পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অদৃশ্য করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলা করে যে দুটি ভিত্তির ওপর দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, তার একটি প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও অন্যটি বেসরকারি খাতের ঋণ-প্রবৃদ্ধি। করোনা মহামারির মধ্যে গত দেড় বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালোই ছিল। সঙ্কটের সময়েও প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন ঘটেছে। পরপর দুই মাস কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থ বছরের পুরোটা সময়জুড়েই আগের বছরের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। কিন্তু চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে হঠাৎ করে রেমিট্যান্স কমে গেছে। এই ধারাবাহিকতা আগস্টেও দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাই ও আগস্টÑ এই দুই মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩৬৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৪৫৬ কোটি ২১ লাখ ডলার। তুলনা করলে চলতি অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। তথ্যমতে, বর্তমান অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম এবং আগের বছরের (২০২০ সালের জুলাই) একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম। গত বছর জুলাইয়ে এসেছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, সদ্যবিদায়ী আগস্টে এসেছে ১৮১ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ডলার কম। ২০২০ সালের আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি মার্কিন ডলার। এদিকে হঠাৎ প্রবাসী আয় কমে যাওয়াকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক সংলাপে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেছিলেন, রেমিট্যান্সের যে জাদু সেটি সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। কারণ মানুষ বিদেশে গেছে কম, এসেছে বেশি। সরকারি প্রণোদনার কারণে হুন্ডি ছেড়ে মানুষ ব্যাংকিং খাতে টাকা পাঠিয়েছিল। এ অবস্থায় জাদু শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনাÑ সেটিই বোঝার বিষয়।
এদিকে সর্বশেষ প্রকাশিত মনিটারি পলিসি রিভিউ প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন আশাবাদ তুলে ধরলেও বেসরকারি খাতে ঋণ-প্রবৃদ্ধিতে মন্দা কাটছে না। পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগেও দ্বিতীয় ঢেউ বড় আঘাত হেনেছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি দুই খাতেই যে হারে ঋণ বিতরণ হয়েছে, তা আগের বছরের চেয়ে কম। বেসরকারি খাতে আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। আর সরকারি খাতে কমেছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। গত মে মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। জুন মাসে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত বৃহস্পতিবার দেয়া হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে, জুলাইয়ে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি আরও একটু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এদিকে জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অতি সামান্য বাড়লেও গত জুনের তুলনায় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুন শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। গত জুলাই শেষে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ লাখ ৮৭ হাজার ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা কম বিতরণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগের অর্থ বছরের জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৯৫ হাজার ২০১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক হচ্ছে বেসরকারি ঋণ। সেই ঋণ যদি না বাড়ে, তাহলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না। আর দেশি বিনিয়োগ না হলে, বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। আর বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। তবে মহামারির এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কেবল প্রণোদনার ঋণ নিয়েছেন। তিনি বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি হলে তবেই ঋণ বিতরণ বাড়বে। তার মতে, ঋণ বিতরণের চেয়ে বড় উদ্বেগের হচ্ছে, যে বিশাল অঙ্কের প্রণোদনার ঋণ ব্যাংকগুলো দিয়েছে, তা যদি ঠিকমতো আদায় না হয়, তাহলে গোটা ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
এদিকে ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউন খুলে দেয়ার পর ব্যবসায়ীদের অনেকেই ব্যাংকে যাওয়া শুরু করেছেন ঋণ নেয়ার জন্য। গত আগস্ট ও চলতি সেপ্টেম্বরে এই হার আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। তার আগের মাস মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে সরকার ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, তার ওপর ভর করে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিতে গতি এসেছিল। কিন্তু অক্টোবর থেকে তা আবার কমতে শুরু করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মহামারির ধাক্কায় গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরও কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়।
২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
অথচ বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে কর্মসংস্থান। দেশে প্রতি বছর কাজের সন্ধানে আসে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। করোনার কারণে প্রায় ৭৭ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। চাকরি হারিয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ মানুষ। বিদেশে থেকে ফিরে আসা মানুষের এখনো প্রায় ৪৪ শতাংশ বিদেশে ফেরত যেতে পারেনি। করোনাসৃষ্ট এ বোঝা একদিকে যেমন চাহিদাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে; উৎপাদন কমেছে। বিনিয়োগে স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, করোনার মধ্যে ঋণ নিয়ে যেসব কোম্পানি ফিরিয়ে দিতে পারবে না বা করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, এমন ঋণ বিতরণ করেনি। বরং আমানতে সুদের হার কমিয়ে দিয়ে খরচ কমিয়েছে বা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে বাড়তি তারল্য কাজে লাগিয়েছে। এমন একাধিক কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে।
এদিকে সরকারি খাতে ঋণে প্রাক্কলিত ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০২১ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সরকারি খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৯২ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এক বছর আগে ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৭৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা।
করোনার ঝাপটায় সরকারি খাতে বিনিয়োগ বিপর্যস্ত হয়েছে। ২০২০ সালের মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনায় লক্ষ্যের অর্ধেকই খেয়েছে। এ সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ।
গত বছরের একই সময়ে ৪৬ শতাংশ অতিক্রম করেছে। মূলত সরকারের রাজস্ব কমে যাওয়া ও সামাজিক নিরাপত্তার দিকে বেশি দৃষ্টি দিতে হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় কার্যক্রম চালু রাখতে অর্থ খরচ করতে হয়েছে। সরকারি অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। চলমান বড় প্রকল্পগুলোয় নাম মাত্র অর্থছাড় করে প্রকল্পগুলো চালু রাখা হয়েছে অন্যগুলো বন্ধ প্রায় অবস্থা। এতে সরকারি খাতে বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি অর্জনে লক্ষ্যের ধারে কাছে যেতে পারেনি। এজন্য ঋণও কমেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।