পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অবশেষে আগামী মাস থেকে বিশেষ মেগা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েকবার এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরুর কথা বলা হলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারি এবং এপ্রিলে নির্মাণ কাজ শুরুর ঘোষণা দেয়ার পরও মূলত চীনা এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়ন জটিলতা ও অনিশ্চয়তার কারণে তা হয়নি। ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্পের ৬৫ ভাগের সমান ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তথা ১০,২২৬ কোটি টাকার ছাড় নিশ্চিত করেছে চীনা এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে বহু প্রত্যাশিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল প্রতিবন্ধকতা সমাধানের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। চলতি মাসের মধ্যেই অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও চীনা এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খানের বরাত দিয়ে গতকাল একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়। প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ শেষ হলে এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাথে ঢাকা ইপিজেড থেকে আশুলিয়া, আব্দুল্লাহপুর, বাইপাইল এবং নবীনগর-চন্দ্রা হাইওয়েকে সংযুক্ত করবে। অন্যদিকে ইতোমধ্যে নির্মাণে অনেকটা অগ্রগতি প্রাপ্ত হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিআরটিএ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এসব প্রকল্প ঢাকার সাথে দেশের বেশিরভাগ জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটাবে।
হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ একেকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প একদিকে যেমন জনগণের স্বপ্নের বাস্তবায়ন, অন্যদিকে নানাবিধ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক সময় ক্ষেপণে প্রতিটি প্রকল্প কোটি কোটি মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলে। পাঁচ বছর মেয়াদি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দেয়ার পর ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও ভূমি অধিগ্রহণের কিছু কাজ ছাড়া নির্মাণের অগ্রগতি প্রায় শূন্যের কোঠায়। ঢাকার যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গত দুই দশকে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মিত হলেও ঢাকার সাথে আন্তঃজেলা মহাসড়কগুলোর সংযোগস্থলগুলোতে যানজট আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার বাস্তবতায় ঢাকা-আশুলিয়া এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শহরের তীব্র যানজট এড়িয়ে আন্তঃজেলা যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন গতি সঞ্চার করবে বলে আশা করা যায়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরকালে ২০১৬ সালে জিটুজি ভিত্তিতে ২৭টি প্রকল্পে বিনিয়োগে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৭ সালে একনেক সভায় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন লাভের পর ৫ বছর মেয়াদে ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। চার বছরের বেশি সময়ে যেখানে প্রকল্পের মূল কাজ শুরুই করা যায়নি, সেখানে প্রকল্পটি শেষ করতে আরো কত বছর সময় লাগবে তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার প্রকল্প থেকে শুরু করে, বিআরটিএ, পদ্মাসেতু ও রেলসংযোগসহ কোনো মেগা প্রকল্পই সময় মতো শেষ করা যায়নি। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্বিগুণ বা তার বেশি সময় ক্ষেপণ করা হয়েছে। শহরের প্রবেশপথ ও ব্যস্ততম সড়ক-মহাসড়কগুলোর উন্নয়নে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা প্রকল্প লাখো মানুষের নৈমিত্তিক বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জনগণের স্বাচ্ছন্দ চলাচল ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একেকটি মেগা অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক ধীরগতি যানজট ও জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে এর খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি জনদুর্ভোগও বেড়ে চলে। মহাসড়ক ও আন্তঃজেলা যোগাযোগের মাধ্যমগুলো দীর্ঘদিন বিঘ্নিত হলে তা শিল্প-বাণিজ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন কাজ শুরুর আগেই এর নির্মাণ সময় যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। এরচেয়েও অনেক বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প আরো কম সময়ে বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা চীনা প্রকৌশলী ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে। অথচ, নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিআরটিএ প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে এসব গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরবাসী। এখন ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নে ধীরগতি যেন জনদুর্ভোগের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় এবং সহযোগিতাও নিশ্চিত করা জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।