Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচারকের এ কেমন কাজ!

অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

একটি খবর ও ভিডিও সারদেশে চাউর হয়েছে। দুই শিশু পুত্রকে আগ্নেয়াস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিচারক পিতা। চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে কর্মরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে। সন্দেহ নেই, তর্কবিতর্ক আরো কিছুকাল চলবে। চলাটাই স্বাভাবিক।

৬ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, বনের ভেতর দুই শিশু পুত্রকে পিস্তল চালনা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন পিতা। নদীর ধার ঘেঁষে বনের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা দুই সন্তানকে নিজে অস্ত্র চালানা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এ সময় একজন সকল কর্মকান্ড ভিডিও করছিলেন। দেখা যায়, পিস্তল হাতে শিশুপুত্র। পেছনে দাঁড়িয়ে বিচারক পিতা। তিনি ছেলেকে শেখাচ্ছেন ট্রিগার চাপার কৌশল। ছেলেও একের পর এক ছুড়ছে গুলি। প্রচন্ড রকমের বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে চারপাশ। যদিও এ ভিডিওটি বিচারক নিজেই তার ফেসবুকে আপলোড দিয়েছিলেন ২০১৬ সালে। সে সময় তিনি নাকি সুন্দরবনে ছিলেন। তখন বাচ্চারা শখ করে এক/দুই দিন করেছে। তাঁর ভাষায়, কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে নয়, এই ধরেন গাছকে এইম করে গুলি করা এই আরকি। তিনি গণমাধ্যমকে আরও জানিয়েছেন, ডিউটিকালীন সময়ে ঘুমিয়ে গেলে তার সহকর্মীরা পিস্তল নিয়ে ডিউটি করত, এটা কোনো অপরাধ নয়। কয়রায় ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন সুন্দরবনের বনদস্যু ও ডাকাতদের হটাতে নাকি গুলি চালাতে হতো। যদিও ডাকাতদের হঠাতে গুলি চালিয়েছে তার দুটি মাসুম বাচ্চা। এখন নতুন করে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় বিষয়ে তিনি বলছেন, এ ঘটনায় পারিবারিক লোকজন জড়িত। পারিবারিক দ্ব›দ্ব থেকেই নিয়াজ মাহমুদ নামে একজন নাকি ওই বিচারককে বিপাকে ফেলতে ভিডিওটি নতুন করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, বন্ধুবান্ধবরা মিলে এমনি নাকি ফায়ার দিতেন। একটা গাছ টার্গেট করে ফায়ার দিতেন। তাঁর যেহেতু অস্ত্র আছে দুইটা, তাঁর ওয়াইফ ও তার ছেলেমেয়েরা একটু শিখত। শ্যুটিং একটা স্পোর্টস। এরা এখন থেকে শিখলে এটা ঠিক হবে, এটুকুই। তিনি জানিয়েছেন, এটা বাচ্চারা শখ করে করেছে। তবে এটা করা ঠিক হয়নি। সেজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশও করেছেন।

আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী, লাইসেন্সকৃত অস্ত্র আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করা যায়। অন্য কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না। কারণ, লাইসেন্সটা দেওয়া হয় শুধুমাত্র ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য। শখের বসে কিংবা বউ-সন্তানদের অস্ত্রের ব্যবহার শেখানো, সেগুলো ভিডিও করে সবাইকে জানান দেয়ার জন্য নয়। ব্রিটিশ শাসন আমলে প্রবর্তিত আইন অনুসারে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদানের উদ্দেশ্য আত্মরক্ষা, জানমালের নিরাপত্তা এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে ব্যবহার। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে অস্ত্র চালনায় দক্ষতা থেকে শুরু করে অস্ত্র রাখা বা সংরক্ষণের সামর্থ্য, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনার পাশাপাশি লাইসেন্সধারীর নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনায় আনা হয়। বস্তুত, ব্যক্তি বা জনগণের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সেই দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনগণের বা ব্যক্তির নিরাপত্তা বিধানকল্পে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়।

এবার আসি সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে। হজরত নুহ (আ.) বলেছিলেন, ‘হে আমার রব! পৃথিবীতে অকৃতজ্ঞদের একটি গৃহও রেখো না। যদি তুমি তাদের ছেড়ে দাও, তবে তারা তোমার বান্দাদের বিপথগামী করবে এবং তারা অপরাধী ও পাপী সন্তানই জন্ম দেবে।’ (সুরা-৭১ নুহ, আয়াত: ২৬-২৭)। তাই আমাদের মানবসভ্যতার রক্ষার জন্য শিশুদের শৈশবকে পঙ্কিলতা ও আবিলতামুক্ত রাখতে হবে। সভ্যতার উন্নয়নের জন্য আমাদের শিশুদের উন্নত চিন্তা ও পবিত্র জীবনের দীক্ষা দিতে হবে।

কোনো শিশু যদি অভিভাবকের কারণে পথচ্যুত হয়ে যায়, তাহলে সে হাশরের দিনে আল্লাহর কাছে সেই অভিভাবকের বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করবে, ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের অভিভাবক ও বড়দের অনুসরণ করেছি, তারা আমাদের বিপথগামী করেছে। হে আমাদের প্রভু! আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহা অভিসম্পাত করুন।’ (সুরা-৩৩ আহজাব, আয়াত: ৬৭-৬৮)। তারা আরও বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! যে সকল জিন ও ইনসান আমাদের বিপথগামী করেছে, তাদেরকে আমাদের সামনে আনয়ন করে প্রকাশ করুন। আমরা তাদিগকে আমাদের পদতলে পিষ্ট করব, যাতে তারা হীন লাঞ্ছিত অপমানিত হয়।’ (সুরা ৪১ হা-মিম আস সাজদাহ, আয়াত: ২৯)।

তাই আসুন, শিশুকে অস্ত্র শিক্ষা নয়, শিশুর নৈতিক শিক্ষার সব ব্যবস্থা করি, যাতে তারা দুনিয়া ও আখিরাত মঙ্গলময় হয়। শিশুকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ ও অকল্যাণ বোঝাতে হবে, যাতে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, ফ্রি-ল্যান্স কলামিস্ট ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।



 

Show all comments
  • Dadhack ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২৮ পিএম says : 0
    বিচারক হানডেট পারসেন ঠিক কাজ করেছে উনি যদি আল্লাহকে বিশ্বাস করে বাচ্চাদেরকে সামরিক শিক্ষা দেয় তাহলে উনি অনেক সওয়াব পাবেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিচারক

১৭ এপ্রিল, ২০২২
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন