্বালানি তেল পরিমাপে কম দেয়া তার আর একটি বড় প্রমাণ।
ভেজাল জ্বালানি তেল কিনে যানবাহন মালিকরা অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তাদের যানবাহনে নানাবিধ ক্ষতি হচ্ছে, ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে বা বসে যাচ্ছে। তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের যাবতীয় যানবাহন আমদানিকৃত। যে কোনো যানবাহনের ক্ষতি হলে বা তার আয়ুষ্কাল কমে গেলে দেশের জন্যও তা এক বড় ক্ষতি। আবার জ্বালানি তেল পরিমাপে কম দেয়ার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহন মালিকরা। প্রশ্ন হলো, এই ক্ষতি-খেসারত যানবাহন মালিকদের গুণতে হবে কেন? বিশুদ্ধ ও নিরাপদ জ্বালানি তেলের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা কি কঠিন কাজ? জ্বালানি তেল পরিমাণে কম দেয়া প্রতিরোধ করা কি অসম্ভব? অবশ্যই ভেজাল মুক্ত জ্বালানি তেলের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায় এবং পাম্পগুলোর ক্রেতা ঠকানোর অন্যায় ও অনৈতিক কাজও বন্ধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে শর্ত হলো, পাম্পগুলোর ওপর নিয়মিত নজরদারী বহাল রাখা অনুমোদনবিহীন পাম্প ও অবৈধ দোকান বন্ধ করা এবং যারাই ভেজাল ও পরিমানে তেল কম দেয়ার কাজে নিয়োজিত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে যথাযথ দৃষ্টি দেবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।